নভেম্বরেই মুক্তি পেয়েছে ‘দৃশ্যম’ ছবির দ্বিতীয় পর্ব। এই ছবিতে অজয় দেবগনের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন ঈশিতা দত্ত। দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়োলেও বলিপাড়ার রোশনাই থেকে নিজেকে দূরেই রেখেছেন এই বাঙালি অভিনেত্রী।
১৯৯০ সালের ২৬ অগস্ট জামশেদপুরের এক বাঙালি পরিবারে জন্ম ঈশিতার। ছোট থেকেই লাজুক প্রকৃতির ছিলেন তিনি। তাঁর দিদি তনুশ্রী দত্ত বরাবর তাঁকে অভিনয় শেখার জন্য উৎসাহ দিতেন।
জামশেদপুরের দক্ষিণ ভারত মহিলা সমাজ ইংলিশ স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন ঈশিতা। মিডিয়া স্টাডিজ় নিয়ে পড়বেন বলে কলেজে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু তাঁর মন ছিল বলিউডে আসার।
দিদির কথা মেনে অনুপম খেরের কাছে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন ঈশিতা।
২০১২ সালে ঈশিতা অভিনয় জগতে পা রাখেন। ‘চণকয়ুদু’ নামের একটি তেলুগু ছবিতে প্রথম অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
একই বছর তনুশ্রীর সঙ্গে ‘ইয়েনিদু মানাসালি’ নামের কন্নড় ছবিতে কাজ করেছিলেন ঈশিতা। কিন্তু সেই ছবি মুক্তি পায়নি।
প্রথম ছবি মুক্তির ৩ বছর পর ‘রাজা রাজেন্দ্র’ নামে আরও একটি কন্নড় ছবিতে কাজ করেন ঈশিতা।
২০১৫ সালে ‘দৃশ্যম’ ছবির প্রথম পর্ব ঈশিতার জীবনে মাইলফলক গড়ে তোলে। অজয় দেবগন, তব্বুর মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। দিদি অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত। তার উপর বক্স অফিস কাঁপানো ছবিতে অভিনয়ও করে ফেলেছিলেন তিনি। তবুও বলিপাড়ায় আর কোনও কাজ করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
ঈশিতা চটজলদি সাফল্য পাওয়ার আশায় বিশ্বাস করেন না। তিনি স্থির করে ফেলেছিলেন একেবারে গোড়া থেকেই নিজের কেরিয়ার গড়বেন তিনি। তাই ছোট পর্দায় কাজ করা শুরু করেন তিনি।
‘এক ঘর বনাউঙ্গা’, ‘কৌন হে- এক নয়া অধ্যায়’-সহ আরও অনেক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায় ঈশিতাকে।
২০১৬ সালে ‘রিস্তো কা সৌদাগর-বাজিগর’ নামের একটি হিন্দি ধারাবাহিকে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ঈশিতা। এই ধারাবাহিক তাঁর জীবনের মোড় বদলে দেয়। এই ধারাবাহিকে অভিনয় সূত্রেই বৎসল শেঠের সঙ্গে আলাপ হয়। বৎসল এই ধারাবাহিকে ঈশিতার সঙ্গে অভিনয় করতেন।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ঈশিতা এবং বৎসলের সম্পর্ক তৈরির নেপথ্যে রয়েছেন অজয় দেবগন। অজয় নাকি তাঁদের মধ্যে ঘটকের কাজ করেছেন।
২০০৪ সালে ‘টারজান: দ্য ওয়ান্ডার কার’ ছবিতে বৎসলের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন অজয়। ‘দৃশ্যম’ ছবিতে কাজ করে ঈশিতার সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল অজয়ের। তাই ‘রিস্তো কা সৌদাগর-বাজিগর’ ধারাবাহিকে ঈশিতা এবং বৎসল একসঙ্গে কাজ করা শুরু করলে নাকি অজয়-ই তাঁদের যোগাযোগ আরও বাড়িয়ে তোলেন।
ধারাবাহিক চলাকালীন প্রেমে পড়লেও তাঁদের সম্পর্কের কথা কখনও প্রকাশ্যে আনেননি ঈশিতা এবং বৎসল। বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, ধারাবাহিকের প্রযোজকের নির্দেশ ছিল, তারকারা একে অপরকে ডেট করতে পারবেন না। কেরিয়ারে প্রভাব পড়তে পারে বলে দু’জনে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন।
২০১৭ সালে মুম্বইয়ে জুহুর ইস্কনের মন্দিরে চারহাত এক করেন ঈশিতা-বৎসল। তাঁদের বিয়েতে বলিপাড়ার গুটিকতক তারকা উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন ঈশিতার নিজের দিদিই।
তনুশ্রীকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, বোনের বিয়ের সময় আমেরিকায় ছিলেন তিনি। দেশে ফেরার জন্য ভিসা পাচ্ছিলেন না। তাই বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ঈশিতা এবং বৎসলের সঙ্গে দেখা করতে মুম্বইয়ে আসেন তিনি।
২০১৭ সালে কপিল শর্মার সঙ্গে ‘ফিরঙ্গী’ ছবিতে ঈশিতা অভিনয়ের সুযোগ পেলেও এই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
ঈশিতা যখন ধীরে ধীরে নিজের কেরিয়ার তৈরির দিকে মন দিচ্ছেন, সেই সময় তনুশ্রী জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর পর পাশা উল্টে যায়। এক দিকে বলিপাড়ায় যখন ঈশিতার পরিচিতি বেড়ে উঠছিল, তখন ‘মিটু’ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তনুশ্রী।
অভিনয় জগৎ থেকে তনুশ্রী তখন শতহস্ত দূরে। নানা পটেকর এবং আলোক নাথের মতো অভিনেতার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।
২০১৯ সালে ‘দে দে প্যার দে’ ছবিতে আলোক নাথের সঙ্গে অজয় দেবগন অভিনয় করেছিলেন বলে তনুশ্রী কথা শোনাতে ছাড়েননি অজয়কেও।
অজয়কে অভিভাবকের নজরে দেখতেন ঈশিতা। দিদির এ রূপ আচরণে তাঁর সঙ্গে অজয়ের সম্পর্কে কোনও ফাটল তৈরি হয়েছে কি না, এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে ঈশিতা জানান, অজয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এত ঠুনকো নয় যে এটুকুতেই ভেঙে যাবে।
বিয়ের পর ছোট পর্দার বিভিন্ন হিন্দি ধারাবাহিকে অতিথি শিল্পী হিসাবে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে ঈশিতাকে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন রিয়্যালিটি শোতেও অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকেছেন ঈশিতা। ২০২২ সালে ‘দৃশ্যম’ ছবির দ্বিতীয় পর্ব মুক্তির পর আবার নতুন করে চর্চায় আসেন তিনি।