ভারতের সবচেয়ে কঠিন চাকরির পরীক্ষাগুলির মধ্যে অন্যতম ইউপিএসসি। কেউ কেউ আবার ইউপিএসসিকে ভারতের ‘সবচেয়ে’ কঠিন পরীক্ষা বলেও মনে করেন। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন। তার মধ্যে আইপিএস, আইএএস হতে পারেন স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তি। যে কারণে কেউ ইউপিএসসির লেখা পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউয়ে পাশ করলে, তাঁকে নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়।
ইউপিএসসি অন্যতম কঠিন পরীক্ষা হওয়ার পাশাপাশি জীবন পরিবর্তনের পরীক্ষাও বটে। এই পরীক্ষায় বসে সফল হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়! তবে ইউপিএসসিতে পাশ করা অসম্ভবও নয়। একাগ্রতা, অধ্যবসায় আর পরিশ্রম— এই তিন মন্ত্রেই লক্ষ্যপূরণ করতে পারেন পরীক্ষার্থীরা। কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জীবনে সফল হয়েছেন, এমন ইউপিএসসি পরীক্ষার্থীদের সংখ্যাও নেহাত কম না।
এমনও কয়েক জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন, যাঁরা আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়েও নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন, সাফল্য এনেছেন। তেমনই এক কিশোরের কাহিনি গোটা দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসাবে উঠে এসেছে বার বার। সেই কিশোর এখন দেশের এক জন আমলা। সেই আমলার নাম বরুণ বারানওয়ালা। তিনি বর্তমানে এক জন আইএএস।
মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার ছোট শহর বইসারে জন্ম বরুণের। ছোট থেকেই কঠিন সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন এই দরিদ্র পরিবারের সন্তান।
বরুণের বাবার সাইকেল সারাইয়ের দোকান ছিল। সন্তানেরা যাতে ভাল শিক্ষা পায়, তার জন্য ওই দোকানে দিনরাত পরিশ্রম করতেন তিনি।
শৈশব থেকেই বরুণের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার, গরিব মানুষের সেবা করার। তবে তাঁর সেই লক্ষ্যপূরণ হয়নি।
বরুণ যখন দশম শ্রেণির ছাত্র, তখন তিনি বাবাকে হারান। অথৈ জলে পড়ে তাঁর পরিবার। অর্থের অভাবে বরুণের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়।
বাবার মৃত্যুর পর দোকানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বরুণ। কিছু টাকা জমিয়ে আবার স্কুলে ভর্তি হন। সারা দিন স্কুল করার পর বিকেল থেকে দোকানে বসতেন। এ ভাবেই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তীর্ণ হন তিনি।
পুত্রের পড়াশোনার আগ্রহ দেখে বরুণের মা দোকানের দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে নেন এবং ছেলেকে পড়াশোনা শেষ করতে বলেন।
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য বরুণের যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন ছিল, যা তাঁর মায়ের কাছে ছিল না। সেই সময় বরুণের ত্রাতা হিসাবে এগিয়ে আসেন, তাঁর বাবার পরিচিত এক চিকিৎসক।
ওই চিকিৎসক বরুণের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। অবিলম্বে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন বরুণের হাতে।
স্কুলের গণ্ডি টপকে বরুণ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের পড়াশোনা খরচসাপেক্ষ হওয়ায় সেই কলেজ ছেড়ে দেন। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ভর্তি হন পুণের এমআইটি কলেজে।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বৃত্তি পেয়ে যাওয়ার কারণে বরুণকে আর ভাবতে হয়নি। ডিগ্রি অর্জনের পর এক বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি পেয়ে যান তিনি।
কিন্তু চাকরি নিয়ে খুশি ছিলেন না বরুণ। তাঁর আগ্রহ ছিল সরকারি চাকরিতে। তাই পরিবারের অনেক বারণ সত্ত্বেও মোটা বেতনের বেসরকারি চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। বই জোগাড় করে পড়াশোনা শুরু করে দেন। ঠিক করেন ইউপিএসসি দেবেন।
একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় ইউপিএসসি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন বরুণ। ওই সংস্থা তাঁকে পরীক্ষা সংক্রান্ত বই দিয়ে সাহায্য করত। দিনরাত এক করে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন তিনি। ২০১৬-তে প্রথম চেষ্টাতেই ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন বরুণ। তাঁর র্যাঙ্ক ছিল ৩২।