সম্প্রতি হিন্ডেনবার্গকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি পেয়েছে গৌতম আদানির সংস্থা। শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির অভ্যন্তরীণ তদন্তের উপরই আস্থা রেখেছে।
শীর্ষ আদালতের রায়ের পর আমদাবাদ-ভিত্তিক আদানি গোষ্ঠীর স্বস্তি ফেরার পাশাপাশি তাদের ধনসম্পত্তিও আবার ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করেছে। আবার আকাশ ছুঁতে শুরু করেছে আদানি গোষ্ঠীর আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের দর।
আদানিদের শেয়ারদর তরতরিয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি মোট সম্পত্তির নিরিখে আবার রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর মালিক মুকেশ অম্বানীকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন গৌতম আদানি। সংবাদমাধ্যম ‘বিজ়নেস স্ট্যান্ডার্ড’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবার দেশের সেরা ধনকুবেরদের তালিকার শীর্ষে পৌঁছেছেন তিনি।
তবে, সম্পত্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আদানি গোষ্ঠীর নেতৃত্বেও সম্প্রতি রদবদল হয়েছে। গৌতম-পুত্র কর্ণ আদানিকে ‘আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড লিমিটেড’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর করা হয়েছে।
আদানি গোষ্ঠীর উত্তরাধিকারী কর্ণ। ‘আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড লিমিটেড’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হওয়ার আগে তিনি ওই সংস্থার সিইও ছিলেন। অর্থাৎ, পদোন্নতি হয়েছে তাঁর।
‘আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড লিমিটেড’ ভারতের বৃহত্তম বিমানবন্দর অপারেটর। যা গুজরাতের মুন্দ্রা বিমানবন্দরের দেখরেখের দায়িত্বেও রয়েছে।
২০০৯ সালে ওই সংস্থায় যোগ দেন কর্ণ। প্রায় ১৪ বছর সেই সংস্থায় বিভিন্ন পদে কাটানোর পর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হয়েছেন তিনি। এর আগে ওই পদে ছিলেন গৌতম। অর্থাৎ, বাবার জুতোয় পা গলিয়েছেন কর্ণ।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্ণ নতুন পদ পাওয়ার পাশাপাশি ওই সংস্থারই এগজ়িকিউটিভ চেয়ারম্যানের আসনে বসেছেন গৌতম।
সংবাদমাধ্যম ‘আউটলুক ইন্ডিয়া’ অনুযায়ী, সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে কর্ণের মেয়াদ ২০২৭ সালের ২৩ মে পর্যন্ত।
কর্ণ নতুন পদ পাওয়ার পর তাঁর জায়গায় সিইও হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে নিসান মোটর্সের প্রাক্তন গ্লোবাল চিফ অপারেটিং অফিসার অশ্বানি গুপ্তকে।
আদানি গোষ্ঠীর ওয়েবসাইটে লেখা, গ্রাহকদের আরও ভাল পরিষেবা দিতে কর্ণ নতুন একটি লজিস্টিক সংস্থা তৈরি করছেন। ‘আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড লিমিটেড’-এর রমরমা বৃদ্ধি করতে তিনি সচেষ্ট বলেও ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে।
ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ‘আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড লিমিটেড’ খুব শীঘ্রই নতুন নতুন বন্দর তৈরির কাজে হাত লাগাবে।
আদানি পোর্টসে কর্ণ যোগ দেওয়ার পর সেই সংস্থার রমরমা বেড়েছে। সংস্থার মূলধনও বেড়েছে তরতরিয়ে।
২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারির হিসাব অনুযায়ী, আদানি পোর্টসের বাজারমূল্য ২ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে আদানি পোর্টসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে থাকা ছাড়াও আদানিদের একটি সিমেন্ট সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন কর্ণ।
কর্ণের নিজের সম্পত্তির পরিমাণও আকাশছোঁয়া। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্ণের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৯,৯৮০ কোটি টাকা।
মুম্বইয়ের ক্যাথিড্রাল এবং জন কনন স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন কর্ণ। এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি আমেরিকা চলে যান। পারডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন। পরে দেশে ফিরে বাবার ব্যবসার হাল ধরেন।
২০১৩ সালে দেশের খ্যাতনামী আইনজীবী সিরিল শ্রফের মেয়ে পরিধি শ্রফকে বিয়ে করেন কর্ণ। ২০১৬ সালে পরিধি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কর্ণ এবং পরিধির কন্যার নাম অনুরাধা।
প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারিতে আমেরিকার শেয়ার বিশ্লেষক সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের রিপোর্টে দাবি করেছিল, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কারচুপি করে নিজেদের নথিভুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ারদর বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী।
অভিযোগ ছিল, সেবির বিধিকে ফাঁকি দিতে ভুঁইফোঁড় বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে নিজেদের সংস্থার শেয়ার কিনিয়েছে তারা। সেই রিপোর্টেরই ভিত্তিতে দু’টি মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। তার মধ্যে একটিতে সিট গঠনের আর্জি জানানো হয়।
সেই মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, আদানি-হিন্ডেনবার্গ মামলায় সিট গঠন করা হবে না। এ ব্যাপারে সেবির তদন্তেই আস্থা রাখছে তারা। সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, ‘‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার আওতায় যেখানে তদন্ত চলছে, সেখানে শীর্ষ আদালত দখলদারি করতে পারে না। সেবি যে ভাবে তদন্ত করছিল, সে ভাবেই এই সংক্রান্ত বাকি দু’টি মামলার তদন্তও এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’
আদানিদের বিরুদ্ধে শেয়ারের দরে কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর, তাদের শেয়ারের দাম হু-হু করে কমতে থাকে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকেই আবার তরতরিয়ে বাড়ছে আদানিদের শেয়ারদর। আর তার ফলেই আদানি আবার ‘শ্রেষ্ঠ আসন’ পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।