চলতি মাসে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে সঞ্জয় লীলা ভন্সালি পরিচালিত ওয়েব সিরিজ় ‘হীরামন্ডি’। সিরিজ় মুক্তির পর স্বজনপোষণ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন পরিচালক। এমনকি, অভিনয়ে পটু না হওয়ার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সঞ্জয়ের পরিবারের সদস্য তথা অভিনেত্রী শারমিন সহগল। তবে আট পর্বের সিরিজ়ে মনীষা কৈরালা, সোনাক্ষি সিন্হা, অদিতি রাও হায়দারি, রিচা চড্ডার পাশাপাশি অভিনয়ে নজর কেড়েছেন সঞ্জিদা শেখ।
‘হীরামন্ডি’ সিরিজ়ে ওয়াহিদা চরিত্রের টানাপড়েন পর্দায় নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সঞ্জিদা। তবে ‘হীরামন্ডি’র মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রচার পেলেও তিনি কেরিয়ার শুরু করেন অমিতাভ বচ্চনের হাত ধরে। সহ-অভিনেতার সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করলেও বেশ কয়েক বছর সংসারের পর বিবাহবিচ্ছেদ হয় সঞ্জিদার। কেরিয়ারের পাশাপাশি কন্যাসন্তানকে নিয়ে সংসারও সামলান অভিনেত্রী।
১৯৮৪ সালের ২০ ডিসেম্বর পশ্চিম এশিয়ার কুয়েতে জন্ম সঞ্জিদার। কুয়েতে জন্ম হলেও পরে গুজরাতের আমদাবাদে চলে যান তিনি। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। আমদাবাদে স্কুল-কলেজের পড়াশোনার শেষ করার পরে কেরিয়ার তৈরি করতে মুম্বই চলে যান সঞ্জিদা।
অভিনয়ে নামার আগে কোরিয়োগ্রাফার হিসাবে কাজ করতেন সঞ্জিদা। ছোট পর্দার অভিনেত্রী হিসাবে খ্যাতি পেলেও তিনি কেরিয়ার শুরু করেন বড় পর্দার হাত ধরে।
২০০৩ সালে রবি চোপড়ার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অমিতাভ বচ্চন এবং হেমা মালিনী অভিনীত ‘বাগবান’। এই ছবিতে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান সঞ্জিদা।
জনপ্রিয় পারিবারিক ছবি ‘বাগবান’-এ অভিনয় করে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন সঞ্জিদা। ২০০৫ সালে ‘পন্নিয়িন সেলভন’ নামের একটি তামিল ছবি এবং এক বছর পর একটি কন্নড় ছবিতে অভিনয় করেন সঞ্জিদা। ২০০৬ সালে ‘কয়া হোগা নিম্মো কা’ হিন্দি ধারাবাহিকে প্রথম অভিনয় তাঁর।
‘কয়ামত’, ‘কয়া দিল মে হ্যায়’, ‘পিয়া কা ঘর প্যারা লগে’, ‘বদলতে রিস্তো কি দাস্তান’, ‘এক হসিনা থি’, ‘ইশ্ক কা রং সফেদ’, ‘লভ কা হ্যায় ইন্তেজ়ার’-এর মতো একাধিক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন সঞ্জিদা। এমনকি বহু ধারাবাহিকে অতিথি শিল্পী হিসাবেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
অভিনয়ের পাশাপাশি নাচেও পারদর্শী সঞ্জিদা। ছোট পর্দায় নাচের বিভিন্ন রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় তাঁকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজয়ী হয়েছেন তিনি।
২০০৭ সালে ছোট পর্দায় সম্প্রচারিত হয় হিন্দি ধারাবাহিক ‘কয়া দিল মে হ্যায়’। এই ধারাবাহিকে টেলি অভিনেতা আমির আলির সঙ্গে জুটি বাঁধেন সঞ্জিদা। টেলি দর্শকের মনে তাঁদের এই জুটির অভিনয় এবং সম্পর্কের রসায়ন জায়গা করে নেয়। শুধু ক্যামেরার সামনেই নয়, ক্যামেরার পিছনেও দুই তারকার সম্পর্কের বাঁধন শক্ত হতে শুরু করে।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘কয়া দিল মে হ্যায়’ ধারাবাহিকের সেট থেকেই বন্ধুত্ব শুরু হয় আমির এবং সঞ্জিদার। সেই বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে প্রেমে গড়ায়। পাঁচ বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০১২ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন দুই তারকা।
তবে ‘কয়া দিল মে হ্যায়’-এর পর আর কোনও ধারাবাহিকে আমির এবং সঞ্জিদাকে একসঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন যে, তিনি নিজেই আমিরের সঙ্গে কোনও কাজ করতে চাননি। সঞ্জিদা বলেছিলেন, ‘‘আসলে আমিরের সঙ্গে আমি সত্যিই কোনও সিরিয়াল করতে চাই না। দিনে ১৪ ঘণ্টা ধরে আমিরের সঙ্গে কাজ করতে চাই না। এর পর বাড়ি গিয়ে তো দু’জনে এতটাই ক্লান্ত হয়ে যাব যে একে অপরের সঙ্গে কথাই বলতে পারব না। তার চেয়ে বরং সারা দিন কাজের শেষে বাড়িতে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে দেখা হবে, এই ব্যাপারটাই দারুণ লাগে আমার।’’
তবে ‘কয়া দিল মে হ্যায়’-এর পরে আমির এবং সঞ্জিদাকে জুটি হিসাবে অভিনয়ের জন্য কেউ প্রস্তাবও দেননি বলে জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে সঞ্জিদার দাবি, রিয়্যালিটি শোয়ের জন্য অনেক প্রস্তাব পেয়েছিলেন তাঁরা।
