আর সুব্রহ্মণ্যম। আইআইটি এবং আইআইএমের ডিগ্রিধারী এই উচ্চশিক্ষিত ব্যবসায়ীকে সম্প্রতি ২০ বছরের হাজতবাসের সাজা শুনিয়েছে আদালত।
সুব্রহ্মণ্যম একটি খুচরো বিক্রেতা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। সারা ভারত জুড়ে বহু দোকান রয়েছে তাঁর সংস্থার।
কেরিয়ারের শুরুতে একটি চিটফান্ড সংস্থা খুলেছিলেন সুব্রহ্মণ্যম। স্বল্পমেয়াদি লাভের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছিলেন তিনি। সেই বিনিয়োগকারীদেরই প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সুব্রহ্মণ্যমের বিরুদ্ধে।
সুব্রহ্মণ্যমের বিরুদ্ধে শতাধিক বিনিয়োগকারীকে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি অভিযোগ, বিনিয়োগকারীদের থেকে পাওয়া টাকা বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে হাতবদল করার।
বহু দিন ধরে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত না পাওয়ায় সুব্রহ্মণ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন বিনিয়োগকারীরা।
সুব্রহ্মণ্যমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হওয়া তদন্তে উঠে এসেছে, আলাদা করে চার পদ্ধতিতে বিনিয়োগকারীদের থেকে আমানত সংগ্রহ করেছেন সুব্রহ্মণ্যম এবং তাঁর সঙ্গীরা।
অভিযোগ, প্রথমে বিনিয়োগকারীদের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার কথা বলেন সুব্রহ্মণ্যম। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, যে টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে, নির্দিষ্ট সময় পরে তার থেকে অনেক বেশি টাকা বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
কিন্তু যে সময়ে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল, সুব্রহ্মণ্যম সেই সময়ে তা ফেরত দেননি বলেও অভিযোগ। উল্টে বিনিয়োগকারীদের নতুন করে আবার বিনিয়োগের কথা বলা হয়। স্বল্পমেয়াদি লাভের লোভও দেখানো হয়।
বিনিয়োগকারীরা আবার টাকা বিনিয়োগ করার পর সেই টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ সুব্রহ্মণ্যম এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে।
এটি সুব্রহ্মণ্যমের প্রথম ব্যবসায়িক উদ্যোগ ছিল। ১৯৯১ সালের মে মাসে তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে এই সংস্থা তৈরি করেছিলেন। এর ছ’বছর পর, অর্থাৎ ১৯৯৭ সালে অন্য একটি সংস্থা চালু করেন সুব্রহ্মণ্যম।
অনেক বিনিয়োগকারী সুব্রহ্মণ্যমের সংস্থার প্রকল্পে আকৃষ্ট হয়ে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। যার মধ্যে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই সেই টাকা ফেরত পাননি। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ৫৮৭ জন বিনিয়োগকারী টাকা ফেরত পাননি।
আদালতে সুব্রহ্মণ্যম স্বীকার করেছেন যে, গত ১০ বছর ধরে তিনি বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেননি। তাঁর ঋণের পরিমাণ ১৩৭ কোটির গণ্ডি ছাড়িয়েছে।
মামলার শুনানি শেষে গত ২০ নভেম্বর সুব্রহ্মণ্যমকে ২০ বছর কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের বিশেষ আদালত।
‘তামিলনাড়ু প্রোটেকশন অফ ইন্টারেস্টস অফ ডিপোজ়িটরস’ আইন অনুযায়ী আদালত সুব্রহ্মণ্যম এবং তাঁর সহযোগীদের দোষী সাব্যস্ত করেছে।
২০ বছরের জেলের সাজা শোনানোর পাশাপাশি আদালত সুব্রহ্মণ্যমকে আট কোটি ৯২ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে। পাশাপাশি সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলির কাছ থেকে মোট ১৯১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এর মধ্যে, ১৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের বাবদ দেওয়া হবে বলে আদালত জানিয়েছে। প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করে সেই টাকা তুলে দেওয়া হবে বিনিয়োগকারীদের হাতে।