সেন্ট চার্লস প্যালেস থেকে শুরু করে আটলান্টিক অ্যাভিনিউ— যাঁরা ‘মনোপলি বোর্ড গেম’ খেলেছেন, এই জায়গার নামগুলির সঙ্গেও তাঁরা পরিচিত। তবে, এই জায়গাগুলির অস্তিত্ব শুধু মাত্র বোর্ড গেমেই আবদ্ধ ছিল না। বাস্তব পৃথিবীতেও এই জায়গাগুলি ছিল।
আমেরিকার নিউ জার্সি স্টেটের আটলান্টিক সিটির অনুকরণে পার্কার ব্রাদার্স এই খেলাটি তৈরি করেছিল। এক সময় এই এলাকা এতটাই জাঁকজমকপূর্ণ ছিল যে, আলোর রোশনাইয়ে চোখ ধাঁধিয়ে যেত। কিন্তু আজ এই শহর এতটাই নিস্তব্ধ, এতটাই নীরব, যেন দেখে মনে হয়, পরিত্যক্ত এক ভুতুড়ে শহর।
অতলান্তিক মহাসাগরের ধার বরাবর ১১ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ক্যাসিনো, হোটেল, বিশালাকার ডান্স হল, থিয়েটার ঘর প্রভৃতি ছিল এখানে। আমেরিকার পূর্ব উপকূলবর্তী যতগুলি স্টেট রয়েছে— ফিলাডেলফিয়া, পেনসিলভানিয়া, কানেক্টিকাট, মিশিগান, নিউ ইয়র্ক, ভার্জিনিয়া-সহ বহু স্টেটের বাসিন্দাদের আকর্ষণের জায়গা ছিল এই আটলান্টিক সিটি।
শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোটিপতিরা ছুটে আসতেন এখানকার ক্যাসিনোয়। ছুটি কাটাতে এই শহরে এসে অনেকেই মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরতেন। তবে এখানকার ক্যাসিনোগুলিতে শুধু ধনকুবেরদেরই নয়, প্রবেশাধিকার ছিল সমাজের সব অর্থনৈতিক স্তরের মানুষেরই।
খুব কম খরচে শ্রমজীবী মানুষও ক্যাসিনোয় এসে জুয়া খেলতে পারতেন। আমেরিকার দ্বিতীয় রাজ্য হিসাবে নিউ জার্সিতে জুয়া খেলা আইনসিদ্ধ হলে এই শহর পরে আরও সেজে ওঠে।
কিন্তু এই সুখের সময় বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক দুরবস্থায় পড়ে এই শহর। ক্যাসিনোর দরজাগুলিও বন্ধ হতে শুরু করে। ফলে জুয়া খেলার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে থাকা এই শহর তার জৌলুস হারিয়ে ফেলে।
পরে এই অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলে উঠে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করে আটলান্টিক সিটি। তবে, এক সময় যে শহরের চারদিক ক্যাসিনোয় ঘেরা থাকত, সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি ক্যাসিনো গড়ে ওঠে।
আটলান্টিক সিটি ম্লান হয়ে পড়ায় জন্ম নিল লাস ভেগাস। লাস ভেগাসের উত্থানের ফলে পরে আর জুয়ার জন্য কেউ আটলান্টিক সিটিতে ভিড় জমাতেন না। সকলের গন্তব্যস্থল হয়ে পড়ে একটাই-- লাস ভেগাস।
বর্তমানে আটলান্টিক সিটি একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সমুদ্রসৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে পর্যটকদের সময় কাটানোর জন্য আদর্শ স্থান।
‘মিনি ভেগাস’-এর আনন্দ নিতে অনেকেই আটলান্টিক সিটি ঘুরতে আসেন। কেউ কেউ আবার সমুদ্রের ধারে বিচহাউস ভাড়া নিয়ে শহরের কোলাহল থেকে দূরে সময় কাটান।