‘নাচ বলিয়ে’ নামের জনপ্রিয় নাচের রিয়্যালিটি শোয়ের তৃতীয় সিজ়নের প্রতিযোগিতায় একসঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিলেন আমির এবং সঞ্জিদা। সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর মুকুট তুলে নিয়েছিলেন তাঁরা। যদিও সেই সময় তাঁদের জয় নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছিলেন অভিনেত্রী রাখি সবন্ত এবং তাঁর তৎকালীন প্রেমিক অভিষেক অবস্তি।
রাখি দাবি করেছিলেন, এই প্রতিযোগিতায় সোজা পথে নয়, ঘুরপথে বিজয়ী হয়েছিলেন আমির এবং সঞ্জিদা। যদিও এই বিতর্ক কোনও আঁচ ফেলেনি তাঁদের সাফল্যে। বরং রিয়্যালিটি শোয়ের পরবর্তী সিজ়নের সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারকা-দম্পতি। এমনকি, ২০১৫ সালে ছোট পর্দার একটি অ্যাডভেঞ্চার শোয়েও প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারকা-দম্পতি।
বিয়ের আট বছর পর ২০২০ সালে সারোগেসির মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সঞ্জিদা। তার পর থেকেই শোনা যেতে থাকে যে, আমির এবং সঞ্জিদার ছাদ আলাদা হয়ে গেছে। কন্যাসন্তানকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন অভিনেত্রী।
কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে, আমিরের সঙ্গে সঞ্জিদার নানা কারণে অশান্তি হচ্ছিল। মতের অমিল হওয়ায় দু’জনে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে সঞ্জিদা বলেছিলেন, ‘‘বিচ্ছেদ নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাই না আমি। এখন কেবল একটাই লক্ষ্য, মেয়ে যেন আমার কাজের জন্য গর্ববোধ করে। আর সেই চেষ্টাই চালাচ্ছি।’’ অন্য দিকে আমির বলেছিলেন, ‘‘সঞ্জিদা এবং আমায় নিয়ে যা যা খবর ছড়িয়েছে, সে সব নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। সামগ্রিক ভাবে বিষয়টিকে সহজ, সরল রাখতে চাই। সঞ্জিদা এবং আমাদের ছোট্ট মেয়েটির মঙ্গল চাই।’’
২০২২ সালে আইনি সিলমোহর পায় সঞ্জিদা এবং আমিরের বিবাহবিচ্ছেদ। বিচ্ছেদের পরে মেয়ের অভিভাবকত্ব লাভ করেন সঞ্জিদা। বিবাহবিচ্ছেদের পর অভিনয়জগৎ থেকে খানিকটা অন্তরালেই ছিলেন সঞ্জিদা।
একাধিক মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে সঞ্জিদাকে। ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নবাবজ়াদে’ ছবির একটি গানের দৃশ্যেও অভিনয় করেন তিনি।
২০২০ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তাইশ’ ছবিতে অভিনয় করেন সঞ্জিদা। একই বছরে মুক্তি পায় ‘কালি কুহি’ নামের একটি হিন্দি ছবি। শাবানা আজ়মির সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান সঞ্জিদা। ‘গেহরাইয়া’ নামের একটি হরর ঘরানার ওয়েব সিরিজ়ে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
বিচ্ছেদের পর এক বলি অভিনেতার সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়ে সঞ্জিদার। ২০২০ সালে ‘তাইশ’ ছবিতে হর্ষবর্ধন রানের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। ২০২৩ সালে সমাজমাধ্যমে দুই তারকা কয়েকটি ছবি পোস্ট করার পর তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে।
২০২৩ সালের জুন মাসে গুজরাতের গির জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে গিয়েছিলেন হর্ষবর্ধন। ঘুরতে যাওয়ার ছবি নিজের ইনস্টাগ্রামের পাতায় পোস্ট করেন অভিনেতা।
একই সময় গির জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে যাওয়ার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন সঞ্জিদা। ভিডিয়োয় অভিনেত্রীর কোলে ছিল তাঁর কন্যা। দুই তারকার পোস্টের মধ্যে মিল খুঁজে পেয়ে দুইয়ে দুইয়ে চার করে নেন নেটব্যবহারকারীরা। সঞ্জিদার সঙ্গে হর্ষবর্ধনের সম্পর্ক নিয়ে অভিনেতাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন যে, এ সবই রটানো হয়েছে। এই ধরনের খবর নিয়ে তিনি মাথা ঘামাতে চান না।
বিচ্ছেদের পর অভিনয় থেকে কয়েক বছরের বিরতির পর বড় পর্দায় দেখা যায় সঞ্জিদাকে। ২০২৪ সালে সিদ্ধার্থ আনন্দের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ফাইটার’। হৃতিক রোশন এবং দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় বলি অভিনেত্রী বিপাশা বসুর স্বামী এবং অভিনেতা কর্ণ সিংহ গ্রোভারকে। ‘ফাইটার’ ছবিতে কর্ণের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন সঞ্জিদা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘হীরামন্ডি’ সিরিজ়ে অভিনয় করে ৪০ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছেন তিনি। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২৫ কোটি টাকা।
ইতিমধ্যেই নিজস্ব অনুরাগী মহল তৈরি হয়েছে সঞ্জিদার। ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যাও ৪৭ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।