যাঁরা রহস্যবাদে বিশ্বাসী এবং ব্যাখ্যার অতীত বিষয় নিয়ে চর্চা করেন, তাঁদের কাছে এডগার কায়েস নামটি সুপরিচিত। কায়েস ছিলেন আমেরিকার এক জন মনস্তত্ত্ববিদ এবং ভবিষ্যদ্বক্তা।
ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়ে নাকি অজানা সব রহস্যের খোঁজ পেতেন কায়েস। বলে দিতে পারতেন সুদূর অতীতে কী হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে! ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমানকে নাকি হাতের মুঠোয় রাখতে পারতেন তিনি।
কথিত রয়েছে যে, ধ্যানমগ্ন অবস্থায় অনায়াসে কোনও মানুষের রোগ নির্ণয় করতে পারতেন কায়েস। গড়গড়িয়ে বলে দিতেন পুনর্জন্মের কথা।
সমুদ্রের তলায় ‘হারিয়ে যাওয়া শহর’ আটলান্টিস এবং পৃথিবীর ধ্বংস নিয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন কায়েস।
আমেরিকার কেনটাকির হপকিন্সভিলেতে ১৮৭৭ সালে কায়েসের জন্ম। আধ্যাত্মিকতাবাদের সঙ্গে যুক্ত মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
নস্ট্রাদামুস ছিলেন এক জন ফরাসি দার্শনিক তথা ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। ১৫৫৫ সালে তাঁর লেখা বই ‘লে প্রফেটিস’-এর জন্য তিনি বিখ্যাত। কী ছিল এই বইয়ে? এই বইটি ছিল ৯৪২টি কবিতার সংকলন, যার মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যতের বহু ঘটনার কথা আগাম বলে গিয়েছেন।
মনে করা হয়, তাঁর ভবিষ্যদ্বাবাণীগুলির মধ্যে অনেকগুলিই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। ব্রিটেনের সদ্যপ্রয়াত রানি তৃতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর কথাও নাকি আগেভাগেই বলে গিয়েছিলেন তিনি।
কায়েসকে তাঁর সময়ের নস্ট্রাদামুস হিসাবে বিবেচনা করা হত। হপকিন্সভিলের জাদুঘর অনুসারে, কায়েস তাঁর জীবদ্দশায় ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমান নিয়ে ১৪ হাজারেরও বেশি পাঠ দিয়েছেন। তিনি নাকি এমন অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যা তাঁর জীবদ্দশায় সত্য হয়েছিল।
কায়েসের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গিয়েছিল বলে নাকি ‘ঘুমন্ত নবি’ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি।
১৯২৯ সালে ওয়াল স্ট্রিট ধস (যা ইতিহাসে ‘ব্ল্যাক টুয়েসডে’ নামে পরিচিত)-এর কথা নাকি অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন কায়েস। ১৯২৫ সালেই তিনি ওয়াল স্ট্রিট ধস নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
১৯৩৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও ভবিষ্যদ্বাণী করে ফেলেছিলেন কায়েস। এর কয়েক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দেশগুলি।
একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কায়েস মনে করতেন ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে ভালবাসার আদানপ্রদানের জন্যই তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন ঈশ্বর।
১৯০০ সালে, গলার সমস্যা নিয়ে এক জন রোগী কায়েসের দ্বারস্থ হন। ওই রোগীকে সারাতে ধ্যানমগ্ন হন কায়েস। রোগীর সমস্যা দূর হলেও এক বছরেরও বেশি সময় কথা বলেননি কায়েস।
এক বছর পর আবার কথা বলতে শুরু করেন কায়েস। তাঁর দাবি ছিল, তিনি যে কোনও মানুষের রোগ নির্ধারণ এবং নিরাময় করতে সক্ষম। পাশাপাশি তিনি যে কারও ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারবেন বলেও দাবি করেন।
লোকমুখে কায়েসের অদ্ভুত ক্ষমতার কথা গোটা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে মানুষের ভবিষ্যৎ বলে দিয়ে কোনও রকম উপার্জন করতেন না কায়েস। তাঁর রুজিরুটির অন্য ব্যবস্থা ছিল।
সেলমাতে ১৯১২ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত এক জন ফোটোগ্রাফার হিসাবে কাজ করতেন কায়েস। সেই সময় কেউ তাঁকে ভবিষ্যৎ দেখে দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি তা রাখতেন। ধীরে ধীরে কায়েসের কৃতিত্বের কথা আমেরিকা ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে।
পরে ছবি তোলা ছেড়ে একটি অসরকারি সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড এনলাইটেনমেন্ট’ও তৈরি করে ফেলেন কায়েস।
গারট্রুড ইভান্স নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন কায়েস। তাঁদের তিন সন্তান ছিল। ১৯৪৫ সালের ৩ জানুয়ারি, ৬৭ বছর বয়সে কায়েসের মৃত্যু হয়। হপকিন্সভিলাতেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তবে এখনও তাঁর অসরকারি সংস্থা স্বাস্থ্য, আধ্যাত্মিকতা এবং প্রাচীন রহস্য নিয়ে চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে।