স্বামী থাকেন পাশের বাড়িতে। বাজার করতে যাওয়ার সময় প্রতি দিন স্বামীকে পাশ কাটিয়ে চলে যান লিন্ডা চেম্বারলেন। মাঝে মাঝে দেখা করে হালহকিকতের কথাও জেনে যান। কিন্তু লিন্ডার পরিচিত যাঁরা এই দৃশ্য দেখেছেন, তাঁরা সকলেই ভয়ে শিউরে উঠেছেন! কারণ লিন্ডার স্বামী ফ্রেড চেম্বারলেন মারা গিয়েছেন বছর আটেক আগে।
প্রায় আট বছর আগে প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ফ্রেড। কিন্তু লিন্ডা ঠিক করেন তিনি স্বামীর দেহ কবর দেবেন না। বরং সংরক্ষণ করে রাখবেন।
ফ্রেডের দেহ ‘ক্রায়োপ্রিজারভ’ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লিন্ডা।
ফ্রেডের দেহ মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠান্ডা করে তা অতি সাবধানে তরল নাইট্রোজেনের একটি বিশাল পাত্রে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘সিনেট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০ ফুট লম্বা স্টেনলেস স্টিলের চেম্বারে ফ্রেড-সহ আরও আট জন মৃত ব্যক্তির দেহ রাখা রয়েছে।
ওই একই ঘরে একই রকম চেম্বারে ফ্রেডের মতো মোট ১৭০ জনের দেহ সংরক্ষিত করে রাখা আছে।
লিন্ডা দাবি করেছেন, এই ভাবে তাঁর স্বামীর দেহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে তাঁকে আবার বাঁচিয়ে তোলা! শুনতে অবাক লাগলেও এ কথা সত্যি। ফ্রেড-সহ বাকিদের দেহ এই ভাবে সংরক্ষণ করার পদ্ধতিতে ‘ক্রায়োনিক্স’ বলে।
‘ক্রায়োনিক্স’ হল অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় মানুষের দেহকে হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা। বিশ্বাস করা হয়, এই ভাবে মৃতদেহগুলি আবার প্রাণ ফিরে পেতে পারে।
তবে বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বকে বুজরুকি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই ধরনের অনুশীলনকে মুর্খামি বলেও দাবি করেছেন অনেক বিজ্ঞানী।
১৯৬৭ সালে চিকিৎসক জেমস বেডফোর্ডের দেহটি প্রথম ‘ক্রায়োনিক্স’ পদ্ধতিতে হিমায়িত করে রাখা হয়েছিল।
২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, আমেরিকার প্রায় ২৫০ জনের দেহ এই পদ্ধতিতে সংরক্ষিত করে রাখা আছে। প্রায় দেড় হাজার মানুষ মৃত্যুর আগেই নিজেদের নাম নথিভুক্ত করে রেখেছেন।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘সিনেট’-কে লিন্ডা বলেন, ‘‘মৃত্যুর অর্থ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া। হৃদ্যন্ত্র এবং ফুসফুস কাজ করা বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে শরীরের কোষগুলি মারা গিয়েছে। তাই শরীরের অঙ্গগুলি প্রকৃতপক্ষে মরে না।’’
লিন্ডা জানিয়েছেন, তিনি আশাবাদী যে তাঁর স্বামী ফ্রেড আবার জীবিত হয়ে উঠতে পারেন। আর সেই কারণেই তিনি ‘ক্রায়োনিক্স’ পদ্ধতিকে বেছে নিয়েছেন।
লিন্ডা এবং ফ্রেড উভয়েরই ‘ক্রায়োনিক্স’ পদ্ধতি নিয়ে কৌতূহল ছিল। পরে তা বিশ্বাসের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ‘ক্রায়োনিক্স’ নিয়ে আলোচনার সূত্র ধরেই তাঁদের আলাপ।
লিন্ডা বলেছেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি সংস্থা শুরু করা যা মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। মানুষের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিতে পারে।’’
‘ক্রায়োনিক্স’ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করার জন্য একটি সংস্থাও শুরু করেছেন লিন্ডা। সেই সংস্থার সিইও ম্যাক্স মোরের কথায়, ‘‘আমরা এমন সব শরীর নষ্ট করে দিই যা সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব। কিন্তু সেগুলি আমরা মাটির তলায় রেখে দিচ্ছি। যা পোকামাকড় এসে নষ্ট করে দিচ্ছে।’’
কেউ নিজের বা নিজের প্রিয় জনের শরীর সংরক্ষণ করে রাখতে চাইলে তাঁকে লিন্ডার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তবে খরচ করতে হবে আড়াই লক্ষ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা দু’কোটি টাকারও বেশি।
লিন্ডা জানিয়েছেন, তিনি মৃত্যুকে খুব ভয় পান এবং সারাজীবন বেঁচে থাকতে চান। লিন্ডার এই সব অদ্ভুত ধারণা এবং কাণ্ডের জন্য অনেকে তাঁকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়েছেন।