Israel

চশমায় বোমা, কন্ডোমে অ্যাসিড, দুর্বল এজেন্ট! ‘অপারেশন সুজানা’র কারণে মুখ পোড়ে ইজ়রায়েলের

গোয়েন্দা জগতে এত প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকা সত্ত্বেও এই ইজ়রায়েল এমন এক কাণ্ড ঘটিয়েছিল, যার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে মুখ পুড়েছিল এই ইহুদি রাষ্ট্রের। তবে তা মোসাদ বা শিন বেট ঘটায়নি। ঘটিয়েছিল আমন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৪
Share:
০১ ২২

মোসাদ। ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই গোয়েন্দা সংস্থার গুপ্তচরেরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন। ২০২০ সালে আমেরিকার অনুরোধে গোপন অভিযান চালিয়ে লাদেনের নিকটাত্মীয় আল কায়দার প্রথম সারির নেতা আবু মহম্মদ আল-মাসরি ওরফে আহমেদ আবদুল্লাকে হত্যা করেছিল এই গুপ্তচর সংস্থা।

০২ ২২

ইজ়রায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের খ্যাতি জগৎজোড়া। কোন ছদ্মবেশে যে লুকিয়ে আছে তাদের গুপ্তচর, তা বুঝে ওঠার আগেই কাজ সাঙ্গ করে যেন হাওয়ায় মিশে যান তাঁরা। বহু ক্ষেত্রেই আক্রান্ত দেশ মোসাদের উপস্থিতি টের পায় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পর।

Advertisement
০৩ ২২

সম্প্রতি প্যালেস্টাইনি গোষ্ঠী হামাসের প্রাক্তন প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যাই হোক বা লেবানন এবং সিরিয়ায় একের পর এক পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের ঘটনা— অভিযোগের আঙুল উঠেছে মোসাদের দিকেই। ওই হামলার ছত্রে ছত্রে মোসাদের অভিযানের ছাপ রয়েছে বলে দাবি করেছেন অনেকেই। যদিও ইজ়রায়েল ঘটনার দায় নেয়নি।

০৪ ২২

বিশ্বের গোয়েন্দা ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেই মোসাদের একের পর এক কীর্তি এবং সাফল্যের নজির চোখে পড়বে। মোসাদের হাতে এলি কোহেনের মতো গুপ্তচরও ছিলেন, যাঁর জন্য পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল ইজরায়েল।

০৫ ২২

১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইজ়রায়েল গঠনের পর থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনও বন্ধুত্বপূর্ণ হয়নি। যার ফলস্বরূপ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সাত বার যুদ্ধ হয়েছে ইজ়রায়েলের। সবতেই অবশ্য জয় পেয়েছে তারা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র যাতে কোনও ভাবেই দেশকে বিপদে না ফেলতে পারে, তাই সেই দেশগুলিতে ছদ্মবেশে রয়েছেন ইজ়রায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের প্রতিনিধিরা।

০৬ ২২

মোসাদ ছাড়াও ইজ়রায়েলকে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখতে কড়া নজরদারি চালায় ইজ়রায়েলি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ ‘আমন’ এবং নিরাপত্তা সংস্থা ‘শিন বেট’।

০৭ ২২

গোয়েন্দা জগতে এত প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকা সত্ত্বেও এই ইজ়রায়েলই এমন এক কাণ্ড ঘটিয়েছিল, যার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে মুখ পুড়েছিল এই ইহুদি রাষ্ট্রের। তবে তা মোসাদ বা শিন বেট ঘটায়নি। ঘটিয়েছিল আমন।

০৮ ২২

ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৫৪ সালে। মিশরে তখন গামাল আবদেল নাসেরের সরকার সদ্য ক্ষমতায় এসেছে। জল্পনা ওঠে, সেই আবহে সুয়েজ খাল থেকে সরতে পারে ব্রিটেন। আর তা ভেস্তে দিতেই নাকি ছক কষেছিল ইজ়রায়েল।

০৯ ২২

আসলে মিশরে তখন এমনিই ডামাডোল। রাজা ফারুখকে উৎখাত করে ক্ষমতায় আসেন নাসের। নাসেরের মধ্যে যে আরব বিশ্বের মাথা হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তা-ও কূটনৈতিক মহলে অজানা ছিল না।

১০ ২২

একনায়ক নাসেরের অগ্রাধিকার ছিল সুয়েজ খালের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন এবং খাল অঞ্চলে ব্রিটিশ সামরিক উপস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া। আর সেখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখে ইজ়রায়েল।

