‘পাঠান’ ছবি মুক্তির আগেই বিতর্কে জড়িয়েছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। বলা ভাল, বিতর্কে জড়িয়েছিল একটি গান এবং গেরুয়া রঙের পোশাক। এই ‘বেশরম রং’ গানের নৃত্য পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বৈভবী মার্চেন্ট। বলিউডে যে সময় ফারহা খান, সরোজ খানের মতো কোরিয়াগ্রাফাররা চুটিয়ে কাজ করছেন, সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলেন বৈভবী। প্রথম ছবিতে কোরিয়োগ্রাফি করেই ঝুলিতে ভরেছিলেন পুরস্কার। পেয়েছিলেন ভূরি ভূরি প্রশংসাও। এ ভাবে সাফল্য ছুঁয়েই পথচলা শুরু করেন বৈভবী।
১৯৭৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে জন্ম বৈভবীর। তাঁর বাবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বৈভবীর ঠাকুরদা বি হীরালাল এবং কাকা চিনি প্রকাশ কোরিয়োগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বলিউডে বহু বিখ্যাত গানে কোরিয়োগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন এই দু’জন।
বি হীরালাল ক্ল্যাসিক্যাল নাচে পারদর্শী ছিলেন। সরোজ খানের শিক্ষাগুরু ছিলেন তিনি। মাঝেমধ্যে ঠাকুরদার কাছে ক্ল্যাসিক্যাল নাচের তালিম নিতেন বৈভবী।
‘জুম্মা চুম্মা’ গানের মতো বিখ্যাত গানের কোরিয়োগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন চিনি প্রকাশ। বৈভবীকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছিলেন চিনি প্রকাশ। তিনি যখন কোনও কোরিয়োগ্রাফি করতেন, তখন তাঁর সহকারী হিসাবে পাশে থাকতেন বৈভবী।
পশ্চিমি নৃত্য থেকে শুরু করে কত্থক, ভরতনাট্যম— অনেক ধরনের নাচ শিখেছিলেন বৈভবী। ১৯৯৯ সালে বলিউডে প্রথম কোরিয়োগ্রাফি করেন তিনি। তাঁর প্রথম কাজ ছিল সলমন খান এবং ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের সঙ্গে। স়ঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘হম দিল দে চুকে সনম’-এ ‘ঢোলি তারো’ গানটি ব্যবহৃত হয়। এই গানটির কোরিয়োগ্রাফি করেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিলেন বৈভবী।
কোরিয়োগ্রাফির পাশাপাশি অভিনয়েও হাতেখড়ি হয়েছিল বৈভবীর। ২০০০ সালে ‘স্নেহপূর্বম অন্না’ নামে একটি মালয়ালম ছবিতে মু্খ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় বৈভবীকে। কিন্তু ‘ঢোলি তারো’ গানের জনপ্রিয়তার পর পাকাপাকি ভাবে কোরিয়োগ্রাফি নিয়েই কেরিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বৈভবী।
এর পর বৈভবীর কাছে একের পর এক কাজের প্রস্তাব আসতে থাকে। ‘লগান’ ছবিতেও কাজ করেছিলেন তিনি। তবে, তাঁর কেরিয়ারে মাইলফলক গড়ে তোলে ‘দেবদাস’ ছবিটি। সরোজ খানের সঙ্গে তিনি কোরিয়োগ্রাফি করেছিলেন এই ছবিতে।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, ‘দেবদাস’ ছবিতে মাধুরী দীক্ষিত অভিনয় করেছিলেন বলেই সরোজ খানকে কোরিয়োগ্রাফের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এমনিতে সঞ্জয় লীলা ভন্সালী তাঁর বেশির ভাগ ছবিতে বৈভবীর সঙ্গেই কাজ করতেন।
যশরাজ ফিল্মসেরও প্রথম পছন্দ বৈভবীই। সেই সময় ফারহা খান কোরিয়োগ্রাফ থেকে সরে গিয়ে ছবি পরিচালনার দিকে মন দেন। সরোজ খানও একা হাতে সব কাজ সামলাতে পারছিলেন না। বহু কাজ তাঁকে সময়ের অভাবে ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল।
বৈভবীর বাজার রমরমিয়ে উঠেছিল। তবে, তাঁর কাজ করার ধরন নিয়ে কটাক্ষ করেন সরোজ। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, তাঁর সঙ্গে এক জুনিয়র সহকর্মী কাজ করতেন। তিনি বৈভবীর সঙ্গেও কাজ করেছিলেন কিছু দিন। সহকর্মী এসে বৈভবীর কাজ করার ধরন জানিয়েছিলেন সরোজকে।
সরোজের দাবি, বৈভবীর নিজস্ব কোনও দক্ষতা নেই। তাঁর সহকারী কোরিয়োগ্রাফারদের কথা অনুযায়ী তিনি নাচের ‘স্টেপ’ যোগ করেন। কখন, কোন স্টেপ যোগ করলে ভাল লাগবে সে বিষয়েও কোনও ধারণা নেই বৈভবীর।
বৈভবীর সঙ্গে কাজ করতে করতে তাঁর সঙ্গে মেলামেশা বাড়তে থাকে সঞ্জয়ের। বন্ধুত্ব গড়িয়ে যায় প্রেমের সম্পর্কে। গোড়ার দিকে তাঁরা নিজেদের সম্পর্ক আড়ালে রাখার চেষ্টা করলেও পরে বহু অনুষ্ঠানে বৈভবী এবং সঞ্জয়কে একসঙ্গে দেখা যায়।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, গোপনে বিয়েও করেছিলেন সঞ্জয় এবং বৈভবী। কিন্তু ২০০৮ সালে তাঁদের সম্পর্কে ছেদ পড়ে। এই প্রসঙ্গে বৈভবী জানান যে, সঞ্জয়ের সঙ্গে তাঁর মতভেদ হচ্ছিল। বহু চেষ্টা করেও তাঁদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়নি।
অন্য দিকে বৈভবীর সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে স্পষ্ট ভাবে কিছু বলেননি সঞ্জয়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বৈভবী আমার খুব ভাল বন্ধু। ওর সঙ্গে কাটানো অনেক ভাল মুহূর্ত রয়েছে আমার জীবনে।’’
ছবিতে কোরিয়োগ্রাফির পাশাপাশি ‘মার্চেন্টস’ নামে একটি শোয়ের আয়োজন করেন বৈভবী। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠান করেন তিনি।
ইনস্টাগ্রামে বৈভবীর অনুরাগী সংখ্যাও কম নয়। এখনও পর্যন্ত দেড় লক্ষের বেশি অনুরাগী রয়েছে তাঁর।