দেশের উদ্যোক্তা এবং স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলিকে ব্যবসা শুরুর জন্য আরও উৎসাহিত করতে ‘দেবদূত কর’ (অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স) তুলে নিল কেন্দ্রীয় সরকার। মঙ্গলবার বাজেট পেশের সময় এ কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারী এবং স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলির জন্য স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু কী এই অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স? কেনই বা তুলে নেওয়া হল সেটি?
বাজারে নথিভুক্ত নয় এমন স্টার্ট আপ-সহ বিভিন্ন সংস্থায় বেসরকারি উদ্যোগ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, অলটারনেট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড পুঁজি ঢালে। ওই সব বিনিয়োগকারীকে নথিতে উল্লিখিত (বুক ভ্যালু) দামের থেকে বেশি দরে কোনও সংস্থা শেয়ার বিক্রি করলে, যে বাড়তি টাকা তারা পায়, তার উপর কর দিতে হয়। তাকেই অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স বলা হয়। আয়কর আইনের ৫৬ নম্বর ধারার অধীনে পড়ে এই কর।
২০১২ সালে অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স চালু করেছিল তৎকালীন সরকার। সে বছরের অর্থ সংক্রান্ত আইনের আওতায় অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স কার্যকর করা হয়েছিল। সে সময় দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
২০২৩ সালের আগে পর্যন্ত এই কর শুধুমাত্র দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের বাজেটে এর পরিধি বৃদ্ধি করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে জন্মলগ্ন থেকেই বিতর্কের মুখে পড়েছিল অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স। এই কর চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল আর্থিক তছরুপ এবং হিসাব-বহির্ভূত লেনদেন রুখে দেওয়া।
তবে এই কর স্টার্ট-আপ এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করে। উদ্যোক্তারা বরাবর দাবি করে এসেছেন যে এই কর দেশের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং তহবিল সংগ্রহের প্রচেষ্টাকে বাধা দেয়।
সেই অ্যাঞ্জেল ট্যাক্সই এ বার তুলে নিল কেন্দ্র। উদ্যোক্তাদের উদ্বেগের কথা ভেবে সরকার যোগ্য স্টার্ট-আপগুলির জন্য বিভিন্ন ধরনের ছাড় বাস্তবায়ন করেছে, করের বোঝা কমিয়েছে এবং নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য আরও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
মঙ্গলবার বাজেট পেশের সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানান, সব ধরনের লগ্নির ক্ষেত্রেই উঠে যাচ্ছে এই কর। স্টার্ট-আপের পাশাপাশি দেশে উদ্যোগপতি গড়ে তোলার পরিবেশ তৈরি, উদ্ভাবনে জোর দেওয়াই এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষের জন্য বাজেট ঘোষণার সময় নির্মলা বলেন, ‘‘ভারতীয় স্টার্ট-আপ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে, উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক মনোভাব বৃদ্ধি করতে এবং উদ্ভাবনকে সমর্থন করার জন্য আমি সমস্ত শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের জন্য অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স বাতিল করার প্রস্তাব করছি।’’
কেন্দ্রীয় বাজেটের আগে, ‘ডিপার্টমেন্ট ফর প্রমোশন অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইন্টারনাল ট্রেড’ (ডিপিআইআইটি) স্টার্ট-আপগুলির উপর এই শুল্ক অপসারণের সুপারিশ করেছিল।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স তুলে নেওয়ায় দেশের কর ব্যবস্থায় আস্থা বাড়বে শিল্পের। বাড়বে স্টার্ট-আপ সংস্থা তৈরির উৎসাহ।
কেন্দ্রীয় বাজেট অনুযায়ী, অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স ব্যবস্থায় যে পরিবর্তনগুলি করা হয়েছে তা ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।