কালোরঙা পোশাকের উপর সোনালি রং যেন ঝিলিক মারছে। মাথাতেও রয়েছে জাল জাল সোনালি রঙের কাজ করা কালো রঙের ওড়না। এমনই এক পোশাক পরে সমাজমাধ্যমে হইচই ফেলে দিয়েছেন বলি অভিনেত্রী অমায়রা দস্তুর।
দুবাইয়ে একটি ফোটোশুট করার পর কালো গাউন পরে কয়েকটি ছবি নিজের ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন অমায়রা। তার পর থেকেই অভিনেত্রীকে নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি শুরু হয়েছে সমালোচনাও।
অনুরাগীদের একাংশ অমায়রার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও তাঁর পোশাক নিয়ে ধেয়ে এসেছে কটাক্ষ। কেউ কেউ আবার অভিনেত্রীকে খুব তাড়াতাড়ি পর্দায় দেখতে চেয়েছেন।
এক দশক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার পর হাতে গুনে কুড়িটি ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায়নি অমায়রাকে। তবে, মাদককাণ্ড থেকে শুরু করে ‘মিটু’ বিতর্কের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে নায়িকার।
হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যে স্বজনপোষণের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে তা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন অমায়রা। তিনি বলেন, ‘‘কারও পদবি চেনা পরিচিত হলে হিন্দি ফিল্মজগতে কাজ পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। প্রথম ছবি পেতেও অসুবিধা হয় না।’’
তারকাসন্তানরা কোনও কোনও সময় অডিশনও দেন না বলেও দাবি করেন অমায়রা। তিনি বলেন, ‘‘বাইরে থেকে যাঁরা বলিউডে কাজ করতে আসেন, তাঁরা বেশি সম্মান পাওয়ার যোগ্য। কারণ নিজের ক্ষমতায় তাঁরা ইন্ডাস্ট্রিতে দু’পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছেন।’’
তারকাসন্তান ছাড়া বহিরাগত এবং নবাগতদের কোনও রকম সুরক্ষা দেওয়া হয় না বলেওঅভিযোগ করেন অমায়রা। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম ছবি যদি কোনও কারণে ফ্লপ হয়ে যায়, তা হলে দ্বিতীয় ছবির জন্য কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। এমনকি, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্ধকার দিক সম্পর্কেও নবাগতদের সতর্ক করা হয় না।’’
১৯৯২ সালের ৭ মে মুম্বইয়ে জন্ম অমায়রার। সেখানেই স্কুল, কলেজের পড়াশোনা করেছেন তিনি। শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। ছোট থেকে সিনেমা দেখা তাঁর নেশা ছিল।
স্কুলে পড়াকালীন নাটকে অভিনয় করতেন অমায়রা। ১৬ বছর বয়স থেকে মডেলিং শুরু করেন তিনি। অমায়রা বাণিজ্যে স্নাতক।
পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থার জন্য মডেলিং করতেন অমায়রা। এমনকি নামী ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনের জন্য টেলিভিশনে প্রচারের মুখও হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২০১৩ সালে ‘ইশাক’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় কাজ শুরু করেন অমায়রা। তার পর তামিল এবং তেলুগু ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
প্রথম বলি ছবিতে অভিনয়ের দু’বছর পর দক্ষিণী ফিল্মজগতেও কাজ শুরু করেন অমায়রা। ২০১৫ সালে ‘অনেগান’ নামের একটি তামিল ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। একই বছর সোনু নিগমের সঙ্গে একটি মিউজ়িক ভিডিয়োতে কাজ করেন অভিনেত্রী।
২০১৭ সালে জ্যাকি চ্যানের বিপরীতে ‘কুং ফু যোগা’ ছবিতে অভিনয় করেন অমায়রা। তামিল, তেলুগু ভাষার পাশাপাশি ফরাসি এবংয গুজরাতি ভাষাও শিখেছিলেন তিনি।
দক্ষিণী অভিনেত্রী লুভিয়েনা লোধ তাঁর ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে জানান যে, মাদক পাচারের সঙ্গে তাঁর স্বামী যুক্ত থাকার কারণে বিচ্ছেদ দিতে চান তিনি। সেই ভিডিয়োতে অমায়রারও নাম উল্লেখ করেন লুভিয়েনা।
মহেশ ভট্টের ভাইপো সুমিত সাভারওয়ালের স্ত্রী ছিলেন লুভিয়েনা। ইনস্টাগ্রামে ভিডিয়ো পোস্ট করে লুভিয়েনা দাবি করেন যে, বলিপাড়ার বহু তারকা এবং পরিচালককে মাদক বিক্রি করেন সুমিত। এমনকি, অমায়রাকেও মাদক বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন লুভিয়েনা।
যদিও মাদক কেনার সব অভিযোগ উড়িয়ে দেন অমায়রা। তিনি দাবি করেন যে, ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর নাম খারাপ করার জন্য মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হয়েছে।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, মায়ের উপর রাগ করে নাকি নিজেকেই আঘাত করেছিলেন অমায়রা। বান্ধবীর বাড়িতে থাকাকালীন তাঁর মাকে বার বার ফোন করছিলেন নায়িকা। কিন্তু তাঁর মা ফোন ধরছিলেন না।
রাগের বশে কাচের টেবিলে হাত মুঠো করে সজোরে আঘাত করেন অমায়রা। এই দুর্ঘটনায় কব্জিতে তিনি এতটাই চোট পান যে, এক বছর ইংল্যান্ডে তাঁর চিকিৎসা চলে।
আমিষ খাবার খেতে বরাবর পছন্দ করতেন অমায়রা। কিন্তু ইউটিউবে একটি ভিডিয়োতে যখন তিনি মাংস কাটার প্রক্রিয়া দেখেন, তার পর থেকে সম্পূর্ণ নিরামিষাশী হয়ে যান তিনি। এমনকি, রান্নায় পেঁয়াজ পর্যন্ত খান না তিনি।
দশ বছর বলিপাড়ায় থেকে ঋষি কপূর, সইফ আলি খান, রাজকুমার রাও, কঙ্গনা রানাউত, মৌনি রায়ের মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছেন তিনি। নেটমাধ্যমে তাঁর অনুরাগী সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ৩১ লক্ষের গণ্ডি পার করেছে।
‘জাজমেন্টাল হ্যায় কয়া’, ‘মেড ইন চায়না’, ‘রাজমা চাওল’, ‘কোই জানে না’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে অমায়রাকে। ওয়েব সিরিজ়েও কাজ করেছেন তিনি। ‘দ্য ট্রিপ ২’, ‘তাণ্ডব’-এর মতো ওয়েব সিরিজ়েও অভিনয় করেছেন তিনি। বর্তমানে প্রসিদ্ধ পোশাকশিল্পীদের সঙ্গে ফ্যাশন শোয়ে কাজ করেন অমায়রা।