আবার বিতর্কে ইউটিউবার বিবেক বিন্দ্রা। সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠেছে দেশের জনপ্রিয় ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ (মূলত প্রেরণামূলক বক্তৃতা করেন যাঁরা)-এর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, বিয়ের এক দিনের মাথায় স্ত্রী ইয়ানিকাকে শারীরিক নিগ্রহ করেছেন বিবেক। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে হইচই পড়েছে। সমাজমাধ্যমে প্রচুর পোস্ট করা হচ্ছে।
স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে বিবেকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন নেটপ্রভাবী বিবেক।
দিল্লিতে ১৯৮২ সালের ৫ এপ্রিল বিবেকের জন্ম। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিবেকের যখন আড়াই বছর বয়স তখন তিনি তাঁর বাবাকে হারান। এর পর তাঁর মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাঁর মা নতুন করে সংসার পাতার কারণে বিবেক একা হয়ে যান। যদিও সৎবাবার সঙ্গেও সম্পর্ক খুব খারাপ ছিল না বিবেকের।
দিল্লির সেন্ট জেভিয়ার্স হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে দিল্লিরই এক কলেজে ভর্তি হন বিবেক। ‘বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন নয়ডার এক বেসরকারি কলেজ থেকে।
পরে কলম্বোর ওআইইউএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণার কাজও শেষ করেন বিবেক।
সেই সময় থেকেই ভগবদ্গীতা পড়তে শুরু করেন বিবেক। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিবেকের প্রিয় বইও ভগবদ্গীতা। বিবেক বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা করার সময় বার বার দাবি করেছেন যে, ভগবদ্গীতা-ই তাঁকে তাঁর চিন্তাভাবনা এবং ব্যক্তিত্বকে উন্নত করতে সাহায্য করেছিল।
বিবেক এক জন ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি কর্পোরেট জগতের ব্যবসা সংক্রান্ত প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ২০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে বিবেকের। সারা বিশ্বে বহু কর্পোরেট পেশাদার এবং উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। বিবেকের উদ্ভাবনী প্রশিক্ষণ তাঁর বিশেষ কৌশলের জন্য বিশেষ ভাবে পরিচিত। বিভিন্ন সংস্থার পরামর্শদাতা হিসাবেও কাজ করেছেন বিবেক।
বর্তমানে বিবেক ভারতের এক জন জনপ্রিয় ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’। একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তাঁর। বিবেক তাঁর ব্যবসার ভিডিয়ো এবং প্রেরণামূলক বক্তৃতার ভিডিয়োর কারণে ইউটিউব এবং সমাজমাধ্যমে বিখ্যাত।
দক্ষ বক্তা হিসাবে পরিচিত বিবেক বহু সম্মেলন এবং কর্মশালায় বক্তৃতা দিয়েছেন। টেলিভিশনের বিভিন্ন ব্যবসা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানের তিনি নিয়মিত অতিথি। ইতিমধ্যেই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে উন্নতি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বই লিখে ফেলেছেন বিবেক।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিবেক শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যমূলক বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত। কর্পোরেট প্রশিক্ষণে অবদানের জন্য বেশ কয়েকটি পুরষ্কারও জিতেছেন তিনি।
বহু মানুষ বিবেকের ব্যবসা সম্পর্কিত উপদেশ মেনে চলেন। ইউটিউবে বিবেকের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ২ কোটির বেশি। শুধুমাত্র ইউটিউব থেকেই বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করেন বিবেক।
তবে স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগের আগে সম্প্রতি আরও এক বিতর্কে জড়িয়েছেন বিবেক। ভারতের অন্য এক জনপ্রিয় ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ সন্দীপ মহেশ্বরীর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেলে ‘বিগ স্ক্যাম এক্সপোজ়ড’ শিরোনামে একটি ভিডিয়ো আপলোড করেছিলেন সন্দীপ। সেখানে এক জন বড় ইউটিউবারের কথা বলা হয়, যিনি ব্যবসার নামে দেশের বহু তরুণ-তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
সন্দীপ কারও নাম না করলেও সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশের মতে সেই ইউটিউবার আর কেউ নন, তিনি বিবেক। ভিডিয়ো আপলোড করার পরের দিনই সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন সন্দীপ।
কমিউনিটি পোস্টে সন্দীপ লেখেন, ‘বিগ স্ক্যাম এক্সপোজ়ড’ ভিডিয়োটি ইউটিউব থেকে মুছে ফেলার জন্য তাঁর কর্মীদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাঁরা এই কেলেঙ্কারিতে যুক্ত তাঁরা ওই দুই ছাত্রকেও নিজেদের বয়ান বদলের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
এর এক দিন পর সমাজমাধ্যমে আবার একটি কমিউনিটি পোস্ট করেন সন্দীপ। সেই পোস্টে তিনি সরাসরি বিবেকের নাম নেন। তিনি লেখেন, “প্রিয় বিবেক, এক দিকে আপনি আমাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন, অন্য দিকে আপনি আপনার সাঙ্গপাঙ্গদের বার বার আমার বাড়িতে পাঠাচ্ছেন। আপনার কি মনে হয় যে, আমি আপনার হুমকিতে খুব ভয় পেয়েছি?’’
এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসে বিবেকের কাছ থেকেও। সন্দীপের পর বিবেক তাঁর ইউটিউব চ্যানেলেও একটি কমিউনিটি পোস্ট করেন। বিবেক সেই পোস্টে লেখেন, ‘‘আপনি আমাকে আপনার শোয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যেখানে আমি আপনার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম। এই ভাবে আমি আবার আপনার শোয়ে আসতে এবং সব কিছু নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে প্রস্তুত। আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। কিন্তু সত্যের মুখোমুখি হওয়ার শক্তি কি আপনার আছে?’’
সমাজমাধ্যমে বিবেক এবং সন্দীপের বাগ্যুদ্ধে নেটদুনিয়াকে কার্যত দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। সেই বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি।
২০২২ সালের জুনে বিবেক তাঁর একটি ভিডিয়োতে শিখ ধর্মগুরু গোবিন্দ সিংহের একটি অ্যানিমেটেড ছবি ব্যবহার করে বিতর্কের মুখে পড়েন। পরে অবশ্য তিনি ক্ষমা চেয়ে নেন।
বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। ২০১৮ সালে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) বিবেকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। আইএমএ-র অভিযোগ ছিল, ‘রিয়্যালিটি অফ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সিস্টেম’ শিরোনামের একটি ভিডিয়োতে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করেছেন বিবেক। তবে আদালতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে বিবেক মামলাটি জিতে যান। তবে আবার নতুন করে বিপাকে পড়লেন বিবেক।
বিবেকের বিরুদ্ধে নয়ডার একটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর শ্যালক বৈভব কোয়াত্রা।
গত ৬ ডিসেম্বর ইয়ানিকা কোয়াত্রাকে বিয়ে করেন বিবেক। আর তার পরের দিনই অর্থাৎ, ৭ ডিসেম্বর স্ত্রীকে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে নেটপ্রভাবী বিবেকের বিরুদ্ধে।
বৈভব পুলিশকে জানিয়েছেন, ৭ ডিসেম্বর বিবেক এবং তাঁর মায়ের মধ্যে কোনও একটি বিষয়ে বাগ্বিতণ্ডা চলছিল। সেই সময় বাড়িতেই ছিলেন ইয়ানিকা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে স্বামী এবং শাশুড়ির মধ্যে মধ্যস্থতা করতে যান ইয়ানিকা।
সেই সময়ই নাকি ইয়ানিকাকে মারধর করতে শুরু করেন বিবেক। অভিযোগ, ইউটিউবার তাঁর সদ্যবিবাহিতা স্ত্রীকে একটি ঘরে বন্ধ করে প্রথমে গালিগালাজ এবং পরে মারধর করেন।
ইয়ানিকার ভাই বৈভবের দাবি, ব্যাপক মারধরের কারণে তাঁর দিদি শরীরে গুরুতর চোট পেয়েছেন। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এমনকি, মারের চোটে তিনি এক কানে শুনতে পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ। আপাতত তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।