ছিল বিশাল বড় হ্রদ। তাতে টলটল করত জল। ঘুরে বেড়াত বড় সামুদ্রিক মাছ। কিন্তু কয়েক দশকের ব্যবধানেই ‘ভ্যানিশ’ সেই হ্রদ। বদলে বেরিয়ে এল কাঠফাটা মাটি, ধূ ধূ মরুভূমি। ধারেকাছে জলের চিহ্নটুকুও অবশিষ্ট নেই। কথা হচ্ছে আরল হ্রদের।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে। উষ্ণায়নের কুফল নিয়ে বিজ্ঞানী-পরিবেশবিদদের নানাবিধ পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ নতুন নয়।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে প্রায় দেড় ডিগ্রি বেশি।
কিন্তু উষ্ণায়নের এই ধরনের প্রতিকূল প্রভাব স্পষ্ট হওয়ার এক দশকেরও বেশি আগে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে আরল।
বিশাল আয়তন জু়ড়ে থাকার কারণে আরল হ্রদকে সমুদ্রের সঙ্গেও তুলনা করা হত। বলা হত আরল সাগর। কিন্তু কাজাখস্তান এবং উজবেকিস্তানের মধ্যে থাকা সেই বদ্ধ হ্রদের জল শুকিয়ে গিয়েছে ২০১০ সাল নাগাদ।
এখন সেখানে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে ধূ ধূ প্রান্ত। গাছপালাও বিশেষ নেই।
৬৮,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল আরল সাগর। শুধু তাই নয়, এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম বদ্ধ জলাশয় ছিল।
আরল সাগর উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৪৩৫ কিলোমিটার এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে ২৯০ কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত ছিল।
কিন্তু ষাটের দশক থেকে ধীরে ধীরে আরল সাগর সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। আরল ‘অন্তর্ধান’ রহস্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিল আমেরিকার গবেষণা সংস্থা নাসা-ও।
বিজ্ঞানীদের দাবি, যে নদীগুলি থেকে এই হ্রদে জল আসত, সেগুলির মুখ সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া (তখনও উজবেকিস্তান তৈরি হয়নি) সেচ প্রকল্পের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার পর প্রথম সঙ্কট দেখা যায় আরল সাগরে।
কৃষিজমি তৈরির জন্য সির দারিয়া এবং আমু দারিয়া নামের ওই নদীগুলোর মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার পর জলের প্রবাহ কমে যায়।
অবৈজ্ঞানিক ভাবে খাল কাটার কারণে আরল সাগরের জলরাশির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
অন্য দিকে, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবও পড়ে আরল সাগরে। দুই কারণে কয়েক দশকেই বাষ্পীভূত হয়ে যায় আরল সাগরের জল।
হ্রদটির কিছু অংশ বাঁচানোর শেষ প্রচেষ্টা হিসাবে কাজাখস্তান আরল সাগরের উত্তর এবং দক্ষিণ অংশের মধ্যে একটি বাঁধ তৈরি করেছে। বর্তমানে হ্রদের সামান্য অংশই অবশিষ্ট রয়েছে।
আগল সাগর শুকিয়ে যাওয়ায় কারণে সমস্যার মুখে পড়েছেন উজবেকিস্তানের বাসিন্দারা। একসময় রাশিয়া এবং কাজাখস্তানের মধ্যে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল আরল।
এ ছাড়াও হ্রদ শুকিয়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড জলকষ্ট দেখা গিয়েছে সেই ভূখণ্ডে। মানুষের শরীরে বাসা বেঁধেছে রোগ। মৎস্যজীবীরাও পুরনো পেশা ছেড়ে নতুন কাজের চেষ্টা করে চলেছেন বিগত এক দশক ধরে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে আরল সাগর শুকিয়ে যাওয়া ২১ শতকের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
বর্তমানে আরল সাগরের যে টুকু অংশ অবশিষ্ট রয়েছে, তা সংরক্ষিত করে উজবেকিস্তানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। তবে এই হ্রদকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এখন প্রায় অসম্ভব বলেই মত বিজ্ঞানী মহলের একাংশের।