নব্বইয়ের দশকে বলিউডে ‘অ্যাকশন হিরো’ বললেই মনে পড়ে যায় তিন নায়কের কথা। তাঁরা হলেন— অজয় দেবগন, সুনীল শেট্টি এবং অক্ষয় কুমার। এঁদের মধ্যে অজয় এবং অক্ষয় নায়ক হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে বলিউডে প্রবেশ করলেও সুনীলের বলিউডে প্রবেশ আকস্মাৎ।
কেরিয়ারের শুরুতে বেশ কয়েকটি সফল অ্যাকশন ছবিতে অভিনয় করে ‘অ্যাকশন হিরো’ তকমা জোটে সুনীলের। তবে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই ধীরে ধীরে বলিউড থেকে হারিয়ে যেতে থাকেন তিনি।
একের পর এক ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করলেও ধীরে ধীরে ‘হিরো’র তকমা উধাও হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু কেন এমনটা হয়েছিল সুনীলের সঙ্গে?
সুনীলের বাবা বীরাপ্পা শেট্টি মাত্র ন’বছর বয়সে কর্নাটক থেকে মুম্বই আসেন। একটি রেস্তরাঁর কর্মী হিসাবে জীবন শুরু করেন তিনি। পরে তিনি ওই রেস্তরাঁরই ম্যানেজার এবং আরও পরে মালিক হন।
পরবর্তী কালে মুম্বইয়ের বুকে আরও বেশ কয়েকটি কাপড়ের দোকান এবং রেস্তরাঁ খোলেন বীরাপ্পা।
বীরাপ্পার শৈশব দারিদ্রে কাটলেও সুনীল এবং তাঁর দুই দিদিকে সেই কষ্ট সহ্য করতে হয়নি। তিন সন্তানকে ভাল ভাবে বড় করেছিলেন বীরাপ্পা।
ছোটবেলা থেকেই সুনীলের শরীরচর্চার শখ। তরুণ বয়সে তিনি আরও সুঠাম শরীরের অধিকারী হন। গাড়ি চড়ে রাস্তায় বেরোলে সবাই নাকি তাঁর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতেন।
যৌবনে বন্ধুদের কথায় নামী আলোকচিত্রীকে দিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি তুলিয়েছিলেন সুনীল। সেই ছবিগুলির মধ্যে তাঁর একটি পেশিবহুল ছবি পরিচালক দীপক আনন্দের চোখে পড়ে।
সেই সময় ‘বলবান’ ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন দীপক। সুনীলকে দেখে এক নজরে পছন্দ হয়ে যায় তাঁর। ‘বলবান’ ছবিটি বক্স অফিসে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
এর পর সুনীলকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর ‘অ্যাকশন’ ছবিতে সুযোগ পেতে থাকেন তিনি। তার মধ্যে ‘ওয়াক্ত হমারা হ্যায়’, ‘দিলওয়ালে’, ‘মোহরা’, গোপী কিষণ’ ছবিগুলি বক্স অফিসে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
তবে এর মধ্যেই সুনীলের বাবা বীরাপ্পা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুই দিদি বিদেশে থাকায় বাবাকে দেখাশোনার দায়িত্ব এসে পড়ে সুনীলের কাঁধেই। সেই সময় বেশি ভাবনাচিন্তা না করেই বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
ছবিগুলির গল্প একই ধরনের হওয়ায় তা দর্শকদের মনে দাগ কাটতে পারেনি। এর মধ্যেই বীরাপ্পা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবাকে দেখভালের জন্য একের পর এক ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে থাকেন তিনি।
সেই সময় সুনীল এমন সব ছবিতে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন যেগুলিতে তিনি ছাড়াও আরও নায়ক রয়েছেন। তাঁর একার কাঁধে যাতে বেশি চাপ না পড়ে তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এর পর বাবাকে সুস্থ করে ২০০০ সাল নাগাদ আবার বলিউডে নায়ক হিসাবে ফেরার চেষ্টা করেন সুনীল। অক্ষয় এবং পরেশ রাওয়ালের সঙ্গে তাঁর ছবি ‘হেরা ফেরি’ দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল।
তবে এর পরে কোনও পরিচালকই একা সুনীলকে নায়ক করে ছবি বানাতে রাজি ছিলেন না। নায়ক হয়ে ফিরতে না পেরেও ভেঙে পড়েননি তিনি।
ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে সুনীল ব্যবসাতেই মন দেন। বাবার দেখানো পথে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি চলতে থাকে অভিনয়ও। কয়েক বছরের মধ্যেই নির্মাণশিল্প, পোশাক সংস্থা এবং হোটেল-রেস্তরাঁ ব্যবয়ায় নামডাক হয়ে যায় সুনীলের।
অভিনয় করে সুনীল যা উপার্জন করতেন, তার থেকে বহু গুণ আয় তাঁর হত ব্যবসা থেকে।
তবে অভিনেতা হিসাবে সুনীলের দৌড় এখনও পর্যন্ত থামেনি। চুল-দাড়িতে পাক ধরলেও মানানসই ছবিতে এখনও তিনি অনবদ্য।
বলিউডের অভিনেতা-পত্নীদের মধ্যে ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য নাম রয়েছে সুনীলের স্ত্রী মানা শেট্টিরও। মানা হিন্দি সিনেমা জগতের ‘লেডি মুকেশ অম্বানী’ হিসাবেও পরিচিত।
স্বামীর মতো রেস্তরাঁ তৈরির দিকে তেমন মন নেই মানার। তাঁর আগ্রহ নির্মাণশিল্পের প্রতি। পোশাকশিল্পের প্রতিও তাঁর ঝোঁক রয়েছে