পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই যাত্রিবাহী বাণিজ্যিক বিমানগুলিকে সাধারণত ভাল ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। বিমানটি ঠিক সময়ে বিমানবন্দর ছাড়ছে কি না, ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছে কি না, তার উপরও কড়া নজর রাখা হয়। তবে পাকিস্তানে এমন এক যাত্রিবাহী বিমান ছিল, যা সকলের নজরের সামনে থেকে রাতারাতি উধাও হয়ে যায়!
উধাও হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ দিন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ)-র বিমান এ৩১০-র অবস্থান অজানা ছিল। তবে পরে অভিযোগ ওঠে, পিআইএ-র প্রাক্তন সিইও এ৩১০ বিমানটিকে জার্মানি পাঠিয়ে সেটিকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন!
পিআইএ-র প্রাক্তন সিইও বার্ন্ড হিলডেনব্র্যান্ড ‘হারিয়ে যাওয়া’ বিমানটিকে ভাড়া খাটিয়ে এবং বিক্রি করে প্রায় ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
পাক সংবাদমাধ্যম ‘পাকিস্তান টুডে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এয়ারবাস এ৩১০ বিমানটিকে জার্মানিতে নিয়ে গিয়েছিলেন বার্ন্ড। এমনটাই অভিযোগ করেছিল পিআইএ-ও।
অভিযোগ ওঠে, জার্মানিতে পৌঁছনোর পর বিমানটিকে প্রায় ১০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল এক জার্মান সংস্থাকে। তার আগে বিমানটি ভাড়া খাটিয়ে আরও প্রায় ২ কোটি টাকা তোলা হয়েছিল।
এয়ারবাস এ৩১০ বিমানটিকে ২০১৬ সালে জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে বার্ন্ডের বিরুদ্ধে। এর পর বিমানটিকে ছবির শুটিংয়ে ব্যবহারের জন্য একটি ব্রিটিশ সংস্থাকে ভাড়া দেওয়া হয়।
ছবিটির শুটিং চলেছিল মাল্টায়। শুটিং শেষে বিমানটি আবার জার্মানি উড়ে যায়। এর পর নাকি লাইপজিগ হ্যালের বিমানবন্দর জাদুঘরে ঠাঁই হয়েছিল বিমানটির। জাদুঘরে না কি মাত্র ৩২ লক্ষ টাকায় বিমানটিকে বিক্রি করা হয়েছিল। পরে আবার জাদুঘরের পক্ষ থেকে বিমানটিকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলেও শোনা যায়।
‘পাকিস্তান টুডে’-র প্রতিবেদন অনুয়ায়ী বিমানটিকে কিনেও নাকি বিশেষ লাভ হয়নি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। বিমানটি ৩০ বছরের পুরনো হওয়ায় সেটি যাত্রী বহন করার যোগ্যতা হারিয়েছিল।
বিমান সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা ‘সিএইচ-অ্যাভিয়েশন’-এর ২০১৮ সালের নিবন্ধ অনুযায়ী, এ৩১০ যাত্রী বহন করার ক্ষমতা হারানোর পর তুরস্কের বিমান সংস্থা ইউএলএস এয়ারলাইন্স, বিমানটির ইলেকট্রিক ইঞ্জিন দু’টি আলাদা ভাবে কিনে নেয়। তবে এই বিষয় নিয়ে অন্য দাবিও রয়েছে।
বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানটির ইঞ্জিন এবং দেহ আলাদা আলাদা করে নিলামে তোলা হয়েছিল। তেমনটা জানিয়েছিলেন পিআইএ-এর তৎকালীন মুখপাত্র মাসুদ তাজওয়ার।
আবার অনেক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে, কোটি কোটি টাকার বিমানটি মাত্র ৩৮ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল।
একটি তদন্ত সংস্থার দাবি, বিমানটিকে যখন বিক্রি করা হয়, তখন সেটির আনুমানিক মূল্য ছিল ২২ কোটি টাকা।
বার্ন্ডের বিরুদ্ধে বিমান বিক্রির অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। পিআইএ-র সিইও থাকাকালীন তিনি আরও অনেক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠার পর পাকিস্তান ছেড়ে জার্মানি চলে যান বার্ন্ড। তার পর থেকে তিনি আর পাকিস্তানমুখো হননি।
এ৩১০ বিমান নিয়ে এতটাই জটিলতা তৈরি হয়েছিল যে, পাকিস্তানের আইনসভাতেও তা নিয়ে তরজা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই দুর্নীতি নিয়ে অনেক মামলাও দায়ের হয়েছিল সে দেশে। এগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা এখনও চলছে।