বড় পর্দায় অনিল কপূর এবং শ্রীদেবী। নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে কিশোর কুমার এবং আলিশা চিনয়। ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবিতে ‘কাটে নহি কাটতে ইয়ে দিন ইয়ে রাত’ গানটি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। একই সঙ্গে সঙ্গীতশিল্পী হিসাবেও কেরিয়ারে নয়া মাইলফলক গড়ে তুলেছিলেন আলিশা। দিব্যা ভারতী, শ্রীদেবী, জুহি চাওলা, মাধুরী দীক্ষিতের মতো বলি অভিনেত্রীদের কণ্ঠে গান গেয়েছেন আলিশা। এখন কী করছেন নব্বইয়ের দশকের প্রথম সারির সঙ্গীতশিল্পী?
১৯৬৫ সালের ১৮ মার্চ গুজরাতের আমদাবাদে জন্ম আলিশার। জন্মের সময় তাঁর নাম সুজাতা রাখা হলেও পরে নাম পরিবর্তন করে আলিশা রাখেন গায়িকা। উস্তাদ গুলাম আলির কণ্ঠে গজল শুনে সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ জন্মায় আলিশার।
পড়াশোনার পাশাপাশি সঙ্গীতচর্চাও করতে শুরু করেন আলিশা। ২০ বছর বয়স থেকেই সঙ্গীতকে পেশা হিসাবে বেছে নেন তিনি। ১৯৮৫ সালে ‘জাদু’ নামে একটি মিউজ়িক অ্যালবাম মুক্তি পায় আলিশার।
তার পর ‘বেবিডল’, ‘ম্যাডোনা’, ‘কামসূত্র’, ‘আহ...আলিশা!’র মতো একাধিক মিউজ়িক অ্যালবামে গান গাইতে দেখা যায় আলিশাকে। নব্বইয়ের দশকের মধ্যে ভারতের সঙ্গীতজগতে ‘কুইন অফ ইন্ডিপপ’ নামে পরিচিত হতে থাকেন তিনি।
শুধু নিজের গানের অ্যালবামই নয়, হিন্দি ছবিতেও গান করতে শুরু করেন আলিশা। আশির দশকে বাপ্পি লাহিড়ির হাত ধরে ফিল্মপাড়ায় পা রাখেন আলিশা।
‘অ্যাডভেঞ্চার্স অফ টারজ়়ান’, ‘ডান্স ডান্স’, ‘কম্যান্ডো’, ‘লভ লভ লভ’, ‘গুরু’র মতো হিন্দি ছবিতে বাপ্পির সঙ্গে গান গেয়েছেন আলিশা। বলিপাড়ার দিব্যা ভারতী, মন্দাকিনি, স্মিতা পাটিল, শ্রীদেবী, জুহি চাওলা, মাধুরী দীক্ষিতের মতো বহু খ্যাতনামী অভিনেত্রীর কণ্ঠে গান গাইতে শোনা গিয়েছে তাঁকে।
১৯৮৫ সালে রেমো ফার্নান্ডেজ়ের সঙ্গে দক্ষিণী ভাষার একটি মিউজ়িক অ্যালবামেও গান করেন আলিশা। দু’বছর পর ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জলওয়া’ ছবিতেও গান করেন তিনি।
কিন্তু আলিশা জনপ্রিয়তা পান কিশোর কুমারের সঙ্গে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবির ‘কাটে নহি কাটতে ইয়ে দিন ইয়ে রাত’ গানটি গেয়ে। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি আলিশাকে। অনু মালিক, আনন্দ-মিলিন্দ, রাজেশ রোশন এবং নাদিম-শ্রবণের মতো সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে নব্বইয়ের দশকে কাজ করেছেন তিনি।
লেসলি লুইসের সঙ্গে ‘বম্বে গার্ল’ এবং ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অ্যালবামের সাফল্যের পর আলিশা কেরিয়ারের শীর্ষে পৌঁছন। কিন্তু একই সময় বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েন তিনি।
সঙ্গীত পরিচালক অনু মালিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেন আলিশা। তার সঙ্গে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ২৬ লক্ষ টাকাও দাবি করেন গায়িকা।
আলিশার অভিযোগের পাল্টা অভিযোগ জানান অনুও। আলিশার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ এনে দু’কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন অনু। বেশ কয়েক বছর মামলা চলার পর দু’পক্ষের মধ্যে মিটমাট হয়ে যায়।
অনুর সঙ্গে বিতর্কে জড়ানোর পর সঙ্গীতজগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন আলিশা। ১৯৮৬ সালে আলিশা তাঁর ম্যানেজার রাজেশ জাভেরিকে বিয়ে করেন। আট বছর সংসারের পর ১৯৯৪ সালে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
সঙ্গীতজগৎ থেকে সাময়িক বিরতির পর ২০০২ সালে আবার হিন্দি ফিল্মজগতে ফিরে আসেন আলিশা। ২০০২ সালে যশ চোপড়ার প্রযোজনায় মুক্তি পায় ‘মুঝসে দোস্তি করোগে!’ ছবিটি। এই ছবিতে গান গেয়ে আবার কেরিয়ারে পথচলা শুরু করেন আলিশা।
অনুর সঙ্গে অশান্তির পর ২০০৩ সালে আবার তাঁর সঙ্গে কাজ করেন আলিশা। ২০০৩ সালে বলি অভিনেতা শাহিদ কপূরের প্রথম ছবি ‘ইশক ভিশক’ মুক্তি পায়। এই ছবিতে অনুর সঙ্গে গান গাইতে দেখা যায় আলিশাকে।
‘ইশক ভিশক’-এর পর ‘ফিদা’, ‘নো এন্ট্রি’, ‘লভ স্টোরি ২০৫০’, ‘আগলি অউর পাগলি’, ‘কমবখত ইশক’-এর হিন্দি ছবিতে অনুর সঙ্গে গান গেয়েছেন আলিশা। ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বান্টি অউর বাবলি’ ছবিতে ‘কজরা রে’ গানটি গেয়ে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যান আলিশা।
২০০০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শঙ্কর-এহসান-লয়, প্রীতম, হিমেশ রেশমিয়ার মতো গায়ক এবং সুরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন আলিশা। ২০০৭ সালে জাভেদ আখতার, অনু মালিক, উদিত নারায়ণের সঙ্গে গানের একটি রিয়্যালিটি শোয়ের বিচারকের আসনে দেখা যায় আলিশাকে।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ২০০৩ সালে কানাডার সঙ্গীতশিল্পী রোমেল কাজোয়ার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন আলিশা। কিন্তু পরে সে প্রসঙ্গে আর কিছু জানা যায়নি। ২০২২ সালে ‘চমকেগা ইন্ডিয়া’ নামের একটি গান লিখে সেই গানটি গাইতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
সমাজমাধ্যমে অধিকাংশ সময় সক্রিয় দেখা যায় ৫৮ বছরের গায়িকাকে। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে আলিশার অনুরাগীর সংখ্যা ৬৮ হাজারের গণ্ডি পার করেছে।