রোহিত শেট্টি পরিচালিত ‘গোলমাল’ ফিল্ম সিরিজ় বলিউডের কমেডি ঘরানার মধ্যে অন্যতম। ২০০৬ সালে এই সিরিজ়ের প্রথম ছবি মুক্তি পায়। এই ছবির মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অজয় দেবগন, আরশাদ ওয়ারসি, শরমন জোশী, তুষার কপূর, রিমি সেন, পরেশ রাওয়াল প্রমুখ। তবে, যে তারকার অভিনয় সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল, তিনি সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়।
‘গোলমাল’ ছবির প্রথম পর্ব ‘গোলমাল: ফান আনলিমিটেড’-এ এক অন্ধ বৃদ্ধার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেনসুস্মিতা। ছবিতে সুস্মিতার অভিনয় দেখে প্রশংসায় মুখর হয়েছিল দর্শক। তখন থেকেই তাঁর জনপ্রিয়তা তৈরি হতে থাকে। কিন্তু সুস্মিতা ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন বহু বছর ধরে।
এত বছর বলি ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার পরেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় সুস্মিতাকে। নিজের কেরিয়ার নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে মুখও খুলেছিলেন তিনি। সুস্মিতার দাবি, তিনি একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য যতটা পরিশ্রম করেন, সে তুলনায় পারিশ্রমিক পান না। তাই উপার্জনের জন্য এমন চরিত্রেও অভিনয় করেছেন যা তার পছন্দ নয়।
কলকাতায় জন্ম হলেও সুস্মিতার পড়াশোনা দিল্লিতে। ১৫ বছর বয়সে থিয়েটার দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। থিয়েটার নিয়ে কেরিয়ারে এগোবেন বলে নয়াদিল্লির নামকরা থিয়েটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিলেন সুস্মিতা।
থিয়েটার নিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুবাদে রত্না পাঠক শাহ, দীপা শাহির মতো বলি তারকার সঙ্গে পরিচিতি গড়ে ওঠে সুস্মিতার। তাঁরা সকলেই সুস্মিতার সহপাঠী ছিলেন।
ইংরেজি রপ্ত করে ফেলেলেও হিন্দি ভাষায় দক্ষ ছিলেন না সুস্মিতা। তাই থিয়েটার করার সময় অনেকে হাসিঠাট্টা করতেন সুস্মিতাকে নিয়ে।
কারও সঙ্গে হিন্দিতে বেশি ক্ষণ কথা বলতে পারতেন না সুস্মিতা। এমনকি, তাঁর হিন্দি উচ্চারণও স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু ১৯৮৩ সালে প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করার পর হিন্দি ভাষায় পটু হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
এক নাগাড়ে থিয়েটারে অভিনয় করেছিলেন সুস্মিতা। তার পাশাপাশি হিন্দি ধারাবাহিক এবং ছবিতেও অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। বহু ধারাবাহিকে অভিনয় করলেও ‘করমচাঁদ’ ধারাবাহিকে তাঁর চরিত্র বহুল চর্চিত ছিল।
‘করমচাঁদ’ ধারাবাহিকে ‘কিটি’ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল সুস্মিতাকে। এমন একটা সময় এসেছিল যখন কেউ সুস্মিতাকে তাঁর আসল নামে চিনতেন না। সকলে কিটি বলেই সম্বোধন করতেন সুস্মিতাকে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সুস্মিতা জানিয়েছিলেন যে, ‘করমচাঁদ’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার পর মনে মনে খুব হেসেছিলেন তিনি। সুস্মিতার মনে হচ্ছিল, এত দিন থিয়েটারে অভিনয় করার পর শেষ পর্যন্ত তিনি এ রকম এক বোকা মেয়ের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেন?
‘ঘরজামাই’, ‘খলনায়ক’, ‘দিললাগি’, ‘আজা নাচলে’, ‘গুড বয় ব্যাড বয়’, ‘দোস্তানা’, ‘বাত্তি গুল মিটার চালু’র মতো অসংখ্য হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন সুস্মিতা। কিন্তু ‘গোলমাল’ চরিত্রে তাঁর অভিনয় এখনও রয়ে গিয়েছে দর্শকের মনে।
সুস্মিতার দাবি, তিনি ছোট চরিত্রে অভিনয় করলেও সেই চরিত্রটি তিনি পর্দায় এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন যেন দর্শকের মনে তা ছাপ ফেলতে পারে। ছোটখাটো চরিত্র হলেও সুস্মিতা সেখানে নিজের ১০০ শতাংশ পারফর্ম্যান্স দিয়ে থাকেন।
অভিনয়ের প্রতি সুস্মিতার এতটাই ভালবাসা যে, একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য দীর্ঘ দিন স্নানও করেননি তিনি। অপরিষ্কার চুল এবং মাটিমাখা বিনুনি পরেছিলেন বহু দিন। শুটিংয়ের ফাঁকেও কখনও সেই বিনুনি খুলতে দেখা যায়নি তাঁকে।
হিন্দি ছবি এবং ধারাবাহিকে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার দায়িত্বও নেন সুস্মিতা। কিন্তু তিনি মনে করেন যে, প্রযোজনায় নামা তাঁর সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত। তার কারণও জানিয়েছিলেন তিনি।
একটি প্রজেক্টের জন্য প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন সুস্মিতা। কিন্তু কোথায় কী ভাবে টাকা লাগাতে হয়, কখন খরচ বাঁচানো যায়— সে সব বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তাই প্রযোজনা থেকে আবার অভিনয়ে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
অভিনয়ে নামার পর পরিচালক সুধীর মিশ্রের সঙ্গে আলাপ হয় সুস্মিতার। সেই আলাপ গড়ায় ছাঁদনাতলা পর্যন্ত। কিন্তু সুস্মিতার সঙ্গে সুধীরের সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি।
বিবাহবিচ্ছেদের পর আবার প্রেমে পড়েন সুস্মিতা। রাজপরিবারের সদস্য রাজা বুন্দেলাকে বিয়ে করেন তিনি। ‘শোলা অওর শবনম’, ‘স্বর্গ’ ছাড়াও আরও কয়েকটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রাজা।
পরবর্তী কালে প্রযোজনায় নামেন রাজা। কিন্তু অভিনয়ের সঙ্গে আর যুক্ত থাকেননি তিনি। অভিনয় ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতি করতে শুরু করেন।
রুদ্রাংশ এবং রুদ্রানুজ নামে দুই পুত্রসন্তান রয়েছে সুস্মিতা এবং রাজার। অভিনয়ের পাশাপাশি বইও লেখেন সুস্মিতা।
বর্তমানে হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন সুস্মিতা। হিন্দি ছবিতেও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
ইনস্টাগ্রামে নিজের লেখা বই এবং ধারাবাহিকের প্রচার করতে দেখা যায় সুস্মিতাকে। ইনস্টাগ্রামে অভিনেত্রীর অনুরাগী সংখ্যা ১৭ হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে।