কখনও পৌরাণিক চরিত্রের বেশভূষা, কখনও দুর্বল গ্রাফিক। কিন্তু ওম রাউত পরিচালিত ‘আদিপুরুষ’ ছবিটি মুক্তির পর সবচেয়ে বেশি যে বিষয় নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে তা হল হনুমানের মুখের সংলাপ। ‘‘কাপড়া তেরে বাপ কা, তেল তেরে বাপ কা, আগ ভি তেরে বাপ কি, অউর জলেগি ভি তেরে বাপ কি’’— এমন সংলাপ কি হনুমানের মুখে মানায়? প্রশ্ন তুলেছেন দর্শকরা।
ক্ষুব্ধ দর্শকের চাপে পড়ে সংলাপে এসেছে বদল। এখন হনুমানের মুখে,‘‘কাপড়া তেরি লঙ্কা কি, তেল তেরি লঙ্কা কি, আগ ভি তেরি লঙ্কা কি, অউর জলেগি ভি তেরি লঙ্কা হি।’’এত বিতর্ক, এত জলঘোলার পরেও চিত্রনাট্যকার মনোজ মুন্তাসিরের কলমে ‘মা সরস্বতী’ বাস করেন বলে মনে করেন ‘হনুমান’ দেবদত্ত নাগে।
‘আদিপুরুষ’ মুক্তির পর দর্শক এবং ছবি সমালোচকরা মনোজের পাশাপাশি তাঁদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দেবদত্তের উপরেও। পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমেই নিজের কেরিয়ার শুরু করেন দেবদত্ত। তবে তা ‘আদিপুরুষ’ নয়, দেবদত্তের অভিনয়যাত্রার শুরু অনেক আগে।
১৯৮১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ের রায়গড় জেলার আলিবাগে জন্ম দেবদত্তের। ২০১১ সালে ছোট পর্দার মাধ্যমে তাঁর যাত্রা শুরু। ‘বীর শিবাজি’ ধারাবাহিকে তানাজি মালুসারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
‘লাগি তুঝসে লগান’ এবং ‘দেবযানী’ ধারাবাহিকে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান দেবদত্ত। ২০১৪ সালে দেবদত্তের জীবনে নতুন মোড় আসে। ‘জয় মালহার’ নামের একটি মরাঠি ধারাবাহিকে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান তিনি। এই ধারাবাহিকে মহারাষ্ট্রের এক কুলদেবতার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় দেবদত্তকে।
২০১৪ সালের পর আর কেরিয়ারে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি দেবদত্তকে। ‘জয় মালহার’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের পর ছোট পর্দায় ভালই নামডাক হয় তাঁর। এমনকি বড় পর্দাতেও অভিনয়ের জন্য ডাক পান তিনি।
২০১৩ সালে বলিপাড়া থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব পান দেবদত্ত। মিলন লুথারিয়া পরিচালিত ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই দোবারা!’ ছবিতে পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
২০১৪ সালেই ‘সংঘর্ষ’ নামে একটি মরাঠি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় দেবদত্তকে। পাশাপাশি একাধিক মরাঠি ধারাবাহিকেও অভিনয় করেন তিনি।
মরাঠি ধারাবাহিকে অভিনয় চালিয়ে গেলেও হিন্দি ফিল্মজগতে নিজের পরিচিতি বৃদ্ধি করতেও উদ্যোগী হন দেবদত্ত। জন আব্রাহম এবং অজয় দেবগনের মতো বলি তারকাদের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মিলাপ মিলন জাভেরির পরিচালনায় ‘সত্যমেব জয়তে’ ছবিতে জন আব্রাহমের সঙ্গে অভিনয় করেছেন দেবদত্ত। ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই দোবারা!’ ছবির মতো ‘সত্যমেব জয়তে’ ছবিতেও পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
‘আদিপুরুষ’-এর আগেও বলি পরিচালক ওম রাউতের সঙ্গে কাজ করতে দেখা গিয়েছে দেবদত্তকে। ২০২০ সালে ওমের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘তনহাজি: দ্য আনসাং ওয়ারিয়র’ ছবিটি। এই ছবিতে অ়জয় দেবগন, কাজল এবং সইফ আলি খানের মতো তারকারা মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
‘তনহাজি: দ্য আনসাং ওয়ারিয়র’ ছবিতেই ওমের সঙ্গে কাজ করেছেন দেবদত্ত। তাঁকে সূর্যজি মালুসারের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। তিন বছর পর আবার ওমের সঙ্গেই ‘আদিপুরুষ’ ছবিতে কাজ করেছেন অভিনেতা।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ‘আদিপুরুষ’ ছবিতে রাবণের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ওমের প্রথম পছন্দ ছিলেন অজয়। কিন্তু ওমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সইফের কাছে যান ওম। রাবণের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রাজি হন সইফ।
অভিনয়ের পাশাপাশি শরীরচর্চা নিয়ে অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকেন দেবদত্ত। শরীরচর্চার নানা রকম ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে নিজের অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন অভিনেতা।
হনুমান চরিত্রে অভিনয়ের পর তরতরিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে দেবদত্তের অনুরাগী সংখ্যা। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে অভিনেতার অনুরাগীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ছুঁইছুঁই।
কাঞ্চন নাগে নামে এক মহিলার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন দেবদত্ত। ‘আদিপুরুষ’ ছবিতে তাঁর সংলাপ নিয়ে যে এত বিতর্ক, তা নিয়ে মুখে রা কাটেননি অভিনেতা। বরং মনোজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি।
‘আদিপুরুষ’ ছবির প্রথম ঝলক প্রকাশের সময় মনোজকে উদ্দেশ করে দেবদত্ত বলেন, ‘‘মনোজের হাতে মা সরস্বতী বাস করেন বলে আমি মনে করি। এই মহাকাব্য ওর লেখনীর মাধ্যমেই যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে।’’
প্রতি দিন শুট শুরু হওয়ার আগে শুটিং সেটে উপস্থিত সকলে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে কাজ শুরু করতেন বলে জানান দেবদত্ত। তিনি দাবি করেন, তাঁর বিশাল চেহারা দেখেই ওম তাঁকে হনুমানের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন।
এক সাক্ষাৎকারে দেবদত্ত বলেন, ‘‘আমার বিশালাকার পুরুষালি চেহারার জন্যই আমি হনুমানের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছি। সইফকে আমি আগে থেকেই চিনতাম। ‘তনহাজি: দ্য আনসাং ওয়ারিয়র’ ছবিতে ওঁর সঙ্গে কাজ করেছি আমি। তাই ‘আদিপুরুষ’ ছবিতে খুব সহজেই সইফের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি।’’