মুম্বইয়ের ঘাটকোপরে ধুলোর ঝড়ে বিলবোর্ড ভেঙে পড়ার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা অন্তত ৬০।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, যে বিলবোর্ড ভেঙে বিপত্তি, সেটি নিয়ম মেনে ওই জায়গায় লাগানো হয়নি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে সংস্থা অবৈধ বিলবোর্ডটি ঘাটকোপরের ওই জায়গায় লাগিয়েছিল, তার মালিকের নাম ভাবেশ ভিড়ে। ভাবেশ একটি হোর্ডিং সংস্থার মালিক। একটি বিজ্ঞাপন সংস্থাও রয়েছে তাঁর। বিলবোর্ড ভেঙে ১৪ জনের মৃত্যুর জন্য ভাবেশকেই দায়ী করছেন অনেকে। তাঁকে ‘মূলচক্রী’ বলেও মনে করছেন।
‘ইগো মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক একটি সংস্থার মালিক ভাবেশ। ধসে পড়া বিলবোর্ডটি ওই সংস্থার তরফেই লাগানো হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ভাবেশ পলাতক এবং তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই বছরের জানুয়ারিতে মুলুন্ড থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে নাকি মোট ২৩টি মামলা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে মুলুন্ড কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন লড়েছিলেন ভাবেশ।
অভিযোগ, ভারতীয় রেলওয়ে এবং বৃহন্মুম্বই পুরসভা থেকে বহু বছর ধরে বিলবোর্ড এবং ব্যানার বসানোর চুক্তি পেয়ে আসছেন তিনি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ হঠাৎই আকাশ কালো করে ঝড় ওঠে মুম্বইয়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু হয় ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ধুলোঝড়। এর পর শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। ঝড়ের ধাক্কায় ঘাটকোপর এলাকায় উপড়ে যায় বিজ্ঞাপনের বিশালাকার ধাতব বোর্ডটি।
ভেঙে পড়া সেই বিলবোর্ডের নীচে চাপা পড়েন অনেকেই। ঘটনাস্থলের যে সমস্ত ভিডিয়ো (যদিও সেই সব ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, বিজ্ঞাপনী বোর্ডটি ভেঙে পড়ছে একটি পেট্রল পাম্পের উপর। যার আঘাতে দুমড়ে গিয়ে নীচে নেমে আসে পেট্রল পাম্পের ছাদ। চাপা পড়ে পেট্রল পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু গাড়িও। বিলবোর্ডের ধাতব কাঠামো বহু গাড়ির ছাদ ফুঁড়ে ঢুকে যায়।
জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় পেট্রল পাম্পটিতে শ’দেড়েক গাড়ি উপস্থিত ছিল। স্থানীয়দের তরফে জানা গিয়েছে, ঝড়বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন পেট্রল পাম্পে। কেউ কেউ এসেছিলেন তেল ভরাতেও। আর সেই সময়েই ঘটে দুর্ঘটনা।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভেঙে পড়া বিলবোর্ডটির ওজন ছিল প্রায় ২৫০ টন (প্রায় আড়াই লক্ষ কেজি)।
মুম্বইয়ের জোনাল ডিসিপি পুরুষোত্তম কারাদ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় ভাবেশের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহন্মুম্বই পুরসভার তরফে ভাবেশের সংস্থাকে একটি নোটিস জারি করা হয়েছে।
১০ দিনের মধ্যে ভবেশের সংস্থার বসানো আটটি অবৈধ বিলবোর্ড সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, ২৪টি নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে সংস্থার তরফে যদি ভবিষ্যতে কোনও বিলবোর্ড বসানো হয়, তা হলে তাদের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে।
জানা গিয়েছে, পুরসভার অনুমতি ছাড়াই স্বরাষ্ট্র দফতর এবং মহারাষ্ট্র রাজ্য পুলিশ হাউজ়িং ওয়েলফেয়ার কর্পোরেশনের জমিতে ওই বিলবোর্ড বসানো হয়েছিল।
সোমবারের দুর্ঘটনার পর শহর জুড়ে অবৈধ বিলবোর্ড সরাতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। খতিয়ে দেখা হচ্ছে বিভিন্ন বিলবোর্ডের বৈধতা।
ঘাটকোপরে এখনও ভেঙে পড়া বিলবোর্ডটি সরানোর কাজ চলছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও কেউ চাপা পড়ে রয়েছেন কি না, তা দেখতে অভিযান চালাচ্ছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে নিহতদের পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মুম্বই শহরের বিলবোর্ডগুলি নিয়ম মেনে লাগানো হচ্ছে কি না, তার তদন্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
রাজ্য প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, এই বিলবোর্ডগুলি যে ধাতব কাঠামোর উপরে লাগানো হয়, সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কি না, সে দিকেও নজর দেওয়া হবে।