দুর্বল মুদ্রা এবং ক্রমবর্ধমান দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করছে জাপানের রাজধানী টোকিয়ো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সুদের হার বাড়িয়েছে জাপানি ব্যাঙ্ক। টোকিয়োর বাজারে বিনিয়োগ করানোর জন্যও উঠেপ়ড়ে লেগেছে সে দেশের সরকার।
তবে টোকিয়োর এই দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে নাম করছে সেই শহর। তা-ও যে সে পর্যটনকেন্দ্র নয়, ‘যৌন পর্যটন’ বা ‘সেক্স ট্যুরিজম’-এর কেন্দ্র হিসাবে। এমনই তথ্য উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য স্টার’-এর প্রতিবেদনে।
‘লিয়াজোঁ কাউন্সিল প্রোটেক্টিং ইয়ুথ’-এর সেক্রেটারি জেনারেল ইয়োশিহিদ তানাকা সংবাদমাধ্যম ‘এশিয়া’কে সপ্তাহ দুয়েক আগে বলেছেন, ‘‘জাপান একটি দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে।’’
ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, করোনা অতিমারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর থেকেই বিদেশি পুরুষদের আনাগোনা বেড়েছে টোকিয়ো শহরে। এই তালিকায় বিশেষ ভাবে রয়েছেন চিনা পুরুষেরা।
যৌনকর্মী এবং যৌনশিল্পের জন্যই পুরুষদের মন টোকিয়ো শহরে মজেছে বলে দাবি করা হয়েছে সংস্থার তরফে।
তানাকা বলেন, টোকিয়োয় যৌনকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বিশের দশকের শুরুর দিক থেকে। সেই সময় থেকেই টোকিয়োর অনেক তরুণী এবং মহিলা জীবনযাপনের তাগিদে যৌনকর্মীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন।
শহরে যৌনকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে হিংসার ঘটনা বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন তানাকা।
ওকুবো পার্ক টোকিয়োর অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রচুর ভিড় হয় ওই পার্ক এবং সংলগ্ন এলাকায়।
যৌন হিংসার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদানকারী একটি অসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘প্যাপস’-এর সদস্য কাজুনা কানাজিরির মতে, ওই পার্কের পাশে যৌনকর্মীদের ঘোরাফেরা বেশি। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ওকুবো পার্কের মতো অন্য পার্কগুলিতে যৌনকর্ম চলে।
জাপানের প্রধান বিরোধী দল ‘কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ জাপান’-এর সদস্য তথা আইনসভার সদস্য কাজুনোরি ইয়ামানোই-সহ আরও অনেকেই যৌনকর্ম সংক্রান্ত নির্দিষ্ট নিয়মাবলি তৈরির পক্ষে কথা বলেছেন।
কাজুনোরির কথায়, “বাস্তব বিষয় হল, জাপান এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে, যেখানে বিদেশি পুরুষরা সহজেই অল্পবয়সি মহিলাদের থেকে যৌনসেবা পেতে পারে।’’
ইয়ামানোই বলেছেন যে, এটি কেবল একটি ঘরোয়া সমস্যা নয়। বরং এর ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে জাপানি নারীদের সম্বন্ধে ধারণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
উল্লেখ্য, ‘মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট’ (এমপিডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ওকুবো পার্কের আশপাশের রাস্তায় পতিতাবৃত্তির অভিযোগে ১৪০ জন যৌনকর্মীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
এমপিডি জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া যৌনকর্মীদের ৪৩ শতাংশের দাবি, তাঁরা দায়ে পড়ে, নয়তো ‘হোস্ট ক্লাব (জাপানের হোস্ট ক্লাব হল এমন একটি জায়গা যেখানে পুরুষদের সঙ্গ পেতে মহিলারা টাকা খরচ করেন)’-এর টাকা মেটানোর জন্য যৌনপেশা বেছে নিয়েছেন। ধৃত মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের বয়স ২০ এবং তিন জনের বয়স ১৯ বা তার কম ছিল বলেও এমপিডির তরফে জানানো হয়েছে।
জাপান হোস্ট ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ইউইচি হোজোর মতে, শুধুমাত্র শহরের কাবুকিচো এলাকায় এই ধরনের প্রায় ২৪০ থেকে ২৬০টি হোস্ট ক্লাব রয়েছে। সেই হোস্ট ক্লাবগুলিতে প্রতি বার যাওয়ার খরচ প্রায় ২০ হাজার ইয়েন। আর সেই টাকা মেটাতেই অনেকে যৌনপেশার দিকে ঝুঁকছেন।
জাপানের যৌনকর্মীদের উপর নির্যাতন করার অভিযোগও বিস্তর। শুধু যৌনরোগ ছড়ানো নয়, তাঁদের উপর শারীরিক হিংসা এবং তাঁদের থেকে টাকা কেড়ে নেওয়ারও প্রচুর অভিযোগ উঠেছে।
জাপানে অর্থের বিনিময়ে যৌনতা কেনাবেচা অবৈধ। তবে নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র সঙ্গমের জন্য সীমাবদ্ধ।
অবাধে যৌনতা কেনাবেচায় লাগাম লাগাতে জাপানে ‘অ্যান্টি-প্রস্টিটিউশন ল’ রয়েছে। ওই আইনে কাউকে গ্রেফতার করলে ছ’মাসের জন্য জেল হয়।
একই সঙ্গে ১০ হাজার ইয়েন জরিমানাও হতে পারে। তবে এই শাস্তি শুধু হতে পারে যৌনকর্মীদের, যিনি যৌন পরিষেবা নিতে এসেছিলেন তাঁর উপর এই আইন বলবৎ হয় না।