ব্যাঙ্ক ঋণ প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত ব্যবসায়ী তথা লিকার ব্যারন বিজয় মাল্যকে চেনেন না এমন মানুষ ভারতে কমই রয়েছেন। তাঁর সাফল্যকাহিনি এবং পতনের গল্পও মোটামুটি সকলেরই জানা। ভারতে এক সময় রমরমিয়ে ব্যবসা করে গিয়েছেন বিজয়।
মাল্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আইডিবিআই ব্যাঙ্কের ৯০০ কোটি টাকার ঋণ না মিটিয়েই দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। এই ঘটনায় ওই ব্যাঙ্কের তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজারের নামও অতিরিক্ত চার্জশিটে রেখেছেন তদন্তকারীরা।
২০১৯ সালে জানুয়ারি মাসে মুম্বইয়ের একটি বিশেষ আদালত মাল্যকে ‘পলাতক’ বলে ঘোষণা করে। আদালত কাউকে ‘পলাতক’ বলে ঘোষণা করলে তদন্তকারী সংস্থা সেই ব্যক্তির যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে।
ভারতে থাকাকালীন রঙিন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য পরিচিতি ছিল মাল্যের। তাঁর পুত্র সিদ্ধার্থ মাল্যও বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে থেকেছেন।
বিজয়ের পুত্র বলতে সকলে সিদ্ধার্থের কথা জানেন। তবে অনেকেই জানেন না যে, পলাতক বাবার তিন কন্যাও রয়েছে—লিয়ানা মাল্য, তানিয়া মাল্য এবং লায়লা মাল্য।
তিন কন্যার মধ্যে লায়লা হলেন বিজয় মাল্যর সৎকন্যা। প্রথম স্ত্রী সমীরার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বেঙ্গালুরুতে রেখা নামের এক মহিলাকে বিয়ে করেন বিজয়।
রেখা এবং বিজয়, উভয়েরই এটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। বিজয়ের সঙ্গে বিয়ের আগে শাহিদ মাহমুদকে নামে এক জনকে বিয়ে করেছিলেন রেখা। তাঁদের দুই সন্তান ছিল— লায়লা এবং কবির মাহমুদ। কবিরকে মেনে না নিলেও লায়লাকে মেনে নিয়েছিলেন বিজয়। বিজয় এবং রেখার কাছে মানুষ হন লায়লা।
লায়লার জন্ম বেঙ্গালুরুতে। মাল্য অদিতি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হন। এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য নিউ ইয়র্কের ‘ফ্যাশন ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’তে ভর্তি হন।
লায়লা বর্তমানে গয়নার নকশা প্রস্তুতকারক। বেঙ্গালুরুতে কাহাভা নামক একটি ‘লাইফস্টাইল স্টোরে’ তাঁর নকশা করা গয়না বিক্রি হয়। লায়লাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শোতে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে।
প্রাক্তন আইপিএল কর্তা ললিত মোদীর সঙ্গেও কাজ করতেন লায়লা। ললিতের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন তিনি। আইপিএল বিতর্কেও লায়লার নাম জড়িয়েছিল।
২০১০ সালে কোচি ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি প্রথম বার ললিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল। তাদের দাবি ছিল, হুমকি দিয়ে তাদের দল তুলে নিতে বলেছিলেন ললিত। তখনই লায়লা মাহমুদ নামে এক মহিলার নাম প্রকাশ্যে এসেছিল।
পরে জানা গিয়েছিল, লায়লা আসলে মাল্যের সেই দত্তক নেওয়া সন্তান। বেশ কিছু দিন তিনি ললিতের সহকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন। মাল্য দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরে লায়লার নাম সে ভাবে শোনা যায়নি।
সেই সময় আয়কর দপ্তর বেশ কয়েক বার জেরা করেছিল লায়লাকে। মাল্য নিজেও বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমার সৎমেয়ে ললিতের হয়ে কাজ করে। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। ললিতকে ফোন করেছিলাম। ও বলেছে আয়কর দফতরের আধিকারিকদের কাছে নিজের জবাব জানিয়ে দিয়েছে লায়লা।’’
পুলিশ সেই সময়ে একদিন ললিতের দপ্তরে হানা দেওয়ার আগেই অফিস ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল লায়লাকে। তাঁর হাতে ল্যাপটপ এবং বেশ কিছু কাগজপত্র ছিল। মনে করা হয়েছিল, তিনি কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে পালিয়েছেন। পরে তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পড়াশোনা শেষ করে সমর সিংহ নামে এক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কারকে বিয়ে করেন লায়লা।