দীর্ঘ ৪৭ বছর পরে ২০২০ সালে ইউরোপীয় জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ব্রিটেন। বেরিয়ে গিয়েছিল বাণিজ্য জোট থেকেও।
১৯৭৩ সালে ‘ইউরোপীয় ইকোনমিক কমিউনিটি’-তে যোগ দিয়েছিল ব্রিটেন। যা ১৯৯২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর চেহারা নেয়। ২০২০ সালে সেই জোট থেকেই বেরিয়ে যান ব্রিটিশরা।
এ বার ব্রিটেনের মতোই ইউরোপীয় জোট ছাড়ার দাবি তুলেছে জার্মানির দক্ষিণপন্থী দল ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)’! ওই দলের প্রস্তাব, ব্রিটেনের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত জার্মানিরও।
তবে ‘ব্রেক্সিট’ নয়, সেই পদক্ষেপের নাম ‘ডেক্সিট’ হবে বলে দাবি করেছে এএফডি।
বিরোধী দল হওয়া সত্ত্বেও কেন এত গুরুত্ব পাচ্ছে এএফডি। প্রধান বিরোধী দল না হলেও অন্যদের পিছনে ফেলে কয়েক বছরের মধ্যে বিরোধী দলগুলির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে এএফডি।
জার্মানিতে তাদের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে বিগত কয়েক বছরে। আর সেই কারণেই তাদের তোলা দাবি প্রসঙ্গে নিজেদের মতামত দিয়েছে সরকার।
এএফডির দাবির বিরোধিতা করেছেন জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনার। তিনি জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজার জার্মানির জন্য ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’। তাই জার্মানি ইউরোপীয় জোট থেকে বেরিয়ে এলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
ইউরোপের মধ্যে বৃহত্তম অর্থনৈতিক কাঠামো রয়েছে জার্মানির। কিন্তু ইউরোপীয় জোট থেকে বেরিয়ে এলে রফতানি-নির্ভর জার্মানির জন্য তা খারাপ হবে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান।
ক্রিশ্চিয়ানের কথায়, ‘‘এটি আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে। এই কারণেই সাধারণ মানুষকে আমাদের বোঝাতে হবে যে, কেউ সরকারি নীতির সঙ্গে সহমত পোষণ করতে না-ই পারেন। তবে সম্পূর্ণ ব্যবস্থা পাল্টে ফেলার কোনও অর্থ হয় না। আমাদের উন্নতি যে নীতির উপর ভিত্তি করে, তা-ও পরিবর্তন করার কোনও কারণ নেই।’’
জার্মানিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন করার দাবি তুলে এএফডি নেতা অ্যালিস উইডেল এক ধাপ এগিয়ে, ব্রেক্সিটকে ‘জার্মানির জন্য মডেল’ হিসাবেও মন্তব্য করেন। তার নাম হবে ‘ডেক্সিট’।
একই সঙ্গে ‘ডেক্সিট’ নিয়ে গণভোটের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন উইডেল। তাঁর দাবি, জার্মানি ইউরোপীয় জোটে থাকবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত দেশের জনগণের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
এএফডির এই প্রস্তাবকে নাকচ করেছে জার্মানির রাজনৈতির মহলের অন্য একটি অংশ। দেশের অধিকাংশ শিল্পপতিও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।
জার্মানি রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক মহলের একাংশের দাবি, এএফডির দৃষ্টিভঙ্গি জার্মানির অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
এএফডির বিরোধিতা করলেও অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে জার্মানির প্রতিযোগিতা ‘যতটা হওয়া উচিত, ততটা ভাল নয়।’
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কী ভাবে জার্মানিকে আরও সমৃদ্ধ করা যায়, সে নিয়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রস্তাবনা তৈরি করবে সরকার।
জার্মানির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ নিয়ে তিনি আশাবাদী বলেও জানিয়েছেন সে দেশের অর্থমন্ত্রী। ‘খুব শীঘ্রই’ আর্থিক দিক থেকে জার্মানির উত্থান হবে বলেও আশা করছেন ক্রিশ্চিয়ান।
‘জি৭’ বা ‘গ্রুপ অফ সেভেন’ বিশ্বের সাতটি উন্নত অর্থনীতির একটি গোষ্ঠী। এই সাতটি দেশ হল— কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, ব্রিটেন এবং আমেরিকা।
উল্লেখযোগ্য যে, জার্মানিই ‘জি৭’-এর একমাত্র দেশ যার অর্থনীতি গত বছর সঙ্কুচিত হয়েছে। দেশের দু’টি বৃহত্তম ঋণদাতা ডোয়চু ব্যাঙ্ক এবং কমার্জব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, ২০২৪ সালেও অর্থনৈতিক সঙ্কোচনের মুখোমুখি হতে পারে জার্মানি। যদিও সরকার পক্ষের দাবি, চলতি বছরে অর্থনৈতিক বৃদ্ধিই হবে জার্মানির।