দেশ জুড়ে হইচই ফেলেছে রেমন্ড কর্তা গৌতম সিঙ্ঘানিয়া ও তাঁর স্ত্রী নওয়াজ় মোদীর বিবাহবিচ্ছেদের খবর। বিচ্ছেদের পর সম্পর্কের তিক্ততা নিয়ে মুখ খুলেছেন নওয়াজ়। গৌতমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন তিনি।
এর পর থেকেই রেমন্ড কর্তাকে নিয়ে কৌতূহল বেড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম পোশাক এবং প্রসাধনী সংস্থা রেমন্ড গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
বিজয়ের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। তাঁর বাবা রেমন্ড গোষ্ঠীর প্রাক্তন কর্তা বিজয়পত সিঙ্ঘানিয়া। মায়ের নাম আশাবাই সিঙ্ঘানিয়া।
প্রথমে মুম্বইয়ের সেন্ট মেরি স্কুল এবং পরে ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন। পরে ভর্তি হন মুম্বইয়েরই এইচআর কলেজে।
খুব ছোট থেকেই বাবার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন গৌতম। ২৩ বছর বয়সে সিঙ্ঘানিয়া পরিবারের জে কে গ্রুপ অফ কোম্পানিতে যোগদান করেন তিনি। পরে যোগ দেন রেমন্ড গোষ্ঠীতে।
১৯৯০ সালে গৌতম রেমন্ডের ডিরেক্টর হন। এর পর ১৯৯৯ সালে গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে চেয়ারম্যান হন।
চেয়ারম্যান হওয়ার পর রেমন্ড গোষ্ঠীর খোলনলচে বদলে দেন গৌতম। অনেক নতুন নিয়ম আনেন। পুনর্গঠন করেন এবং রেমন্ডের গোষ্ঠীর আওতাধীন কয়েকটি সংস্থা (সিনথেটিক্স, ইস্পাত এবং সিমেন্ট) বিক্রিও করে দেন।
এর পর মূলত পোশাকের ব্যবসায় মন দেন গৌতম। পাশাপাশি পুরুষদের প্রসাধন সামগ্রী এবং নিরোধের সংস্থা তৈরি করেন তিনি।
বেলজিয়াম এবং ইটালির দু’টি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রেমন্ডকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ২০০৫ সালে ডিজে আকিলের সঙ্গে মিলে বান্দ্রায় ‘পয়সন’ নামে একটি নাইট ক্লাব খোলেন।
২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, গৌতমের মোট সম্পত্তির পরিমাণ সাড়ে ন’হাজার কোটি। শোনা গিয়েছিল, বর্তমানে মুকেশ অম্বানীর বিলাসবহুল আবাসন ‘অ্যান্টিলিয়া’র চেয়েও দশ তলা উঁচু একটি গগনচুম্বী ভবন নির্মাণ করছেন গৌতম। ‘জেকে হাউস’ নামে ৩০ তলা প্রাসাদোপম ভবনে গৌতমের বাড়ির পাশাপাশি রেমন্ডের শোরুমও তৈরি হবে।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গৌতমের সারা শরীরে শ্বেতি হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৯৯ সালে পার্সি পরিবারের কন্যা নওয়াজ়কে বিয়ে করেন গৌতম। ৫৮ বছর বয়সে সেই স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন গৌতম। নওয়াজ় আইনজীবী নাদের মোদীর মেয়ে। দম্পতির নীহারিকা এবং নিশা নামে দুই কন্যা রয়েছে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, গৌতমের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে নওয়াজ়ের। নওয়াজ়ের অভিযোগ, তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন করতেন গৌতম। তিনি এ-ও অভিযোগ করেন, মেয়েদেরও মারধর করতেন গৌতম। নওয়াজ় আরও জানিয়েছেন এক বার অম্বানীরা এসে তাঁকে গৌতমের মারের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন।
সাক্ষাৎকারে নওয়াজ় বলেন, ‘‘১০ সেপ্টেম্বর সকালে গৌতমের জন্মদিনের পার্টির পর বাড়িতেই আমার আর বড় মেয়ে নীহারিকার উপর আক্রমণ করে গৌতম। কোনও ক্রমে একটি ঘরে আশ্রয় নিয়ে আমরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। নীতা অম্বানী ও অনন্ত অম্বানী এসে আমাদের উদ্ধার করেন। আমরা যাতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি, তা-ও তাঁরা নিশ্চিত করেন।’’ গোটা বিষয়টি নীহারিকার মনে খারাপ প্রভাব ফেলেছিল বলেও নওয়াজ় জানিয়েছেন।
নওয়াজ়ের এ-ও অভিযোগ যে, গৌতম নাকি তাঁকে কোনও রকম খাবার ও জল ছাড়াই তিরুপতিতে ট্রেক করতে বাধ্য করেন। নওয়াজ় বলেন, ‘‘ভেঙ্কটেশ্বর ধনদেবতা, তাই গৌতম ওঁর বড় ভক্ত। গৌতম আমায় বলেছিল বিয়ের পর আমায় তিরুপতিতে যেতে হবে। আমার উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসের সমস্যা আছে ও ভাল করেই জানত। তবুও কোনও জল ও খাবার ছাড়াই ওই পাহাড়ি পথে ট্রেক করতে ও আমায় বাধ্য করে।’’
নওয়াজ় আরও বলেন, ‘‘যাত্রাপথে দুই থেকে তিন বার আমি অজ্ঞানও হয়ে যাই। তা দেখেও গৌতম কোনও পরোয়া করেনি। ধনদেবতা ছাড়া ও আর কোনও দেবতার পুজো করত না।’’
ইতিমধ্যেই বিচ্ছেদ সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ বাবদ রেমন্ড কর্তার সম্পত্তির প্রায় মোট ৭৫ শতাংশ দাবি করেন নওয়াজ়। যদিও স্ত্রীর অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনও রকম মন্তব্য করতে চাননি গৌতম।
পারিবারিক বিবাদের মাঝে মুখ খুলেছেন গৌতমের বাবা তথা প্রাক্তন রেমন্ড কর্তা বিজয়পতও। ছেলের হাতে ব্যবসার সব দায়িত্ব তুলে দিয়ে যে তিনি কত বড় ভুল করেছেন, সে বিষয় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বিজয়পত।
বিজয়পত তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার ছেলের পাশে নেই, বৌমার পাশে আছি। অভিভাবকদের তাঁদের সন্তানদের সব কিছু দেওয়ার আগে ভাল করে ভেবে নেওয়া উচিত।’’