বিশ্বের ধনী শাসকদের মধ্যে তাঁদের অসাধারণ সমৃদ্ধির জন্য আলাদা ভাবে নজর কাড়েন সৌদি আরবের রাজারা। সৌদির তেমনই এক শাসক ছিলেন ফাহদ। ১৯৮২ থেকে ২০০৫ সালে তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সৌদি আরবের শাসক এবং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
সৌদির রাজপরিবারের সদস্যেরা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য প্রাসাদের মালিক। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি যত্নের অভাবে ভগ্নপ্রায়। ভগ্নপ্রায় স্পেনের মারবেলায় থাকা ফাহদের শখের মার্বেল প্রাসাদটিও।
বিপুল সম্পত্তির মালিক ছিলেন ফাহদ। ২০০২ সালের হিসাব অনুযায়ী, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৫০০ কোটি ডলার। সেই সময়ে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হিসাবেও পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁর যে বহুমূল্য সম্পত্তিগুলি ছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল স্পেনের মারবেলায় থাকা ওই প্রাসাদ।
বহু কোটি খরচে বিশ্রাম আবাস হিসাবে ওই প্রাসাদ তৈরি করিয়েছিসেন ফাহদ। ১৯৮০-র দশকে নাহদা কমপ্লেক্সের ভিতরে তৈরি ওই প্রাসাদে প্রায়ই সময় কাটাতেন ফাহদ।
মজার বিষয় হল ফাহদের ওই মার্বেল দুর্গ দেখতে হুবহু আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউসের মতো।
এক সময় দামি মার্বেল দিয়ে তৈরি সেই প্রাসাদে হাসপাতাল থেকে হেলিপ্যাড— সব রকম সুযোগ-সুবিধা ছিল। এমনকি ওই প্রাসাদের মধ্যে মসজিদও তৈরি করিয়েছিলেন ফাহদ।
মার্বেল দিয়ে তৈরি প্রাসাদটি তৈরি হয়েছিল ২০০ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে। এক এক সময় সেই প্রাসাদ ফাহদের ১৩ জন স্ত্রী এবং অতিথিদের আওয়াজে গমগম করত।
তবে ২০০৫ সালে ফাহদের মৃত্যুর পর, গত দু’দশকে মার্বেল প্রাসাদের চেহারা পাল্টেছে। ৩,২১৮ কোটি টাকার সম্পত্তি লুটপাট এবং অবহেলার কারণে ভগ্নপ্রায়।
সম্প্রতি ১৯৮২ সালে তৈরি সেই প্রাসাদের অন্দরে গিয়েছিলেন ইউটিউবার জ্যাক পার। এক সময় ঝালরের আলোয় আলোকিত থাকা এবং সুসজ্জিত সেই প্রাসাদকে ‘ভূতুড়ে’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন তিনি।
জ্যাকের তোলা ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ফাহদের ওই প্রাসাদ অযত্নের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রাসাদের দেওয়াল বর্তমানে গ্রাফিতিতে ঢাকা। তবে দরজার সোনালি হাতল এবং মার্বেলের সিঁড়ি এখনও অতীতের ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলেছে।
রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে প্রাসাদের বাগানগুলিও এখন আগাছায় পরিপূর্ণ। সুইমিং পুলের জল শুকিয়েছে। জায়গায় জায়গায় ভেঙে পড়েছে। মেঝেয় ধুলোর পুরু আস্তরণ। বিভিন্ন ঘরে নোংরার স্তূপ।
তবে স্থানীয়েরা কল্পনাও করতে পারেননি যে এই প্রাসাদের অবস্থা একদিন এমন হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ফাহদের কারণে মারবেলা শহরের অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি এসেছিল।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বার নাকি মারবেলা সফরে এসে প্রাসাদের কর্মীদের ২,৩৪,০০০ ইউরো বখশিস দিয়েছিলেন ফাহদ। তাঁর সম্মানে শহরে একটি রাস্তা রয়েছে। একটি বাগানও তাঁর নামে উৎসর্গ করা।