ইন্ডাস্ট্রিতে হাতেখড়ি হওয়ার আগে থেকেই পাপারাৎজ়িদের ক্যামেরার লেন্স তাক করে থাকে অজয় দেবগন এবং কাজলের কন্যা নায়সা থেকে শুরু করে শ্রীদেবীর কন্যা খুশি কপূরের মতো তারকাসন্তানদের দিকে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে পর পর দু’টি ছবিতে অভিনয় করার পরেও আলোর রোশনাই থেকে দূরে রয়েছেন গোবিন্দের কন্যা টিনা আহুজা। টিনাকে নিয়ে মাতামাতি নেই পাপারাৎজ়িদেরও। এমনকি, বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, কন্যার জন্মের কথাও ইন্ডাস্ট্রির সকলের কাছ থেকে গোপন রেখেছিলেন গোবিন্দ।
নব্বইয়ের দশকের বলিপাড়ার সিনেমাজগৎ। সঞ্জয় দত্ত, সলমন খান, শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমার অভিনয় করলেও একের পর এক হিট ছবি দর্শককে উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন গোবিন্দ। ১৯৮৯ সালে ১৬ জুলাই মুম্বইতে জন্ম টিনার। গোবিন্দ এবং সুনীতার প্রথম সন্তান তিনি। কিন্তু এই সুখবর কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাননি অভিনেতা।
তখন সাফল্যের সূর্য সবে গোবিন্দের কেরিয়ারে দেখা দিয়েছে। সন্তান হওয়ার খবর জানাজানি হয়ে গেলে পাছে তাঁর জনপ্রিয়তায় আঁচ পড়ে, তা-ই গোপন করে রেখেছিলেন টিনার জন্মের কাহিনি। কিন্তু টিনার প্রথম জন্মদিনে সেই খবর ফাঁস হয়ে যায়। গোবিন্দ যা ভয় পেয়েছিলেন, তা অবশ্য হয়নি। বরং আগের থেকে আরও বেশি যশ-খ্যাতিতে ভরে ওঠে অভিনেতার জীবন।
টিনার আসল নাম নর্মদা। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গোবিন্দের কন্যা। পড়াশোনা শেষ করার করার পাশাপাশি অভিনয় নিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়াও শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। কিশোর নমিত কপূর, আনন্দ মিশ্র এবং বিদুর চক্রবর্তীর কাছে অভিনয় শিখেছিলেন নর্মদা। তার পর লন্ডন ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করে দেশে ফেরেন। পাশাপাশি ফ্যাশন ডিজ়াইনিং নিয়েও পড়েছেন তিনি।
২০০৭ সালে একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সলমন খানের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল নর্মদাকে। বলিপাড়ায় চর্চা শুরু হয়ে যায় যে, সলমনের হাত ধরেই ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে চলেছেন নর্মদা। সকলে অধীর আগ্রহে সলমন এবং নর্মদার জুটিকে পর্দায় দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু নর্মদার পরিবর্তে দেখা গেল এক অন্য মুখ, এক ভিন্ন তারকাকন্যাকে।
২০১০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘দবং’। এই ছবিতে সলমনের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় শত্রুঘ্ন সিন্হার কন্যা সোনাক্ষীকে। কিন্তু হঠাৎ এই মুখবদলের কারণ কী? বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, গোবিন্দ যখন রাজনীতি থেকে দূরে সরে এসে আবার হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন, তখন ‘পার্টনার’ ছবিতে গোবিন্দকে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন সলমন। সেই মুহূর্তে দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও বেড়ে ওঠে। সেই বন্ধুত্বের খাতিরে সলমন তাঁর নিজের ছবির মাধ্যমে গোবিন্দের কন্যাকে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইছিলেন। কিন্তু গোবিন্দ নাকি মাঝপথে বেঁকে বসেন।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, ‘পার্টনার’-এর পর আরও একটি ছবিতে গোবিন্দকে অভিনেতা হিসাবে চেয়েছিলেন সলমন। কিন্তু ছবির চিত্রনাট্য পছন্দ না হওয়ায় সলমনের প্রস্তাব সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিলেন গোবিন্দ। অনেকে মনে করেন, সলমনের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন বলেই গোবিন্দের কন্যাকে নিজের ছবিতে কাজ করার সুযোগ দেননি সলমন।
