যুদ্ধ চলছে ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে। আর সেই আবহেই বিশ্ব জুড়ে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে ইজ়রায়েলের ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ বা আকাশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’। ইজ়রায়েলের সামরিক কর্তাদের দাবি, ‘আয়রন ডোম’ না থাকলে হামাসের অতর্কিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ছিন্নবিচ্ছন্ন হয়ে যেত তাদের দেশের বহু এলাকা।
তবে যে খবর আরও চমক এনেছে তা হল ইজ়রায়েলের ‘আয়রন ডোম’-এর মতোই এক ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ তৈরি করতে চলেছে ভারতও! এটি হতে চলেছে ভারতের নিজস্ব ‘আয়রন ডোম’।
২০২৮-’২৯ সালের মধ্যেই ভারত তার প্রথম আকাশ প্রতিরোধক ব্যবস্থা তৈরি করে ফেলতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
‘আয়রন ডোম’ কী? ইজ়রায়েলের ‘নিশ্ছিদ্র পাহারাদার’ বলে মনে করা হয় এই আকাশ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে।
মনে করা হয়, ‘আয়রন ডোম’ বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর আকাশ প্রতিরোধক ব্যবস্থা। হামলা প্রতিরোধক এই অস্ত্রের জন্ম ইজ়রায়েলেই।
সে রকমই এক অস্ত্রের জন্ম দিতে চলেছে ভারত। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের নিজস্ব এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রজেক্ট কুশ’।
‘প্রজেক্ট কুশ’-এর দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলেপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন (ডিআরডিও)’। এটি তৈরি হয়ে গেলে তা শত্রুপক্ষের দিক থেকে ধেয়ে আসা দূরপাল্লার ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র, স্টিলথ যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে ড্রোন হামলা ঠেকাতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘প্রজেক্ট কুশ’ সফল হলে শুধু ইজ়রায়েলের ‘আয়রন ডোম’ নয়, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এস-৪০০ সিস্টেম’ এবং আমেরিকার ‘প্যাট্রিয়ট’-এর থেকেও বেশি কার্যকর হবে।
কী ভাবে কাজ করবে ভারতীয় আকাশ প্রতিরোধক ব্যবস্থা? কুশ প্রকল্পের অধীনে তৈরি সম্পূর্ণ ভাবে দেশীয় প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘লং রেঞ্জ সারফেস-টু-এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (এলআর-এসএএম)’-এর মধ্যে রয়েছে আকাশে বহু দূর পর্যন্ত নজরদারি করার ক্ষমতা।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫০ থেকে ৩৫০ কিমি দূরে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিত করে, তা ধ্বংস করতে সক্ষম এলআর-এসএএম।
এলআর-এসএএম-এ থাকছে ‘ফায়ার কন্ট্রোল’ রাডারও। কৌশলগত ভাবেও কাজ করতে সক্ষম হবে ভারতীয় ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র একে অপরের দিকে ছোড়া হলে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ধ্বংস করার ক্ষমতা হবে প্রায় ৯০ শতাংশ।
আকাশসীমায় কড়া নজরদারি চালাতে পারবে ভারতের ‘আয়রন ডোম’। রকেট হামলা হোক বা ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি ড্রোন হামলা— কোনও কিছুই এর নজর এড়িয়ে যেতে পারবে না। দেশের মাটিতে হামলা চলার আগে আকাশেই সেই লক্ষ্যবস্তুকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এলআর-এসএএম।
মাটি থেকে আকাশ দূরপাল্লার হামলা প্রতিরোধক এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মূলত তিনটি কাজ করবে। রাডারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করা, দ্রুত সেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য তৎপর হওয়া এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে রুখে দেওয়া।
নজরদারির মাধ্যমে এলআর-এসএএম ভারতীয় বায়ুসেনাকেও আকাশপথে শত্রুদের আক্রমণ করতে এবং শত্রুদের হামলা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। শত্রুদের হামলার সময় এলআর-এসএএম ভারতীয় বায়ুসেনার সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে সক্ষম বলেও জানা যাচ্ছে।
সামগ্রিক ভাবে, ‘আয়রন ডোম’-এর এই দেশীয় সংস্করণ আকাশপথে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে। শত্রুবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রকে অনেক দূরেই ধ্বংস করে ভারতীয় আকাশসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এলআর-এসএএম।
উল্লেখযোগ্য যে, ভারতের কাছে ইতিমধ্যেই রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া তিনটি এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। এখনও এই ধরনের দু’টি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়া থেকে ভারতে আসা বাকি। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পরে তৈরি জটিলতার কারণে এখনও তা ভারতের হাতে এসে পৌঁছয়নি।
‘প্রজেক্ট কুশ’-এর জন্য ২১,৭০০ কোটি টাকার অনুমোদন পেয়েছে ডিআরডিও। সরকারি এবং বেসরকারি অংশীদারদের সাহায্যে তৈরি হবে এই প্রকল্প।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, পাকিস্তান এবং চিনের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে উদ্ভূত হুমকির কারণে বর্তমান সময়ে ভারতের হাতে এই ধরনের ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
পাকিস্তানের হাতে এই ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকলেও চিনের কাছে ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ রয়েছে। সেগুলির ক্ষমতা রাশিয়ার এস-৪০০ সিস্টেমের থেকে কমজোরি হলেও ঝুঁকি নিতে চাইছে না ভারত।
উল্লেখযোগ্য যে, ভারত ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ তৈরি করলেও তা কতটা নিশ্ছিদ্র হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। পরের দিকে সামলে নিলেও প্রাথমিক ভাবে ইজ়রায়েলের আকাশের পাহারাদার ‘আয়রন ডোম’ও কার্যত বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল হামাসের মুহুর্মুহু হামলায়। পরে অবশ্য তা হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকিয়ে দেয়।