৮৬ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে আধ্যাত্মিক গুরু তথা জুনা আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর কপিল সিংহ ওরফে সোমনাথ গিরি ওরফে ‘পাইলটবাবা’র। দিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
জীবনের দ্বিতীয় পর্বে আধ্যাত্মিক গুরু হিসাবে পরিচিতি লাভ করলেও জীবনের প্রথমার্ধে ভারতীয় বায়ুসেনায় ফাইটার পাইলট হিসাবে কর্মরত ছিলেন কপিল।
১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন কপিল।
১৯৩৮ সালের ১৫ জুলাই বিহারের সাসারামে জন্ম কপিলের। প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে ভারতীয় সেনায় যোগ দেন তিনি। বায়ুসেনার ফাইটার পাইলট হন ১৯৫৭ সালে।
১৯৬৫ এবং ’৭১-এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন কপিল। বিমানবাহিনীতে বিশেষ ধরনের বিমান ওড়ানোর জন্যও পরিচিত ছিলেন তিনি।
দীর্ঘ সময় ভারতীয় বায়ুসেনায় দায়িত্ব পালনের পর ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিক পথে পা বাড়ান কপিল। সেনাবাহিনীতে থাকার সময়েই ‘পাইলটবাবা’ উপাধি পেয়েছিলেন তিনি। ওই নাম নিয়েই আধ্যাত্মিক জীবনে প্রবেশ করেন তিনি।
জনশ্রুতি রয়েছে, আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য জাগতিক মোহ, মায়া ত্যাগ করে হিমালয় চলে গিয়েছিলেন পাইলটবাবা। সেখানে সাত বছর কাটিয়েওছিলেন।
হিমালয় থেকে ফিরে দীক্ষা নিয়ে সাধু হিসাবে জীবনযাপন শুরু করেন পাইলটবাবা। গোয়ালিয়রের রানি বিজয়রাজে সিন্ধিয়া তাঁর নাম দেন সোমনাথ গিরি।
আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও অনুশীলনের জন্য দেশ জুড়ে পরিচিতি লাভ করেন পাইলটবাবা। পাশাপাশি তাঁকে নিয়ে অনেক কিংবদন্তিও শুরু হয়।
পাইলটবাবা দাবি করেছিলেন, মহাভারতের ‘অমর’ যোদ্ধা তথা দ্রোণাচার্যের পুত্র অশ্বত্থামা-সহ হিন্দু পুরাণে নাম রয়েছে, এমন অনেক বিখ্যাত চরিত্রের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।
জীবনে একাধিক বইও লিখেছেন পাইলটবাবা। ‘আনভেলস মিস্ট্রি অফ হিমালয়া’ এবং ‘ডিসকভার সিক্রেটস অফ হিমালয়া’ বইয়ে তিনি এই চরিত্রদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের কথা লিখেছেন। হিমালয়ে দীর্ঘ সময় তপস্যার সময় তিনি যে ‘গুপ্ত জ্ঞান’ অর্জন করেছিলেন, সে কথাও লিখেছেন বইয়ে।
সমাধি নেওয়ার জন্যও বিশেষ খ্যাতি ছিল পাইলটবাবার। যখন-তখন নাকি ধ্যানমগ্ন হতে পারতেন তিনি। সেই ধ্যান নাকি এত গভীর যে, শরীর ‘ত্যাগ’ করে ফেলতে পারতেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে ১১০ বারেরও বেশি সমাধিতে গিয়েছিলেন পাইলটবাবা। শুধু তাঁর সমাধি দেখবেন বলে কুম্ভ মেলায় ভিড় জমাতেন বহু মানুষ।
আধ্যাত্মিক শিক্ষার কারণে বিশ্বব্যাপী পাইলটবাবার শিষ্যের সংখ্যা কম নয়। বিশেষ করে জাপান এবং আমেরিকায় তাঁর ভক্তের সংখ্যা অনেক।
ভারতের বুকে একাধিক আশ্রম রয়েছে পাইলটবাবার। এর মধ্যে সাসারাম, হরিদ্বার, নৈনিতাল এবং উত্তরকাশীর আশ্রম অন্যতম। তাঁর শিষ্যরাই আশ্রমগুলির দেখাশোনা করেন।
অনুগামীদের শান্ত থাকার এবং প্রার্থনা করার বার্তা দিয়ে পাইলটবাবার মৃত্যুর কথা তাঁরই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ঘোষণা করা হয়েছিল।
হরিদ্বারে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে পাইলটবাবার। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহলের মানুষ।
ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট থেকে সাধু হয়ে আধ্যাত্মিক গুরু— পাইলটবাবার যাত্রাকে অসাধারণ বলেই মনে করেন তাঁর অনুগামীরা। তাঁর জীবন এবং শিক্ষা অনেককে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।