সারা দেশের নজর এখন মুকেশ অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত এবং রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের খবরে। নব বর-বধূ কী পরেছেন, আমন্ত্রিতদের মধ্যে কে এলেন বা এলেন না, মেনুতে কী কী ছিল ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার যেন শেষ নেই।
যদিও শুধু অনন্তের বিয়ে বলে নয়, সারা বছরই কোনও না কোনও কারণে খবরে থাকেন অম্বানীরা। খবরে থাকেন অম্বানীদের বন্ধুবান্ধবেরাও। সে রকমই এক জন দত্তরাজ সালগাওকর।
দত্তরাজ, যিনি রাজ সালগাওকর নামে বেশি পরিচিত, তিনি মুকেশ অম্বানীর বাল্যবন্ধু। মুম্বইয়ের কারমাইকেল রোডে সে শহরের প্রথম আকাশচুম্বী বহুতল ‘ঊষা কিরণ’ থেকে তাঁদের বন্ধুত্ব শুরু হয়। ‘ঊষা কিরণ’-এর ২২ তলায় থাকত অম্বানী পরিবার। সালগাওকরেরা ১৪ তলায়।
তবে দত্তরাজ শুধু অম্বানীর বন্ধু নন, ভগিনীপতিও বটে। একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত করতে করতেই প্রেমে পড়ে যান দত্তরাজ এবং মুকেশের ছোট বোন দীপ্তি অম্বানী।
অম্বানীদের মতো বিত্তশালী না হলেও দত্তরাজের সম্পত্তির পরিমাণও নেহাত কম নয়।
রিয়েল এস্টেট, ক্রীড়াক্ষেত্র এবং শিল্পকলা সংক্রান্ত ব্যবসায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন দত্তরাজ। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। গোয়ায় একাধিক সম্পত্তি এবং ব্যবসা রয়েছে দত্তরাজের।
দত্তরাজের বাবা বাসুদেব সালগাওকর ছিলেন ভি এম সালগাওকর গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। বাসুদেবের অকালমৃত্যুর পর সালগাওকর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ান ধীরুভাই অম্বানী। ব্যবসা সংক্রান্ত পরামর্শও দিতে থাকেন দত্তরাজকে। দুই পরিবারের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়। একে অপরের বা়ড়িতে যাতায়াত বাড়ে।
ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ভাল ছিলেন দত্তরাজ। বম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন তিনি। পরে পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ার্টন বিজ়নেস স্কুল থেকে ফিনান্সে এমবিএ করেন।
ছোটবেলা থেকেই অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটিয়েছেন মুকেশ এবং দত্তরাজ। এই বন্ধুত্ব আত্মীয়তায় পরিণত হয় ১৯৮৩ সালে। দীপ্তির সঙ্গে বিয়ে হয় দত্তরাজের। দীপ্তি এবং দত্তরাজের দুই সন্তান— বিক্রম এবং ইশিতা।
বিয়ের এক বছর পর মুম্বই ছেড়ে গোয়া চলে যান দত্তরাজ এবং দীপ্তি। ডাবোলিম বিমানবন্দরের কাছে চিকালিমে পৈতৃক বাড়ি ছিল দত্তরাজের। সেই বাড়িকে নতুন রূপ দিয়ে রীতিমতো প্রাসাদ তৈরি করেন।
পাশাপাশি ক্যান্ডোলিমে সমুদ্রসৈকতের একদম কাছে একটি বাড়ি এবং ডোনা পাওলায় আর একটি বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেন। এই বা়ড়িগুলির মূল্য বর্তমানে কোটি কোটি টাকা।
খেলাধুলোর প্রতিও ছোট থেকেই আগ্রহ ছিল দত্তরাজের। সেই আগ্রহকেই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরিণত করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে ভিএম সালগাওকর কর্পোরেশনের অধীনে সালগাওকর ক্রিকেট ক্লাব তৈরি করেন দত্তরাজ, যা অনেক নামীদামি টুর্নামেন্ট জিতেছে।
১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত গোয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন দত্তরাজ। ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালবাসার জন্য ক্রিকেটার বিরাট কোহলির সঙ্গে মিলে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ‘এফসি গোয়া’ দল তৈরি করেন। যদিও ২০১৬ সালে তিনি মালিকানা থেকে সরে আসেন।
শিল্পকলা ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে দত্তরাজের। ২০০৯ সালে ‘সুনাপারন্ত গোয়া সেন্টার ফর দ্য আর্টস’ প্রতিষ্ঠা করেন মুকেশের ভগিনীপতি। এটি একটি অলাভজনক উদ্যোগ যা স্থানীয় শিল্পীদের প্রচারের আলোকবৃত্তে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। দীপ্তি সালগাওকর এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভাইস-চেয়ারপার্সন হিসাবে কাজ করছেন।
সফল ব্যবসায়ী হওয়ার পাশাপাশি ছবি তোলার প্রতিও আগ্রহ রয়েছে দত্তরাজের। বিভিন্ন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে ভালবাসেন তিনি।
‘সালগাওকর ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালিটি এডুকেশন’ এবং ‘ভিএম সালগাওকর কলেজ অফ ল’-এর মতো একাধিক কলেজ তৈরি করেছেন দত্তরাজ। বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গেও যুক্ত তিনি।