গোবিন্দ তখন আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে, অভিনেতার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা থেকেই অভিনয়ে হাতেখড়ি হবে নর্মদার। প্রচারের জন্য সবসময় তাঁর কন্যাকে নিয়েই ঘুরে বেড়াতেন গোবিন্দ। কিন্তু গোবিন্দের প্রযোজনা সংস্থা নির্মিত প্রথম ছবি ফ্লপ হয়।
পরিচালক লভলি সিংহ অবশ্য নর্মদাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ‘মনচলি’ ছবিতে বীজেন্দ্র সিংহের বিপরীতে কাজ করার কথা ছিল নর্মদার। কিন্তু পরিচালক এবং প্রযোজকের মধ্যে মতানৈক্যে এই ছবির কাজ থেমে যায়।
অবশেষে ২০১৫ সালে প্রথম ছবি মুক্তি পায় গোবিন্দের কন্যার। ছবির প্রয়োজনে নিজের নাম বদলে টিনা রাখেন তিনি। ‘সেকেন্ড হ্যান্ড হাজব্যান্ড’ নামের একটি কম বাজেটের ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি। ছবির প্রচারের জন্য কপিল শর্মার রিয়্যালিটি শোয়ে হাজির হয়েছিলেন গোবিন্দ এবং টিনা। কিন্তু শো শুরু হওয়ার ঠিক আগে দু’জনে সেট ছেড়ে বেরিয়ে যান।
শোয়ে কী কী বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হবে, সব কিছু নিয়ে গোবিন্দ এবং টিনার সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছিলেন কপিল। কিন্তু হঠাৎ লক্ষ করেন যে, কাউকে কিছু না জানিয়ে সেট থেকে উধাও হয়ে গিয়েছেন দু’জনে।
পরে কপিল জানতে পারেন যে, গোবিন্দ এবং টিনার সঙ্গে ওই শোয়ের অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল ‘সেকেন্ড হ্যান্ড হাজ়ব্যান্ড’ ছবির আরও এক অভিনেত্রী গীতা বসরার। টিনা চাইছিলেন যে, শোয়ের মূল আকর্ষণ যেন তিনি নিজে হন। গীতার আসার খবর আগে থেকে জানতেনও না তিনি। এই বিষয়ে জানার সঙ্গে সঙ্গে বাবার সঙ্গে সেট ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি।
‘সেকেন্ড হ্যান্ড হাজব্যান্ড’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রথম ছবি ফ্লপ হওয়ার পর কাজের কোনও প্রস্তাবও পাচ্ছিলেন না টিনা। তাই গোবিন্দের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত দুবাই চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে আবার অভিনয় নিয়ে ঘষামাজা করতে থাকেন টিনা।
দুবাইয়ে থাকাকালীন ‘জিন্দেগি কা রহস্য’ নামের একটি ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন টিনা। কিন্তু সেই ছবিও মুখ থুবড়ে পড়ে। পরে অবশ্য একটি মিউজ়িক ভিডিয়োতে কাজ করেছিলেন তিনি। ‘ইসমে তেরা ঘাটা’ গান গেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা গায়ক গজেন্দ্র বর্মার একটি মিউজ়িক ভিডিয়োতে অভিনয় করেন টিনা। ‘মিলো না তুম’ গানটির এই ভিডিয়ো প্রচার করেছিলেন গোবিন্দ নিজেও।
২০১৯ সালে গজেন্দ্রের মিউজ়িক ভিডিয়োতেই শেষ কাজ করেন টিনা। তার পর বলিপাড়া থেকে উধাও হয়ে যান তিনি। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, গোবিন্দের ‘অপেশাদার’ আচরণের জন্যই টিনাকে কেউ কাজ দেন না। কানাঘুষো শোনা যায় যে, সকাল ৮টায় কোথাও শুটিংয়ের কথা থাকলে সেখানে নাকি বিকেলে গিয়ে পৌঁছতেন অভিনেতা। তাঁর কন্যাও সেটে দেরি করে আসবেন বলে অনুমান করে নেন কেউ কেউ।
গোবিন্দের অনুরাগীদের মতামত আবার ভিন্ন। তাঁদের বক্তব্য, গোবিন্দ এক কালে বহু জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর সমসাময়িক তারকাদের সন্তানরা ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু গোবিন্দের কন্যা যেন অভিনয় জগতে নাম না করতে পারেন, সেই কারণে তাঁকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে।
তবে, ইতিমধ্যে টিনার অনুরাগী মহলও তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ইনস্টাগ্রামে গোবিন্দ-কন্যার অনুরাগী সংখ্যা ৭ লক্ষ ৫১ হাজার।