ছোটদের জন্য ছোট পর্দায় বেশ কয়েকটি হিন্দি ধারাবাহিক মুক্তি পেয়েছিল দুই দশক আগে। ওই ধারাবাহিকগুলিতে শিশু অভিনেতারা বিশেষ ভাবে নজর কাড়ত দর্শকমহলের। সেই সময় শিশু অভিনেতাদের মধ্যে কেরিয়ারের শীর্ষে পৌঁছেছিলেন ঝনক শুক্ল।
তবে আসল নামের চেয়ে ঝনক বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘করিশ্মা’ নামে। জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘করিশ্মা কা করিশ্মা’য় ‘করিশ্মা’ নামের একটি রোবটের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি।
শুধু ‘করিশ্মা কা করিশ্মা’ ধারাবাহিকেই নয়, ‘সোন পরি’ ধারাবাহিকেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল ঝনককে। ‘প্রিন্সি’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু জনপ্রিয়তার শিখরে থাকা এই শিশু অভিনেতা বহু দিন ক্যামেরা থেকে দূরে।
ছোট বা বড় পর্দায় দেখা না গেলেও আবার নতুন করে চর্চায় এসেছেন ঝনক। সোমবার দীর্ঘকালীন প্রেমিক স্বপ্নিল সূর্যবংশীর সঙ্গে আংটিবদল করেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে আংটিবদলের অনুষ্ঠানের ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি।
গোলাপি সালোয়ার স্যুট এবং হলুদ ওড়নায় চেনাই যাচ্ছিল না ঝনককে। পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন আংটিবদলের অনুষ্ঠানে। স্মৃতি ঝা, কানওয়াড় ধিলোঁ, মোহিত হিরানন্দনী, অভিকা গোরের মতো তারকারা শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন ঝনককে।
স্বপ্নিলের সঙ্গে ঝনকের পরিচয় দীর্ঘ দিনের। কিন্তু অভিনয় জগৎ থেকে শতহস্ত দূরে রয়েছেন স্বপ্নিল। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর এমবিএ করেছেন তিনি।
স্বপ্নিলের নিজস্ব সংস্থা রয়েছে। এই সংস্থার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করলে তাঁকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্বাস্থ্য এবং ডায়েট সম্পর্কিত বিভিন্ন উপদেশ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি স্বপ্নিল এক জন ফিটনেস ট্রেনার।
স্বপ্নিলের সঙ্গে আংটিবদলের ছবিগুলি প্রকাশ্যে আসায় ঝনকের দেওয়া পুরনো একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে বলিপাড়ায় চর্চা শুরু হয়। ঝনক রাতারাতি অভিনয় জগৎ থেকে সরে গেলেন কেন তা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন অভিনেত্রী নিজেই।
১৫ বছর বয়সে ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে আসেন ঝনক। ধারাবাহিকের পর হাতেগোনা কয়েকটি হিন্দি ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষের দিকে হিন্দি ছবিতে আর কাজ করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তাই সিদ্ধান্ত নেন যে, অভিনয় জগৎ থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিরতি নেবেন।
ঝনক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে খালি শুটিং আর স্কুলের হোমওয়ার্ক নিয়েই আমার জীবন কেটেছে। ছেলেবেলা উপভোগ করতে পারিনি ঠিক করে। এত ব্যস্ত জীবন আমার ভালই লাগত। কিন্তু তার পাশাপাশি একটা খারাপ লাগাও ছিল। বাবা-মা দু’জনেই বলতেন এত চাপ না নিতে।’’
ঝনক জানিয়েছিলেন,তিনি রাস্তায় বেরোলেই সকলে তাঁকে নিয়ে মাতামাতি করতেন। জনপ্রিয়তা উপভোগ করলেও ঝনক ভাবতেন যে রাস্তায় নিজের ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরা করতে পারবেন না তিনি। এমন জীবন চাইতেন না বলেও জানিয়েছেন অভিনেত্রী। তাই তিনি অভিনয় জগৎ থেকে সরে আসেন।
শুধু হিন্দি ধারাবাহিকেই নয়, বড় পর্দায় শাহরুখ খান, সইফ আলি খান, ইরফান খান, কঙ্কনা সেনশর্মার মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ঝনক। ২০০৩ সালে মুক্তি পায় ‘কল হো না হো’ ছবিটি। এই ছবিতে ‘জিয়া কপূর’-এর চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
‘কল হো না হো’ ছবি মুক্তির ৩ বছর পর ‘ডেডলাইন: সির্ফ ২৪ ঘণ্টে’ ছবিতে রজিত কপূর, ইরফান খান এবং কঙ্কনা সেনশর্মার সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল ঝনককে।
হলিউডেও নিজের অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেছিলেন ঝনক। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় ‘ওয়ান নাইট উইথ দ্য কিং’। এই ছবিতে স্বল্প দৈর্ঘ্যের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
ছোট পর্দায় ‘হাতিম’ ধারাবাহিক ছাড়াও ‘গুমরাহ’ ধারাবাহিকের একটি পর্বে দেখা গিয়েছিল ঝনককে। এমনকি মালয়ালম ধারাবাহিক ‘আলিপাজহম’-এও অভিনয় করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন নামী বিজ্ঞাপন সংস্থার প্রচারের মুখ হিসাবে কাজ করেছিলেন ঝনক।
২০০৫ সালে মুক্তি পায় সঞ্জয় লীলা ভন্সালী পরিচালিত ছবি ‘ব্ল্যাক’। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ঝনককে বেছে নিয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু সময়ের অভাবে এই ছবিতে কাজ করতে পারেননি তিনি।
‘করিশ্মা কা করিশ্মা’ ধারাবাহিক নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ঝলক। ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে অভিনয় করার জন্য সময় বার করতে পারছিলেন না তিনি। সঞ্জয়ের মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা বহু বলি তারকার স্বপ্ন। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য এই সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন ঝনক।
ঝনক জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকে ইতিহাসের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। তাই পুণের একটি কলেজ থেকে প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে ঝনক বলেছেন, ‘‘আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন ভাবতাম ২৪ বছর বয়সে আমি প্রচুর রোজগার করব। বিয়ে করে নিজের জীবন সাজিয়ে ফেলব। কিন্তু ২৫ বছর বয়স হয়ে গেল আমার। কোনও উপার্জন করি না আমি।’’
অভিনয় থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজের সংস্থা খুলেছেন ঝনক। এই সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি। ইনস্টাগ্রামেও বেশ সক্রিয় তিনি। তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫০ হাজারের গণ্ডি পার করেছে।