বলিউড তারকা সলমন খান বা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী নন, এত দিন এশিয়ার ‘মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলার’ তকমা ছিল তাঁর মাথাতেই। সেই তকমা ঘুচল ব্রুনেইয়ের ৩২ বছর বয়সি রাজপুত্র আব্দুল মতিনের। বান্ধবী আনিশা ইসা-কালেবিক ওরফে আনিশা রোসনাহ বিন্তি অ্যাডামের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন তিনি।
তবে আব্দুল রাজপরিবারের সদস্য হলেও আনিশা কোনও রাজপরিবারের সদস্য নন। তিনি এক জন সাধারণ পরিবারের কন্যা।
সেই আব্দুল এবং আনিশার বিয়ে হল। রাজকীয় ভাবে বলতে যা বোঝায়, ঠিক সেই ভাবে। ১০ দিন ধরে খানাপিনা, নাচগানের আসর, ঝলমলে পোশাক, খ্যাতনামীদের উপস্থিতি মিলিয়ে সে এক জব্বর ব্যাপার। এমন রাজকীয় বিয়েতে খাবারদাবারও যে রাজকীয় হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশের রাজপুত্রের বিয়ে উপলক্ষে ঢেলে সাজানো হয়েছিল ব্রুনেইকে। চারদিকে ছিল সাজ সাজ রব।
আব্দুল এবং আনিশার বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল ৭ জানুয়ারি। শেষ হবে ১৬ জানুয়ারি। ব্রুনেইয়ের ঐতিহ্য এবং রাজপরিবারের রীতিনীতি মেনেই চলছে আব্দুল এবং আনিশার বিয়ের অনুষ্ঠান।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বুধবার ‘ইসতিয়াদাত বারবেদাক’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন আব্দুল এবং তাঁর ২৯ বছর বয়সি বাগদত্তা আনিশা। ‘ইসতিয়াদাত বারবেদাক’ মালয়েশিয়া এবং ব্রুনেইয়ের একটি রীতি যেখানে হবু বর এবং কনেকে পরিবারের সদস্যেরা আশীর্বাদ করেন। দম্পতিদের হাতে একটি বিশেষ মলমও লাগানো হয়। আব্দুল তাঁর ইনস্টাগ্রামে ওই অনুষ্ঠানের বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছেন।
পরের দিন, ওই জুটি দেশের রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানের ওমর আলি সইফুদ্দিন মসজিদে আলাদা আলাদা দু’টি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেকগুলি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর আনিশা এবং আব্দুলের বিয়ে হয় রবিবার। ব্রুনেইয়ের ইস্তানা নুরুল ইমান প্রাসাদে বসেছিল বিয়ের আসর।
বিয়ের অনুষ্ঠানে বিশেষ পোশাক পরে উপস্থিত হন আব্দুল। নববধূ হাজির হয়েছিলেন একটি লম্বা সাদা গাউন পরে।
১০ দিনের বিয়ের অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি ঝলমলে রাজকীয় পোশাক পরেছিলেন আনিশা। তবে তার মধ্যে বিশেষ ভাবে তৈরি ‘বাজু কুরুং’ পোশাক ছিল চোখে পড়ার মতো।
আনিশার ‘বাজু কুরুং’ পোশাকটি তৈরি করেছিলেন পোশাকশিল্পী তেহ ফিরদৌস। একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তেহ লেখেন, ‘‘ব্রুনেইয়ের রাজকীয় বিয়েতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য আমি বিশেষ ভাবে সম্মানিত। জটিল ভাবে বোনা বাজু কুরুং পোশাকে আনিশাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল। আমরা ওঁদের মঙ্গল কামনা করি।’’ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিয়ের অনুষ্ঠানের ষষ্ঠ দিনে বারবেডাক মান্ডি অনুষ্ঠান উপলক্ষে একটি সাদা গাউন পরেছিলেন আনিশা। সঙ্গে ছিল গয়না এবং মুকুট।
আব্দুল এবং আনিশার বিয়ের ছবি তোলার দায়িত্বে ছিলেন তারকা আলোকচিত্রী ফোটোগ্রাফার জার্মান লারকিন। তিনি এর আগে কিম কারদাশিয়ান, কেট মস, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, মিশেল ইয়োহের মতো তারকাদের বিয়েতে ছবি তোলার দায়িত্বে ছিলেন।
বিয়ে শেষে দম্পতিকে একটি ছাদখোলা রোলস-রয়েসের পিছনে বসে হাত নাড়াতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের দেখার জন্য রাস্তার উপর কাতারে কাতারে ভিড় জমিয়েছিলেন ব্রুনেইয়ের মানুষ।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আব্দুল এবং আনিশার বিয়েতে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার অতিথি। ‘হাই-প্রোফাইল’ অতিথিদের মধ্যে সৌদি আরব এবং জর্ডনের রাজপরিবারের সদস্যেরাও ছিলেন। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো এবং ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ বংবং মার্কোস জুনিয়রের মতো রাজনীতিবিদেরাও। গুজব রটেছিল যে, ব্রিটেনের রাজপুত্র উইলিয়াম এবং রাজবধূ কেট মিডলটনও আব্দুলের বিয়েতে যোগ দেবেন। পরে জানা যায় যে, তাঁরা উপস্থিত থাকবেন না।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আব্দুল এবং আনিশার বিয়ে উপলক্ষে সোমবার রাজকীয় ভোজসভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, আব্দুল হলেন ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসান অল বোকাইয়ার দশম সন্তান এবং চতুর্থ পুত্র। ব্রুনেই-সহ সারা বিশ্বেই আব্দুল বিপুল জনপ্রিয়। শুধু ইনস্টাগ্রামেই তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ।