অম্বানী-আদানিদের পিছনে ফেলে পৃথিবীর সেরা ধনীদের তালিকায় উপরে উঠে এলেন তাইওয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকার ব্যবসায়ী জেনসেন হুয়াং।
জেনসেন আমেরিকার বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা এনভিডিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও।
এনভিডিয়ার সদর দফতর ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারায়। এটি একটি সফ্টঅয়্যার এবং হার্ডঅয়্যার প্রস্তুতকারী সংস্থা, যা গ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ), অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই), মোবাইল কম্পিউটিং এবং সিস্টেম অন চিপ ইউনিট (এসওসি) তৈরি করে এবং বিক্রি করে।
এনভিডিয়া কৃত্রিম মেধাসম্পন্ন হার্ডঅয়্যার এবং সফ্টঅয়্যারের একচেটিয়া ব্যবসায়ী। সেই এনভিডিয়ার অন্যতম মালিক জেনসেনই এ বার পৃথিবীর সেরা ধনীদের তালিকায় উল্লেখযোগ্য ভাবে উপরে উঠে এলেন। কিন্তু কী ভাবে এই উত্থান?
মঙ্গলবার এনভিডিয়ার শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ শতাংশেরও বেশি। যার ফলে মাইক্রোসফ্টকে ছাড়িয়ে এনভিডিয়া বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি সংস্থা।
এনভিডিয়ার সংস্থার মোট সম্পত্তির পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৩.৩৩৫ লক্ষ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৭৮ লক্ষ কোটি টাকা)। এই বছরের শুরু থেকে এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম ১৮০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এনভিডিয়ার দর বাড়তে সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে জেনসেনেরও। এমনকি, সম্পত্তির নিরিখে রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর মালিক মুকেশ অম্বানী এবং আদানি গোষ্ঠীর মালির গৌতম আদানিকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন তিনি।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, জেনসেনের বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ এখন প্রায় ১১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৯.৯২ লক্ষ কোটি টাকা)।
অন্য দিকে, অম্বানী এবং আদানি যথাক্রমে প্রায় ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৯.৪২ লক্ষ কোটি টাকা) এবং ১০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৯ লক্ষ কোটি টাকা)-এর মালিক।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, এই বছর ৬১ বছর বয়সি আমেরিকার ব্যবসায়ীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৬.২৫ লক্ষ কোটি টাকা) বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে জেনসেন বিশ্বের দ্বাদশ ধনী ব্যক্তি। ১৩ এবং ১৪ নম্বর স্থানে রয়েছেন অম্বানী এবং আদানি।
কিন্তু কী ভাবে এত পরিমাণ সম্পত্তি বাড়ল জেনসেন এবং তাঁর সংস্থার। বিশেষজ্ঞদের মতে, এনভিডিয়ার কৃত্তিম মেধাযুক্ত চিপের বিক্রয় বৃদ্ধির কারণেই রমরমা বেড়েছে সংস্থার।
শুধু গত মাসেই এনভিডিয়া ১৪৯০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১.২৪ লক্ষ কোটি টাকা) লাভ করেছে।
১৯৬৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাইওয়ানের তাইনানে জেনসেনের জন্ম। জেনসেনের যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন তাঁর পরিবার তাইল্যান্ডে চলে যায়। ন’বছর বয়সে উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁকে আমেরিকার ওয়াশিংটনে এক আত্মীয়ের কাছে পাঠানো হয়।
১০ বছর বয়সে কেনটাকির ওনিডায় একটি স্কুলে ভর্তি হন। কয়েক বছরের মধ্যে, জেনসেনের বাবা-মা আমেরিকায় চলে যান। ১৬ বছর বয়সে ওরেগনের অ্যালোহা থেকে স্কুল পাশ করার পর একটি রেস্তরাঁয় বেয়ারার কাজে যোগ দেন জেনসেন।
১৯৮৪ সালে ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন জেনসেন। ১৯৯২ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করেন।
পড়াশোনা শেষ করে জেনসেন এলএসআই লজিকের কোরওয়্যারের ডিরেক্টর হিসাবে যোগ দেন।
বছরখানেক সংস্থায় চাকরির পর ১৯৯৩ সালে ক্রিস মালাচোস্কি এবং কার্টিস প্রিমের সঙ্গে এনভিডিয়া তৈরি করেন জেনসেন। এনভিডিয়ার সিইও এবং প্রেসিডেন্টও নিযুক্ত হন তিনি। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ৩০।
জেনসেন জানিয়েছিলেন, রাস্তার ধারে একটি দোকানে নৈশভোজের সময় নিজেদের সংস্থা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। এর পর আর তাঁদের ফিরে তাকাতে হয়নি।