সত্তরের দশক। ঠান্ডা লড়াইয়ের আবহ। সোভিয়েত এবং আমেরিকা, কে কার থেকে এগিয়ে থাকবে, তা নিয়েই চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে একটি বিশেষ বৈজ্ঞানিক প্রকল্পের সূচনা করে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)’।
সিআইএ-র শুরু করা এই বিশেষ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘প্রজেক্ট স্টারগেট’। যা পরবর্তী কালে আমেরিকার গোয়েন্দাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত এবং রহস্যময় প্রকল্পে পরিণত হয়।
‘প্রজেক্ট স্টারগেট’ আমেরিকার একটি শীর্ষ গোয়েন্দা প্রকল্প ছিল, যার প্রধান ভিত্তি ছিল গুপ্তচরবৃত্তি এবং সামরিক উদ্দেশ্যে মানসিক ক্ষমতার ব্যবহার করা।
এই প্রকল্প দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে। যার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমেরিকা। কিন্তু কোনও ফল না মেলায় সিআইএ-র বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। অবশেষে সেই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু কী ছিল সেই প্রকল্পে, যা ‘স্টারগেট’-কে আমেরিকার গোয়েন্দা ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত এবং রহস্যময় প্রকল্পে পরিণত করেছিল!
‘প্রজেক্ট স্টারগেট’ প্রকল্পে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়েছিল যাঁরা দাবি করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে টেলিপ্যাথি, ভবিষ্যৎদর্শন এবং সাইকোকাইনেসিসের মতো অতিমানবীয় ক্ষমতা রয়েছে।
শোনা যায়, ‘স্টারগেট’ প্রকল্পের আওতায় ওই সমস্ত মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং ভবিষ্যদ্বাণী ব্যবহার করে বিদেশি শক্তিগুলিকে প্রভাবিত করার দায়িত্ব সিআইএ-কে দেওয়া হয়েছিল।
সিআইএ-র বিশ্বাস ছিল, বিশেষ মানসিক ক্ষমতাযুক্ত ‘অতিমানব’দের ব্যবহার করে ঠান্ডা লড়াইয়ে ইতি টানা সম্ভব। এ ভাবে সহজেই জয় আসবে আমেরিকার হাতে।
সেই ‘অতিমানব’দের মানসিক ক্ষমতার ব্যবহার নিয়ে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকলেও ‘প্রজেক্ট স্টারগেট’ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে।
এই প্রকল্প গোপনীয়তায় ঢাকা ছিল। সিআইএ-ও এর অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রকাশ্যে কখনও কোনও বিবৃতি দেয়নি।
তবে এই প্রকল্পে অংশ নেওয়া কয়েক জনের সাক্ষাৎকার এবং ফাঁস হওয়া নথিতে ‘সত্য’ প্রকাশ্যে আসে। জন্ম নেয় বিতর্ক।
কিছু অংশগ্রহণকারী দাবি করেছিলেন, প্রকল্পটি একটি ছলনা ছিল। গবেষণা পরিচালনার তুলনায় ‘অন্য দিকে’ বেশি নজর দিয়েছিল সিআইএ।
‘স্টারগেটে’ যোগ দেওয়া কয়েক জন প্রাক্তন অংশগ্রহণকারী জানিয়েছিলেন, তাঁদের মানসিক ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কড়া প্রশিক্ষণ এবং পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল।
ইঙ্গো সোয়ান নামে এক অংশগ্রহণকারী পুরো প্রক্রিয়াটিকে, ‘শারীরিক, মানসিক ক্ষমতা নিংড়ে নেওয়ার যন্ত্র’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।
অন্য এক অংশগ্রহণকারী প্যাট প্রাইস এই প্রকল্পকে ‘নিষ্ঠুর’ বলে ব্যাখ্যা করেন। প্রাইস আরও জানান, ক্ষমতা বাড়ছে কি না তা যাচাই করতে সিআইএ অংশগ্রহণকারীদের উপর পলিগ্রাফ পরীক্ষা করত।
অংশগ্রহণকারীদের অকথ্য মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন ‘স্টারগেটে’ অংশ নেওয়া অনেকে।
অনেক অংশগ্রহণকারী আবার এই প্রকল্পের সমর্থনে এসে কথা বলেন। নব্বইয়ের দশকে, ‘প্রজেক্ট স্টারগেট’ জনসমক্ষে আনা হয় এবং তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জল্পনা উঠেছিল, অনেক অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীদের মানসিক ক্ষমতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। অনেকে সিআইএ-র উপর প্রকল্পের নামে টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ আনেন।
এই গুজবও ছড়িয়েছিল যে, মানসিক ক্ষমতা বাড়াতে অলৌকিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছে সিআইএ।
‘প্রজেক্ট স্টারগেট’ ঘিরে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও, এটি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে কৌতূহলী এবং রহস্যময় প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি।