চলতি বছরের নিট (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট) পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হয়েছে ১৩ জুন। সর্বভারতীয় স্তরে ডাক্তারির এই প্রবেশিকা পরীক্ষা দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা।
দ্বাদশ শ্রেণির পর থেকে নিট পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান পরীক্ষার্থীরা। কোনও পরীক্ষার্থী এক বারেই নিট পরীক্ষা দিয়ে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পান, তো কারও কেল্লাফতে করতে একাধিক বার পরীক্ষায় বসতে হয়। আবার কোনও কোনও পরীক্ষার্থী একাধিক বার পরীক্ষা দিয়েও সফল হন না।
রাজস্থানের নিট পরীক্ষার্থী রামলাল নিট উত্তীর্ণ হয়েছেন পাঁচ বারের প্রচেষ্টায়। আর তাতেই তিনি দেশবাসীর চোখে ‘অনন্য’ হয়ে উঠেছেন।
রামলাল শুধু নিট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে ‘অনন্য’ নন। নেপথ্যে রয়েছে অন্য গল্প।
রাজস্থানের চিতোরগড় জেলার ঘোসুন্দার বাসিন্দা রামলাল। ছোটবেলাতেই রামলালের বিয়ে ঠিক করে ফেলে তার পরিবার।
মাত্র ১১ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় রামলালের। সে সময় সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করত।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি বিপুল আগ্রহ ছিল রামলালের। তাই বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন।
রামলালের বাবা প্রথমে ছেলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তবে পরে ছেলেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করবেন বলে ঠিক করেন।
রামলালের চেষ্টায় পড়াশোনা থেমে থাকেনি তাঁর স্ত্রীরও। রামলালের স্ত্রী দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।
রামলালের স্ত্রী প্রথমে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করতে ভয় পেয়েছিলেন। তবে তাঁরও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন স্বামী রামলাল।
রামলাল তাঁর গ্রামের একটি সরকারি স্কুল থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করেন। ৭৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।
এর পর একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হন রামলাল। দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার পর তাঁর মনে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা জাগে। নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি।
প্রথম বারের প্রচেষ্টাতে নিট পরীক্ষায় সফল হতে পারেননি রামলাল। তবে বিফল হয়েও ভেঙে পড়েননি। বার বার চেষ্টা করে গিয়েছেন।
২০১৯ সালে প্রথম বার নিট পরীক্ষায় বসেন রামলাল। সে বছর তিনি সেই পরীক্ষায় ৩৫০ নম্বর পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় বার নম্বর আরও কমে যায়। এর পর তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রচেষ্টায় যথাক্রমে ৩৬২ এবং ৪৯০ নম্বর পান।
এর মধ্যেই রামলালের স্ত্রী পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। বাবা হওয়ার পর দায়িত্ব বাড়ে রামলালের। তবে পড়াশোনায় গাফিলতি করেননি তিনি। সন্তানকে কোলে নিয়েই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন তিনি।
অবশেষে চলতি বছরের নিট প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন রামলাল। স্ত্রীকে পাশে রেখে এবং সন্তান কোলে নিয়ে চিকিৎসক হওয়ার জন্য প্রস্তুত তিনি।