ভারতীয় বণিক মহলে তাঁর উপস্থিতি ছিল উজ্জ্বল। সেই শিল্পপতি রতন টাটা প্রয়াত হয়েছেন। বয়সজনিত সমস্যা নিয়ে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এমিরেটাস। বুধবার রাতে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
রবিবার রাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর মিলেছিল, রতন টাটাকে মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও দাবি করা হয়েছিল, আচমকা তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে।
কিন্তু সোমবার সকালেই সব ‘জল্পনা’ উড়িয়ে দিয়ে শিল্পপতি এক্সে জানিয়েছিলেন, সব খবর ভুয়ো। বরং বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে নিয়মমাফিক চেক-আপের জন্যই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। এর পর বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর মেলে।
রতন টাটার মৃত্যুর পরেই তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এ-ও জল্পনা তৈরি হয়েছে, রতন টাটার সৎভাই নোয়েল টাটা তাঁর উত্তরসূরি হতে পারেন।
টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে বিগত ৪০ বছর ধরে যুক্ত রয়েছেন নোয়েল এন টাটা। বর্তমানে ট্রেন্ট, টাটা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ভোল্টাস ও টাটা ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। টাটা স্টিল এবং টাইটান কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন। এ ছাড়াও টাটা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার বোর্ডের সদস্য হিসাবে কাজ করছেন নোয়েল।
‘স্যর রতন টাটা ট্রাস্ট’ এবং ‘স্যর দোরাবজি টাটা ট্রাস্ট’-এর বোর্ডের ট্রাস্টি হিসাবেও কাজ করছেন নোয়েল।
২০১০ সালের অগস্ট এবং নভেম্বর ২০২১-এর মধ্যে টাটা গ্রুপের ট্রেডিং শাখা টাটা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন নোয়েল। তাঁর সময়কালে ওই সংস্থার বাজারমূল্য আকাশ ছুঁয়েছিল। টাটা ইন্টারন্যাশনালের আগে ট্রেন্ট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবেও কাজ করেছেন নোয়েল।
রতন টাটার বাবা নেভাল এইচ টাটার দ্বিতীয় স্ত্রী সিমোন ডুনয়ারের সন্তান নোয়েল। ব্রিটেনের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন নোয়েল। পরে নামী বিজ়নেস স্কুল থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল এগ্জ়িকিউটিভ প্রোগ্রাম’ নিয়ে পড়াশোনা করেন।
তবে শুধু নোয়েল নন, তাঁর পরের প্রজন্মও টাটা গোষ্ঠীর অগ্রগতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত। নোয়েলের তিন সন্তান টাটা ট্রাস্ট বোর্ডের ৫টি পদে রয়েছেন৷
টাটার পরের প্রজন্মের মধ্যে অন্যতম লিয়া টাটা। তিনি সম্পর্কে রতনের ভাইঝি। নোয়েল টাটার জ্যেষ্ঠ কন্যা।
নোয়েল টাটা এবং আলো মিস্ত্রির কন্যা লিয়া। বাবা-মা দু’জনেই সফল ব্যবসায়ী। তাঁদের দেখানো পথেই হেঁটেছেন লিয়া।
সেই কারণে লিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন স্পেনের বিজ়নেস স্কুলে। মাদ্রিদে আইই বিজ়নেস স্কুলে মার্কেটিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
বিজ়নেস স্কুলের পাঠ শেষে বিভিন্ন সংস্থায় কাজ শুরু করেন লিয়া। ২০১০ সালে বিখ্যাত ফ্যাশন সংস্থা লুই ভিতোঁয় তিন মাসের ইন্টার্নশিপ করেন রতন টাটার ভাইঝি।
তার পর গত ১০ বছরে ভারতের হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন দায়িত্ব সামলেছেন লিয়া। যদিও লুই ভিতোঁয় ইন্টার্নশিপের আগে ২০০৬ সালে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে তাজ হোটেলস রিসর্টস অ্যান্ড প্যালেসেসের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেলস ম্যানেজার হিসাবে যোগ দেন লিয়া। পরে টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গেও যুক্ত হন। টাটা মেডিক্যাল সেন্টার ট্রাস্টের একজন ট্রাস্টি হন লিয়া।
লিয়ারা তিন ভাইবোন। তাঁর বোন মায়াও টাটাদের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। লিয়ার এক ভাই রয়েছেন। তাঁর নাম নেভিল টাটা।
টাটা অপারচুনেটিজ় ফান্ডে কাজ করতেন মায়া। এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, টাটা ডিজিটালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে, টাটা গোষ্ঠীর রিটেল সংস্থায় কাজ করেন নেভিল টাটা। অর্থাৎ, টাটা পরিবারের নতুন প্রজন্মও ব্যবসার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত।
তবে টাটাদের পরের প্রজন্মের লিয়া, মায়া, নেভিলরা প্রচারের আলোয় থাকেন না। বরাবরই প্রচারের আড়ালে থাকেন তাঁরা।
রতনের আমলে টাটা গোষ্ঠীর সাফল্যের তালিকা দীর্ঘ। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ছিলেন। তার পর থেকে যা ছুঁয়েছেন তাতেই ‘রতন’, টাটা গোষ্ঠীকে শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
দেশে টাটাদের সুনাম সর্বজনবিদিত। বিশেষ করে রতন টাটার সাফল্য যে কারও কাছেই অনুপ্রেরণা। নোয়েল এবং তাঁর পরের প্রজন্মও সেই পথ ধরেই এগোচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এই আবহে মনে করা হচ্ছে, নোয়েলকেই রতনের উত্তরসূরি হিসাবে বেছে নিতে পারে টাটা গোষ্ঠী। গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন তাঁর তিন সন্তানও।