ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর সমর্থনে আবার রাস্তায় সে দেশের লাখো মানুষ। যার জেরে গত রবিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ব্রাজিলের সব থেকে বড় শহর সাও পাওলো।
রবিবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান বোলসোনারোর লাখ লাখ সমর্থক। কয়েকটি জায়গা অশান্তও হয়ে ওঠে। কিন্তু কেন সমর্থকদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শামিল হওয়ার ডাক দিয়েছেন বোলসোনারো?
নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরেও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি! এমন অভিযোগেই বিদ্ধ ‘অতি দক্ষিণপন্থী’ নেতা বলে পরিচিত বোলসোনারো। এই নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্রাজিলের আদালতে মামলাও চলছে।
সম্প্রতি ব্রাজিলের লুলা দা সিলভা সরকারের পুলিশ বোলসোনারোর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করেছে। বোলসোনারো এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ব্রাসিলিয়ার ফেডারেল পুলিশ বোলসোনারোকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের দাবি, ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর থেকেই তিনি ‘নিপীড়িত’। আর তার বিরুদ্ধে সরব হতেই গত রবিবার সমর্থকদের রাস্তায় নেমে ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে’ যোগ দেওয়ার ডাক দেন বোলসোনারো।
নেতার ডাকে ব্রাজিলের পতাকার নকশা করা পোশাক পরে সাও পাওলোতে ভিড় জমান বোলসোনারোর অনুগামীরা। সাও পাওলোর অন্যতম প্রধান স্থান, পলিস্তা অ্যাভিনিউয়ে মানুষের ঢল নামে। যার জেরে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাস্তাঘাট।
সাও পাওলোতে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন বোলসোনারো। সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তৃতা করার সময় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বোলসোনারোর দাবি, ২০২২ সালের অক্টোবরে মাসে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ক্ষমতায় টিকে থাকতে কোনও অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেননি তিনি।
বোলসোনারো বলেন, ‘‘অভ্যুত্থান কী? ষড়যন্ত্র করা! রাস্তায় সাঁজোয়া গাড়ি এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মানুষ নামানো! ব্রাজিলে এমন কিছু ঘটেনি।’’
ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগে এবং নির্বাচন ব্যবস্থার দিকে আঙুল তোলার অভিযোগে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বোলসোনারোকে কোনও ধরনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের নির্বাচনী ট্রাইবুনাল।
রবিবার তা নিয়েও সরব হয়েছেন ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। বোলসোনারোর কথায়, ‘‘সরকার এ ভাবে কাউকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে পারে না। কোনও ন্যায্য কারণ থাকলে অন্য কথা ছিল।’’
উল্লেখযোগ্য, এর আগেও বোলসোনারোর সমর্থনে রাস্তায় নেমেছেন তাঁর অনুগামীরা। যার জেরে অশান্ত হয়ে উঠেছিল ফুটবলের দেশ।
২০২২ সালে ব্রাজ়িলের সাধারণ নির্বাচনে লুলার কাছে হেরে যান বোলসোনারো। ভোটে হেরে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর সমর্থকেরা ব্রাজ়িলের সংসদ ভবন আক্রমণ করার চেষ্টা করেন। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে মামলা হয়। সেটি ঘটে ২০২২ সালের জুলাই মাসে।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের ভবন এবং সে দেশের শীর্ষ আদালতের বাইরে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন বোলসোনারোর অনেক অনুগামী। তাঁদের কথাও বিক্ষোভ সমাবেশে মনে করিয়ে দেন বোলসোনারো।
তবে আইনি নির্দেশের বিরুদ্ধে সমর্থকদের জড়ো করে বিক্ষোভ দেখানোর কারণে বোলসোনারোর জেল হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ব্রাজিলের রাজনীতিতে একাধিক বার অভিযোগ উঠেছে বোলসোনারোর নামে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করা, অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার দিকে আঙুল তোলার অভিযোগের পাশাপাশি করোনার টিকা নিয়ে দুর্নীতি করার অভিযোগও রয়েছে বোলসোনারোর বিরুদ্ধে।
এ ছাড়াও অভিযোগ, ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট হিসাবে কিছু বিদেশি কূটনীতিবিদকে নিজের বাসভবনে আমন্ত্রণ জানান বোলসেনারো। অভিযোগ, বিদেশি অতিথিদের সামনে তিনি দাবি করেন যে কী ভাবে ব্রাজ়িলের ভোটে ব্যবহৃত ইভিএমগুলিকে বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বোলসেনারো বার বার দাবি করেছেন, তিনি ব্রাজ়িলের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে অতিথিদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন মাত্র।
বর্তমানে চিনের বন্ধু বামপন্থী নেতা লুলা ব্রাজিলে ক্ষমতায় রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও একাধিক বার সরব হয়েছেন বোলসোনারো।