‘সংসার’ ছবিটির কথা মনে পড়ে? ৯০-এর দশকে ফ্যামিলি ড্রামা নির্ভর সিনেমার মধ্যে এই ছবি বেশ জনপ্রিয় হয়।
রেখা, অনুপম খের, রাজ বব্বরের পাশাপাশি যিনি অভিনয়ের মাধ্যমে সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন, তিনি আর কেউই নন, অর্চনা জোগলেকর।
দূরদর্শন টেলিভিশন চ্যানেলে ‘ফুলবন্তী’ নামে একটি জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিক দেখানো হত। ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে ছিলেন অর্চনা।
ঊষা মঙ্গেশকর প্রযোজিত এই ধারাবাহিকে অর্চনা এক নৃত্যশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তাঁর কণ্ঠে লতা মঙ্গেশকরের গান।
হিন্দি ধারাবাহিক এবং বলিউডের বিভিন্ন সিনেমায় অভিনয় করা ছাড়াও অর্চনা ওড়িয়া, মরাঠি সিনেমা জগতে জনপ্রিয় মুখ ছিলেন।
এমনকি, তাঁর কেরিয়ারের শুরু ওড়িয়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির হাত ধরেই। ছবির নাম ‘সুনা চড়েহি’।
বাদ যায়নি বিজ্ঞাপন সংস্থাও। দূরদর্শন চ্যানেলে অভিনেত্রীর ‘পান পসন্দ’ ক্যান্ডির বিজ্ঞাপন সাড়া ফেলেছিল।
মাধুরী ও শ্রীদেবীকে টেক্কা দেওয়ার মতো সৌন্দর্য ছিল তাঁর। তাই অর্চনার জনপ্রিয়তাও ছিল বেশি।
নাগপুরে জন্ম হলেও মুম্বইয়েই তাঁর বড় হয়ে ওঠা। বাবা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। মায়ের সঙ্গেই বেশির ভাগ সময় কাটাতেন তিনি।
নাচের প্রতি তাঁর আগ্রহ মায়ের কারণেই। মুম্বইয়ে মেয়ের নামেই নাচের একটি স্কুল খোলেন অর্চনার মা।
কত্থক নাচে পারদর্শী অর্চনা থিয়েটারেও জনপ্রিয়তা লাভ করেন। মুম্বইয়ের এক ট্যালেন্ট শো-তে তাঁর পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হন বিচারকেরা।
একে একে আসতে থাকে সিনেমায় অভিনয় করার প্রস্তাব। খুব কম সময়েই সাফল্যের শিখরে পৌঁছন তিনি।
‘স্ত্রী’ নামের একটি ওড়িয়া ছবির শ্যুটিং চলাকালীন এক ভক্ত দেখা করতে চান অর্চনার সঙ্গে। ক্লান্ত থাকার কারণে দেখা করতে পারবেন না বলে জানান তিনি।
তখনই অর্চনাকে যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয়। আদালতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর প্রায় দশ বছর ধরে এই মামলা চলে।
অবশেষে অভিযুক্তকে ১৮ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হলেও এই ঘটনা অর্চনার জীবনে গভীর রেখাপাত করে।
সিনেমা জগতে সুরক্ষার অভাব বোধ করায় তিনি তাঁর জীবনের যশ-খ্যাতি পিছনে ফেলে বিয়ে করে আমেরিকায় পাড়ি দেন। সেখানেই একটি নাচের স্কুল খোলেন তিনি।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর নাচের স্কুল থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বহু দিন অভিনয় থেকে দূরত্ব বজায় রেখে নাচ নিয়েই মেতে থাকতেন অর্চনা।
২০১২ সালে আবার বড় পর্দায় ফিরে আসেন অর্চনা। ‘ম্যারেড ২ আমেরিকা’ ছবিতে জ্যাকি শ্রফ, শ্বেতা তিওয়ারি, রঘুবীর যাদবের সঙ্গে কাজ করেন তিনি।
দুর্ভাগ্যবশত এত বড় মাপের অভিনেতা থাকা সত্ত্বেও সিনেমাটি ফ্লপ করেছিল। তার পর আর কোনও ছবিতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি।
কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, ওই ছবির পরিচালকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিনি। তাঁর স্বামীকে নাকি ডিভোর্স দিয়েছেন অনেক দিন আগেই।
তবে, অর্চনা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন এতটাই গোপনে রাখেন যে, পাপারাৎজিরা এই বিষয়ে কোনও খোঁজ পাননি।