বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এ এমনই এক গোলকধাঁধা, যা মানুষকে চিরকাল বিস্মিত করেছে। জাহাজ হোক বা বিমান— এই অঞ্চলে একবার ঢুকলে তার হদিস মিলত না।
আটলান্টিক মহাসাগরের তিন বিন্দু দ্বারা সীমাবদ্ধ ত্রিভুজাকৃতির এই এলাকাকে ‘ডেভিল’স ট্রায়াঙ্গল’-ও বলা হয়। যে তিনটি প্রান্ত নিয়ে কাল্পনিক এই ত্রিভুজ তৈরি হয়েছে, তার এক প্রান্তে রয়েছে আমেরিকার ফ্লরিডা, আর এক প্রান্তে পুয়ের্তো রিকো এবং অপর প্রান্তে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ।
১৯৪৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত একাধিক রহস্যজনক ঘটনা ঘটেছে এই অঞ্চলে। এই কাল্পনিক ত্রিভুজের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করা বহু জাহাজ এবং বিমান রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছে। কোনওটির ধ্বংসাবশেষ পরে উদ্ধার হয়েছে, কোনওটির আবার আজ পর্যন্ত কোনও খোঁজ মেলেনি।
একসময়ে মনে করা হত, এটি আসলে অশুভ শক্তির ডেরা। সে কারণে একে ডেভিল’স ট্রায়াঙ্গল বলা হত।
কিন্তু জানেন কি, বিশ্বে এ রকম আরও ত্রিভুজ রয়েছে? এর মধ্যে একটি রয়েছে আলাস্কায়। ‘আলাস্কা ট্রায়াঙ্গল’ এমন একটি অঞ্চল, যেখানে বিশ্বের অন্য যে কোনও জায়গার চেয়ে বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন।
দক্ষিণে অ্যাঙ্কোরেজ, জুনইউ এবং উত্তরের উপকূলীয় শহর উটকিয়াগভিকের কাছাকাছি অবস্থিত আলাস্কা ট্রায়াঙ্গলে নিখোঁজ হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। যা নিয়ে এখনও অনেক রহস্য রয়ে গিয়েছে।
আইএফএল সায়েন্স ওয়েবসাইট অনুযায়ী এই এলাকাটি প্রথম জনসাধারণের নজরে আসে ১৯৭২ সালের অক্টোবরে। আমেরিকার দুই রাজনীতিবিদ টমাস হেল বোগস সিনিয়র এবং নিক বেগিচকে নিয়ে ছোট একটি বিমান অ্যাঙ্কোরেজ থেকে জুনইউ যাওয়ার পথে হঠাৎই অদৃশ্য হয়ে যায়।
সেই বিমানে ছিলেন বেগিচের সহকারী রাসেল ব্রাউন। তিনিও নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হন ওই বিমানের চালকও। ওই চার জনকে খুঁজে বার করতে দীর্ঘ তল্লাশি চালিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। খোঁজ মেলেনি বিমানটিরও।
আমেরিকার দুই রাজনীতিকের অন্তর্ধান নিয়ে বিতর্কও ছিল বিস্তর। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য যে ওয়ারেন কমিশন তৈরি হয়েছিল, টমাস ছিলেন তাঁর অন্যতম সদস্য।
ওই কমিশন যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, তার সঙ্গে সহমত ছিলেন না টমাস। আর সেই কারণেই মনে করা হয়েছিল, টমাসের ওই ভাবে উবে যাওয়া নিছক রহস্য নয়।
তবে শুধু টমাস, বেগিচ, বেগিচের সহকারী বা বিমানচালক নন, সত্তরের দশক থেকে মোট ২০ হাজারের বেশি মানুষ নাকি রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়েছেন আলাস্কা ট্রায়াঙ্গলে।
আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল গ্যারি ফ্রাঙ্ক সোথারডেনের অন্তর্ধান। গ্যারি ছিলেন নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আলাস্কার ওই জায়গায় তিনি গিয়েছিলেন শিকার করতে। কিন্তু আর বাড়ি ফেরেননি। নিখোঁজ হওয়ার সময় গ্যারির বয়স ছিল ২৫।
গ্যারি নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দু’দশক পরে, অর্থাৎ ১৯৯৭ সালে উত্তর-পূর্ব আলাস্কার পর্কুপাইন নদীর ধারে একটি মানুষের খুলি পাওয়া গিয়েছিল।
২০২২ সালে খুলির ডিএনএ পরীক্ষা করার পর মনে করা হয়েছিল, খুলিটি গ্যারির। অনেকের বিশ্বাস ছিল, সম্ভবত কোনও ভালুকের হানায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।
আলাস্কা ট্রায়াঙ্গলে নিখোঁজ হয়েছেন এ রকম আরও অনেকে। অনেকে সেই নিখোঁজ হওয়ার কারণ নিয়ে বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। অনেকের বিশ্বাস, ভিন্গ্রহীদের যাতায়াত রয়েছে ওই এলাকায়। আর সেই কারণেই নাকি মানুষ ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হন।
আবার অনেকের যুক্তি, ওই এলাকার কোনও নির্দিষ্ট জায়গা প্রাকৃতিক বিপদে ভরা। আর সেই নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময়েই মানুষ নিখোঁজ হন। আর তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
যদিও কেউ কেউ মনে করেন আলাস্কা ট্রায়াঙ্গলে অস্বাভাবিক চৌম্বকীয় ক্রিয়াকলাপ রয়েছে। আর সে কারণেই ওই ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, সম্ভবত বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতো এই রহস্যেরও সমাধান হবে না।