এক সময় ছিলেন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। মাথায় টাকাপয়সার হিসাব নিয়ে সব সময় আঁকিবুঁকি কাটা চললেও জীবন ছিল সুখের। কিন্তু সেই সুখ তিনি চাননি। পরিবর্তে বেছে নিয়েছিলেন চ্যালেঞ্জে ভরা কেরিয়ার। সেখানেও ক্কেল্লাফতে করলেন তিনি। যাত্রা শুরুর বছরখানেক পরেই সফল ইউটিউবারদের তালিকায় নাম তুললেন নিশ্চা শাহ।
২০২২ সাল পর্যন্ত ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসাবে লন্ডনের ‘ক্রেডিট এগ্রিকোল’ সংস্থায় কাজ করছিলেন নিশ্চা। সংস্থার সহযোগী ডিরেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন তিনি।
‘ক্রেডিট এগ্রিকোল’ সংস্থায় বেতন হিসাবে বার্ষিক ২,৫৬,০০০ ডলার পেতেন নিশ্চা। ভারতীয় মুদ্রায় যা ২ কোটি টাকারও বেশি।
বিদেশে চাকরি, ডলারে ছ’অঙ্কের বেতন, বাড়ি-গাড়ি... সুখী হতে আর কী লাগে! কিন্তু তাতেও সুখ খুঁজে পাননি নিশ্চা।
এত টাকা রোজগার করা সত্ত্বেও মনে মনে খুশি হতে পারছিলেন না নিশ্চা। চাইছিলেন অন্য কিছু করতে।
তাই পাশাপাশি, একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেলেন নিশ্চা। তাঁর চ্যানেলে বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য ভাগ করতে শুরু করেন তিনি। কোথায় বিনিয়োগ করলে লাভ হবে, তা নিয়েও কথা বলতে শুরু করেন।
ইউটিউবে নিশ্চার সাফল্য এক দিনে আসেনি। প্রথম হাজার ‘সাবস্ক্রাইবার’ পেতে ১১ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নিশ্চার জীবনে নতুন মোড় আসে। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসাবে তাঁর জীবন সম্পর্কে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যায়। দ্রুত ‘সাবস্ক্রাইবার’-এর সংখ্যা পৌঁছয় ৫০ হাজারে। আয় করেন তিন লক্ষ টাকা।
এর পরেই দীর্ঘ ন’বছর চাকরি করে এক দিন হঠাৎ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসাবে কর্মজীবনে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন নিশ্চা। আগেই একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছিলেন তিনি। ঠিক করেন ওই নিয়েই এগোবেন।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে ইউটিউবার হিসাবে যাত্রা শুরু করেন নিশ্চা। যে টাকা জমিয়েছিলেন, তা দিয়েই প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে ফেলেন। বছরখানেক যাতে থাকা-খাওয়ার অভাব না হয়, সেই টাকাও জমিয়ে রেখেছিলেন।
তাঁর চ্যানেলে বিনিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাগ করতে শুরু করেন নিশ্চা। কোথায় বিনিয়োগ করলে লাভ হবে, তা নিয়েও কথা বলতে শুরু করেন।
পরিবারের সদস্যদের অনেকেই অবশ্য বুঝিয়েছিলেন, এই সিদ্ধান্ত জুয়া খেলার মতো। সফল না হলে হাত কামড়াতে হবে।
তবে হাত কামড়াতে হয়নি। এক বছরের কিছু বেশি সময়েই সাফল্য আসে। ইউটিউবে একাধিক কোর্স-পণ্য বিক্রি করে, কর্পোরেট আলোচনা করে এবং বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এক বছরে ৮ কোটিরও বেশি উপার্জন করেছেন নিশ্চা। অর্থাৎ, তিনি যা বেতন পেতেন, তার প্রায় ৪ গুণ বেশি।
‘মানি হ্যাবিটস কিপিং ইউ পুয়োর’, ‘হাউ টু ইনভেস্ট ইয়োর ফার্স্ট ১০০০ ডলার’, ‘সেভেন প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়াস’— নিশ্চার চ্যানেলে এই শিরোনামে থাকা কয়েকটি ভিডিয়োর ‘ভিউ’ লক্ষ লক্ষ। কয়েকটি ভিডিয়োর ‘ভিউ’ ৯০ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
সাফল্য প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে নিশ্চা বলেন, ‘‘আমি ব্যাঙ্কিংয়ে ছিলাম। তখন যা আয় করতাম তার চেয়ে অনেক বেশি উপার্জন করছি। টাকার পিছনে না ছুটে আমার যা ভাল লাগে তাই করেছিলাম। মনের কথা শুনেছিলাম। সেই পথেই সাফল্য এসেছে।’’