১১ ২২

তাই মিশরে থাকা ব্রিটিশ এবং আমেরিকান নাগরিক, তথ্য এবং কূটনৈতিক কেন্দ্রগুলিতে ভুয়ো হামলার ছক কষে ইজ়রায়েল। লক্ষ্য ছিল নাসের সরকারের স্থিতাবস্থা ঘেঁটে দেওয়া এবং ব্রিটেন ও আমেরিকার প্রভাব বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি, হামলার দায় অন্য দেশের উপর দিয়ে দেওয়া।

১২ ২২

মোসাদ সেই অভিযানের নাম দেয় ‘অপারেশন সুজানা’। এই অপারেশনের সিদ্ধান্ত তখন নেওয়া হয়েছিল, যখন ইজ়রায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোশে শেরেট এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিনহাস লাভনের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই প্রকট হয়ে উঠেছিল।

১৩ ২২

এক দিকে লাভেনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন মোশে। অন্য দিকে, মোশেকে পাশ কাটিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেন-গুরিয়নের সঙ্গে শলাপরামর্শ করছিলেন উচ্চাভিলাষী দুই কর্তা মোশে দায়ান এবং শিমন পেরেস।

১৪ ২২

শত্রুর দেশে বিশেষ বিশেষ অভিযান করার দায়িত্ব ছিল মোসাদের কাঁধে। কিন্তু প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতায় আসার পরে সেই নীতিতে বদল আনেন লাভেন। মোসাদের গুরুত্ব কমে। গুরুত্ব বাড়ে আমনের। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাকে।

১৫ ২২

ইজ়রায়েলে ক্ষমতা দখলের সেই অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের মধ্যেই মিশরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য ইজ়রায়েলি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ আমন দায়িত্ব নেয় ‘অপারেশন সুজানা’র। স্থানীয় আরব গোষ্ঠীগুলির উপর এই ঘটনার দায় চাপানোর পরিকল্পনাও করে ফেলেছিল তারা।

১৬ ২২

তবে মুখ থুব়ড়ে পড়তে হয়েছিল অপারেশন সুজানাকে। মিশরে থাকা ইহুদিদের কাজে লাগিয়ে প্রথমে একটি নকল জঙ্গি গোষ্ঠী গঠন করা হয়েছিল। জঙ্গিদের আদলে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় তাদের।

১৭ ২২

অস্ত্র হিসাবে তৈরি হয়েছিল চশমার খাপে ভরা বেশ কিছু অত্যাধুনিক বোমা এবং অ্যাসিড ভরা নিরোধ। তবে অভিযানে অংশ নেওয়া ওই ইহুদিদের প্রশিক্ষণে যে খামতি রয়ে গিয়েছে, তা বোঝা যায় অভিযানের দিনে।

১৮ ২২

নাসেরের বিপ্লবের বার্ষিকী উপলক্ষে কায়রো জুড়ে সিনেমা হল এবং রেলস্টেশনে বোমা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আগে থেকে বসানো বোমাগুলি স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়।

১৯ ২২

ওই অভিযানে ছিলেন ১৯ বছর বয়সি তরুণ ফিলিপ নাথানসনও। পকেটে চশমার খাপে থাকা বোমা নিয়ে আলেকজ়ান্দ্রিয়ার একটি সিনেমা হলে রাখতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু টিকিট কাটার লাইনে তাঁর পকেটেই বোমা ফেটে যায়।

২০ ২২

প্রাণে বাঁচলেও মিশরের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন নাথানসন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইজ়রায়েলি নেটওয়ার্ক তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ধরা পড়ে যান মোসাদের শীর্ষ এজেন্ট ম্যাক্স বেনেটও। এটি এমন একটি সময়ে ঘটে, যখন ইজ়রায়েলি গোয়েন্দাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল মিশরে।

২১ ২২

অপারেশন সুজানা বহু বছর ধরে ই‌জ়রায়েলের রাজনীতিকে বিষিয়ে তোলে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী লাভন অভিযানের নির্দেশ দিলেও তিনিই পরবর্তী কালে আমনের উপর দোষ চাপিয়েছিলেন। তবে পরে লাভনকে পদত্যাগ করতে হয়।

২২ ২২

গোটা দুনিয়া বুঝেছিল যে, এই ব্যর্থ অভিযানের নেপথ্যে ছিল ইজ়রায়েল। কিন্তু কখনওই জনসমক্ষে সে কথা স্বীকার করেনি তারা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement