স্বঘোষিত ধর্মগুরু ‘রাধে মা’কে মনে আছে? কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তাঁকে ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল সারা দেশ। কখনও বলিউড অভিনেত্রীকে যৌন হেনস্থা, তো কখনও আশ্রমের আড়ালে মধুচক্র চালানো— একাধিক অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সেই রাধে মার ছেলেকেই এ বার দেখা যাচ্ছে ওটিটির পর্দায়।
রাধে মার দুই পুত্র। হরজিন্দর সিংহ এবং ভূপেন্দ্র সিংহ। রাধে মার জেষ্ঠপুত্র হরজিন্দরকেই অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে ওটিটি সিরিজ়ে।
সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ইনস্পেক্টর অবিনাশ’ সিরিজ়ের মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করলেন হরজিন্দর।
এই সিরিজ়ে নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেতা রণদীপ হুদা। তাঁর সঙ্গে সারা সিরিজ় জুড়ে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছে হরজিন্দরকেও।
ইনস্পেক্টর অবিনাশ’ সিরিজ় ইতিমধ্যেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে। সেই সিরিজ়ে এক জন পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন হরজিন্দর।
‘ইনস্পেক্টর অবিনাশ’ একটি রোমাঞ্চে ভরা অ্যাকশন ওয়েব সিরিজ়। যেখানে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রণদীপ। পুলিশ আধিকারিক অবিনাশ মিশ্রের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সিরিজ়টি পরিচালনা করেছেন নীরজ পাঠক।
এই সিরিজ়ে রণদীপ এবং হরজিন্দর ছাড়াও উর্বশী রওতেলা, অমিত সিয়াল, অভিমন্যু সিংহ, শালিন ভানোত, ফ্রেডি দারুওয়ালা, রাহুল মিত্র এবং অধ্যয়ন সুমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
১৮ মে অম্বানী গোষ্ঠীর মালিকানাধীন একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘ইনস্পেক্টর অবিনাশ’।
অনেকেই জানেন না যে হরজিন্দর একজন অভিনেতা। এর আগেও অনেক ছবিতে ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
অভিনয় জগতে প্রবেশ করে হরজিন্দর দীর্ঘ দিন তাঁর পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি ইচ্ছা করে আমার পরিচয় গোপন রাখিনি। বলিউডে ভাল কাজ করলে পরিচয় নিয়ে কারও মাথাব্যথা থাকে না। কেউ জানতে চান না যে আপনি কোথা থেকে এসেছেন।’’
হরজিন্দর আরও বলেন, ‘‘অভিনয় করতে গিয়ে আমার হাত পায়ে সামান্য আঘাত লেগেছে। কিন্তু আমি সে সব ভুলে গিয়েছি। আমি যেটুকু করতে পেরেছি, তা মানুষের ভালবাসা এবং কৃপায়।’’
তিনি আরও যোগ করেছেন, “রাধে মা আমাকে জন্ম দিয়েছেন। এটা আমার জন্য অনেক গর্বের। আমি যদি আমার মায়ের নাম নিয়ে বলিউডে পা রাখতাম, তা হলে লোকে ভাবত যে আমার মায়ের নাম ব্যবহার করে এবং বিনা পরিশ্রমে এই জায়গায় পৌঁছেছি। এখন অন্তত মানুষ বলবে আমি পরিশ্রম করেছি। আমি ২০১৩ সাল থেকে অভিনয় জগতে পা রেখেছি। কিন্তু কেউ বলতে পারবেন না যে, আমি এক দিনের জন্যও মায়ের নাম ব্যবহার করেছি।’’
প্রসঙ্গত, হরজিন্দরের জন্মদাত্রী ‘রাধে মা’ নিজেকে দুর্গার রূপ বলে দাবি করেন। তাঁর ভক্ত সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাঁকে ঘিরে বিতর্কও প্রচুর।
কখনও বলিউড অভিনেত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। আবার কখনও বা বিদেশের মাটিতে স্বল্প পোশাকে নাচার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে তাঁর। এখানেই শেষ নয়, আশ্রমের আড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে মধুচক্র চালানোর অভিযোগও উঠেছিল কয়েক বছর আগে।
রাধে মার প্রকৃত নাম সুখবিন্দর কউর। পঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলায় এক গ্রামে তাঁর জন্ম। চতুর্থ শ্রেণি অবধি পড়াশোনা। মাত্র ১৭ বছর বয়েসে বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। তাঁর ঠিক তিন বছরের মধ্যেই হরজিন্দর এবং ভূপেন্দ্রর মা হন তিনি।
এর পর ২৩ বছর বয়সে ধর্মগুরু রামদীন দাসের সংস্পর্শে আসেন সুখবিন্দর। রামদীনের আশ্রম পরমহংস ডেরাই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হয়ে ওঠে। সেখানেই সুখবিন্দর হয়ে ওঠেন ‘রাধে মা’।
মুম্বইয়ের নামজাদা সেলিব্রিটিরাও রাধে মার শিষ্য। এঁদের মধ্যে রয়েছেন, পরিচালক সুভাষ ঘাই, অভিনেতা রবি কিষণ-সহ আরও অনেকে।
২০২০ সালে বিতর্কিত রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস’-এও অংশ নিতে দেখা দিয়েছিল রাধে মাকে।