নব্বইয়ের দশকে একের পর এক হিট গান গেয়েছেন তাঁরা দু’জনেই। কখনও এক জনের কেরিয়ার গ্রাফ দৌড়েছে, অন্য জনের থমকে গিয়েছে। কখনও আবার উল্টো। যদিও তাঁরা ছুটেছেন সমান্তরাল ভাবে। কখনও একে অন্যের কাছাকাছি আসেননি। উল্টে একে অন্যেক দিকে আঙুলই তুলে গিয়েছেন তাঁরা। অনুরাধা পড়ওয়াল আর অলকা যাজ্ঞিক।
প্রায় একই সময় কেরিয়ার শুরু হয়েছে অলকা আর অনুরাধার। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও একই সময় শুরু হয়েছে। অলকা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর গান ছিনিয়ে নিচ্ছেন অনুরাধা। সেই নিয়ে শোরগোল হয়েছিল বিস্তর।
লতা মঙ্গেশকর তখন খ্যাতির মধ্যগগনে। সে সময় থেকে অনুরাধার লড়াই শুরু। শোনা যায়, এমন অনেক গান আগে তিনি গেয়েছিলেন যেগুলি পরে লতাকে দিয়ে গাওয়ানো হয়।
ধীরে ধীরে লতা-যুগের ইতি ঘটতে থাকে। লতা যে সকল সুরকারের গান গাইতেন, তাঁদের অনেকেরই মৃত্যু হয়। অনেকে বয়সের কারণে কাজ বন্ধ করে দেন। সেই সুযোগেই বলিউডে ধীরে ধীরে নিজের জায়গা পাকা করতে থাকেন অনুরাধা।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে হিন্দি ছবির জগতে গানের ৬০ শতাংশ বাজার ছিল টি সিরিজ়ের। অনুরাধার কেরিয়ারে সেই সংস্থার বড় ভূমিকা রয়েছে।
গুলশন কুমারের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেন অনুরাধা। চুক্তি অনুযায়ী টি সিরিজ় ছাড়া কোনও সংস্থায় গান করতে পারবেন না তিনি। আর ওই সংস্থার সমস্ত গানও অনুরাধাই গাইবেন। কোনও সুরকার অন্য কোনও গায়িকাকে দিয়ে গান গাওয়াতে চাইলে তাঁদের সংস্থা জানিয়ে দিত যে, অনুরাধাকে দিয়েই গাওয়াতে হবে।
‘দিল’ ছবির সব গান প্রথমে অলকা গেয়েছিলেন। পরে তা অনুরাধাকে দিয়ে গাওয়ানো হয়েছিল। অভিযোগ, অলকাকে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। অনুরাধাও নাকি ফোন করে কিছু জানাননি।
‘দিল’ ছবিতে মাধুরীর লিপে অনুরাধার গান হিট হয়। তাতে বাড়তি সুবিধা পেয়ে যান অনুরাধা। এর পর থেকে সুরকাররা মাধুরীর লিপে গাওয়ার জন্য সরাসরি অনুরাধার কাছেই যেতেন।
অলকাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। তিনি তখন টিপস, ভেনাস সংস্থার সঙ্গে কাজ করতেন। মাটি আঁকড়ে পড়েছিলেন তিনিও।
‘ইতিহাস’ ছবিতে আবার একই কাণ্ড। দিলীপ সেন, সুমিত সেন সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। অভিনয় করেছিলেন অজয় দেবগণ, টুইঙ্কল খন্না। ছবির সব গান প্রথমে অলকা গেয়েছিলেন। পরে তিনটি গান অলকার বদলে অনুরাধাকে দিয়ে গাওয়ানো হয়। গানগুলি হল ‘দিলকি কলম সে’, ‘ও রামজি’, ‘ইয়ে ইশক বড়া বেদরদি’।
অনুরাধা তখন ছবিতে প্লেব্যাক প্রায় ছেড়ে দিয়ে ভজনে মন দিয়েছেন। অলকা অভিযোগ করেন, এই সময়ও অনুরাধা তাঁর গান ছিনিয়ে নেন।
১৯৯৭ সালে একটি সাক্ষাৎকারে অলকা এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন। সরাসরি আঙুল তোলেন অনুরাধার দিকে। তিনি বলেন, ‘‘বার বার অনুরাধা আমার গান ছিনিয়ে নেন। ‘দিল’ ছবিতে করেছিলেন। আমায় না জানিয়েই আমার সব গান ডাব করেছিলেন। ‘ইতিহাস’ ছবিতেও করেন।’’
এখানেই থামেননি অলকা। তিনি বলেন, ‘‘বার বার একই যুক্তি দেন অনুরাধা। মাধুরীর লিপে তাঁর কণ্ঠ বেশি মানায়। এখন কি টুইঙ্কলের লিপেও ওঁর কণ্ঠ বেশি মানায়?’’
তাঁর পিছনে ছুরি মারার অভিযোগও করেন অলকা। তিনি বলেন, ‘‘উনি তো ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কেন আবার এ রকম করলেন? আর যখন করলেন, যখন আমি মুম্বইতে ছিলাম না। পিছন থেকে ছুরি মেরে আমার গান ছিনিয়ে নিয়েছেন।’’
অলকা দাবি করেন, ‘‘আমাকেও অনেক সময় বলা হয়, অনুরাধার পরিবর্তে গান গাইতে হবে। আমি কিন্তু করিনি। এই ধরনের কাজ আমি করি না।’’
সংবাদমাধ্যম এই নিয়ে অনুরাধার মন্তব্য শুনতে চায়। কিন্তু তিনি কোনও উত্তর দেননি।
‘ইতিহাস’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালক দিলীপ সেন, সুমিত সেন বলেন, ‘‘গানগুলি বিক্রি হচ্ছিল না। কেউ নিচ্ছিল না। তাই শেষ পর্যন্ত টি সিরিজ়ের কাছে যাই। গুলশন স্পষ্ট বলেন, হয় অনুরাধা, নয়তো নয়। তার পর ঠিক হয় অনুরাধা তিনটি গান গাইবেন। বাকি অলকার গানই রেখে দেওয়া হয়।’’
‘দিল হ্যায় কি মানতা নেহি’-র পর সব ছবিতে অনুরাধা গানের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা নিতে শুরু করেন। সেই টাকা দেওয়াও হত তাঁকে। এর পর ক্রমেই উত্থান হয় অনুরাধার। অভিযোগ, তিনি টি সিরিজ়ের সঙ্গে কাজ করতে আসা সঙ্গীত পরিচালকদেরও নির্দেশ দিতে শুরু করেন।
এটাই মানতে পারেননি সঙ্গীত পরিচালকেরা। ধীরে ধীরে কাজ হারাতে থাকেন অনুরাধা। এক সময় বলিউড থেকে পুরোপুরি সরে যেতে বাধ্য হন তিনি। তখন তাঁর জায়গা পাকাপাকি দখল করেন অলকা।