প্রথমে ইসমাইল হানিয়া। তার পর ইয়াহিয়া সিনওয়ার। এক এক করে প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতাদের খুঁজে খুঁজে নিকেশ করেছে ইজ়রায়েল। ফলে নেতৃত্বের সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে ইরানের মদতপুষ্ট এই সংগঠন।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও হামাস নিজেদের ইজ়রায়েল বিরোধী অবস্থান থেকে না নড়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছে। তাই পশ্চিম এশিয়াতেও যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনায় আপাতত ইতি পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
তবে প্রশ্ন উঠছে, ইহুদিদের ঠেকাতে হামাসের নেতৃত্ব দেবেন কে? কার কাঁধে আসবে প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধানের দায়িত্ব।
সেই আবহে হামাসের পরবর্তী প্রধান হিসাবে একাধিক নাম উঠে এসেছে। তালিকায় নাম রয়েছে হামাসের কট্টরপন্থী নেতা হিসাবে পরিচিত মাহমুদ আল-জ়াহার থেকে শুরু করে ইয়াহিয়ার ভাই মহম্মদ সিনওয়ার।
মনে করা হচ্ছিল, সিনওয়ারের জায়গায় এমন কোনও রাজনৈতিক নেতাকে আনতে চাইছে হামাস, যিনি গাজ়ার বাইরে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। কারণ, ইতিমধ্যেই গাজ়া ভূখণ্ডের অধিকাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)।
ফলে ইহুদি ফৌজের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সেখানে বসে দল চালানো যে একরকম অসম্ভব, তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে হামাস।
তবে এর মধ্যেই হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব সংক্রান্ত অন্য একটি খবরে জল্পনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী হামাসের দু’টি সূত্র জানিয়েছে, প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্তরসূরি হিসাবে কোনও এক জন ব্যক্তির উপর আর ভরসা করতে চাইছেন না শীর্ষ নেতৃত্ব।
পরিবর্তে সংগঠনের দায়ভার সামলানোর জন্য দোহা-ভিত্তিক একটি শাসক কমিটি নিয়োগের কথায় ভাবছে হামাস। তবে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই নাকি হামাসের দায়িত্ব দোহার ওই শাসক কমিটির কাছে থাকবে।
সে প্রসঙ্গে হামাসের এক সূত্র সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘হামাস নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি হল, যত ক্ষণ না তাদের পরবর্তী নির্বাচন হয়, তত ক্ষণ প্রয়াত প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের উত্তরসূরি নিয়োগ না করা।’’ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী বছরের মার্চে এই নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে বলেও ওই সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, হামাসের প্রাক্তন প্রধান হানিয়া জুলাই মাসের শেষে তেহরানে খুন হওয়ার পরেই অগস্ট মাসে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয় দোহায়। সেই কমিটিই বর্তমানে গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেবে বলে সূত্রটি যোগ করেছে।
হানিয়ার পর হামাসের প্রধান হওয়া সিনওয়ারের সঙ্গে গাজ়ায় যোগাযোগের অসুবিধা হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ওই কমিটিকে।
সূত্রটি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি দু’টি প্যালেস্টাইনি অঞ্চল এবং সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। গাজ়ার প্রতিনিধি হিসাবে খলিল আল-হাইয়া, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি হিসাবে জাহের জাবারিন এবং বিদেশে থাকা প্যালেস্টাইনিদের তরফে খালেদ মেশাল ওই কমিটিতে থাকবেন বলেও সূত্রের খবর।
এতে হামাসের শুরা উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মহম্মদ দারবিশ এবং রাজনৈতিক শাখার সচিবও রয়েছেন। উল্লেখ্য, নিরাপত্তার কারণে রাজনৈতিক শাখার ওই সচিবের পরিচয় কখনওই প্রকাশ্যে আনা হয়নি। রহস্যের আড়ালে রয়ে গিয়েছেন তিনি।
সূত্রের খবর, কমিটির বর্তমান সদস্যেরা কাতারে রয়েছেন। ‘যুদ্ধের সময় এবং কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই পরিচালনা করার পাশাপাশি এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’র দায়িত্বও কমিটিকে দেওয়া হয়েছে বলেও সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, হামাসের হয়ে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে সংস্থাটিকে। অন্য দিকে হামাসের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে।
গ্রুপের আর একটি সূত্র জানিয়েছে, হামাস নেতৃত্ব তাদের রাজনৈতিক প্রধান নিয়োগের জন্য একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। তবে সেই প্রস্তাব নিয়ে নাকি খুবই সাবধানি প্যালেস্টাইনি নেতৃত্ব। কারণ হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব নাকি কিছুতেই চান না যে ওই রাজনৈতিক প্রধানের নাম প্রকাশ্যে আসুক।
উল্লেখ্য, হামাসের প্রাক্তন প্রধান সিনওয়ারের মৃত্যুর পরেই আগামী কৌশল নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্দরে।
২০১৭ সালে হামাস অধিকৃত গাজ়া ভূখণ্ডের সর্বোচ্চ শাসকও মনোনীত হয়েছিলেন সিনওয়ার। হানিয়া খুনের পর হামাসের প্রধান নেতা হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তিনি।
গত সপ্তাহে ইজ়রায়েলের সেনা হামলা চালিয়েছিল গাজ়ার একটি ভবনে। ওই ভবনে তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল। তখন থেকেই ইজ়রায়েলের দাবি ছিল, মৃতদের মধ্যে হামাস প্রধান থাকতে পারেন।
তিন জনের দেহ ইজ়রায়েলে নিয়ে আসা হয়েছিল ডিএনএ পরীক্ষার জন্য। শেষে ইজ়রায়েলের বিদেশমন্ত্রী কাট্জ় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, সেনা অভিযানে নিহত হয়েছেন সিনওয়ার। এর পরেই হামাসের পরবর্তী প্রধান কে হবেন তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় জল্পনা।