আল ওয়ালিদ বিন তালাল। কর্পোরেট বিশ্ব তাঁকে চেনে ‘সৌদি আরবের ওয়ারেন বাফে’ বলে। তিনি সৌদির রাজকুমার। ২০১৭ সালে তাঁকে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আটক করা হয়েছিল। তার পর থেকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থান পুনরুদ্ধারে তিনি লড়াই করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ওয়ালিদের মুক্তির কথা জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামী।
আল ওয়ালিদ এবং তাঁর পরিবারকে চেনে সারা বিশ্ব। সৌদির এই পরিবারের সম্পদের বহর দেখলে বিস্মিত হতে হবে।
১৯৩২ সাল থেকে সৌদি আরব শাসন করেছে ‘হাউস অফ সাউদ’। প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ কোটি ডলারের সম্পত্তির অধিকারী এই পরিবার সারা বিশ্বে সমাদৃত। পরিবারের সব সদস্য বিশ্বের সবচেয়ে নামীদামি ব্র্যান্ডের পোশাক এবং অলঙ্কার ব্যবহার করেন।
একটি রিপোর্টে প্রকাশ, ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি সম্পত্তি রয়েছে আল ওয়ালিদদের। আর ওই পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ওয়ালিদ নিজে। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় দু’হাজার কোটি ডলার।
নভেম্বরের গোড়ায় দুর্নীতির অভিযোগে ৩৫০ জন রাজকুমার এবং ধনকুবেরকে গ্রেফতার করে সৌদি প্রশাসন। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয় মুক্তির বিনিময়ে আল ওয়ালিদদের কাছে নেওয়া ১০ হাজার কোটি ডলার ব্যবহার করা হবে দেশের অর্থনীতি মজবুত করার কাজে।
ধনকুবের আল ওয়ালিদ কর্পোরেট দুনিয়ায় পশ্চিম এশিয়ার মুখ। টুইটার, সিটি গ্রুপের মতো বহু সংস্থার অংশীদারি রয়েছে তাঁদের। নিট সম্পদ ১,৭০০ কোটি ডলার। আমেরিকার ধনকুবের লগ্নিকারী ব্যবসায়ী বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের কর্ণধার ওয়ারেন বাফের সঙ্গে তাঁর তুলনা টানেন অনেকে।
এই সৌদি রাজকুমারের সোনায় মোড়া ব্যক্তিগত বিমান, আকাশছোঁয়া অফিস, বিলাসবহুল জীবনযাত্রা— এ সবও চর্চার কেন্দ্রে বরাবর। তিনি বন্দি হওয়ার পর অনেক বড় সংস্থার শেয়ার দর পড়ে গিয়েছিল।
সৌদি আরবের রাজপরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ ঠিক কত, তা কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তবে পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত সম্পদ দিয়ে এই পরিবার ঠিক কতটা ধনী, তার একটা আঁচ পাওয়া যায়।
সৌদি আরবের বাদশা সলমন বিন আব্দুল আজিজ এবং সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন প্রচুর সম্পত্তির মালিক।
সৌদির এই বাদশাহি পরিবার যেখানে থাকেন, সেই অট্টালিকার নাম আল ইয়ামামা। এটাই বাদশাহি পরিবারের সরকারি ঠিকানা। তবে অন্যান্য জায়গাতেও প্রাসাদোপম বাড়ি রয়েছে তাঁদের।
ধনকুবের আল ওয়ালিদের অজস্র নামীদামি সম্পত্তির মধ্যে একটি নিদর্শন ‘সুপার ইয়ট’। ৪০ কোটি ডলার মূল্যের ‘সুপার ইয়ট’টি রয়েছে মহম্মদ বিন সলমনের জিম্মায়। এই প্রমোদতরীটি তৈরি হয়েছে ইটালিতে। প্রিন্স আব্দুল আজিজ ৪৮৪ বর্গফুট মাপের দ্বিতীয় ইয়টের মালিক।
সেই প্রমোদতরীর নাম ‘দ্য সিরিন’। মাত্র ৬৪ যাত্রীর জন্য ৩২টি কক্ষ আছে এখানে। ক্রুয়ের সংখ্যা ৬৫ জন। ইয়টে রয়েছে থিয়েটার হল, সুইমিং পুল, জিম, অত্যাধুনিক সালোঁ।
আরবের বাদশাহি পরিবারের একটি বড় বিমানও রয়েছে। এটি বিশ্বের অন্যতম বড় এয়ারক্র্যাফট। বিমানের ভিতরটি এমন ভাবে সাজানো, দেখে মনে হয় যেন গোটা প্রাসাদই উড়ে চলেছে আকাশে।
এ হেন পরিবারের সদস্য আল ওয়ালিদও এক সময় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে বাবার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় অর্থ ঢালেন। নব্বইয়ের দশকে আল ওয়ালিদ ঘোষণা করেন, তিনি যা বিনিয়োগ করেছেন সেখান থেকে যথেষ্ট উপার্জন করতে পারেননি। তাই ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্থ খরচ করেন।
ব্যবসা মানে লাভ-লোকসান থাকবেই। আল ওয়ালিদও প্রচুর লোকসান করেছেন। এক সময় নিজের একটি বাড়ি বন্ধক রাখতে হয়েছিল তাঁকে।