কাতারে আয়োজিত ফুটবল বিশ্বকাপ বর্জনের ডাক দিয়েছে আল কায়দা। জঙ্গি সংগঠনটি বিশ্বের সমস্ত ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষকে এই বিশ্বকাপ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
পশ্চিম এশিয়ায় আল কায়দার ইয়েমেন শাখার তরফে মুসলমানদের উদ্দেশে কাতার বিশ্বকাপ বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপ কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনাও করেছে এই জঙ্গি সংগঠন।
কাতার বিশ্বকাপের বিরুদ্ধে কট্টর ইসলামপন্থী এই জঙ্গি সংগঠনটির মূল অভিযোগ, ইসলামের নৈতিক বিধি লঙ্ঘন করছেন কর্তৃপক্ষ। মুসলিম দেশটিতে বিশ্বকাপের সুবাদে অনেক ‘অনৈতিক, সমকামী এবং দুর্নীতিবাজ মানুষ’ অবাধে প্রবেশ করছেন বলে দাবি তাদের।
আল কায়দার অভিযোগ, বিশ্বকাপের মাধ্যমে কাতারের সংস্কৃতি, যাবতীয় ইসলামপন্থী রীতিনীতি ধ্বংস করে দিতে উদ্যত হয়েছেন এক দল মানুষ। তাঁদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছে এই জঙ্গি সংগঠন।
কাতার বিশ্বকাপের মাধ্যমে আরবীয় মালভূমিতে নাস্তিকতার অনুপ্রবেশ ঘটছে বলেও দাবি আল কায়দার। তারা জানিয়েছে, বিশ্বের সমস্ত মুসলমান দেশ এবং তাদের উপর ঘটে চলা অত্যাচার,অবিচারের দিক থেকে নজর ঘোরানোর উদ্দেশ্যেই এ বছর ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য কাতারকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
আল কায়দা তাই বিশ্ব জুড়ে তাদের সমর্থক এবং সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মুসলমানদের কাতার বিশ্বকাপ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এই নিয়ে একটি বিবৃতিও জারি করেছে আল কায়দার ইয়েমেন শাখা।
কাতার একটি আদ্যোপান্ত ইসলাম ধর্মাবলম্বী দেশ। এর আগে বিশ্বকাপের মতো এত বড় কোনও প্রতিযোগিতা এই দেশে আয়োজিত হয়নি। মানবাধিকার রক্ষা, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার সুনিশ্চিতকরণের দিক থেকে এই দেশটির রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়।
কাতারে বিশ্বকাপের আয়োজনের খবর প্রকাশ্যে আসতেই তাই আয়োজকদের সিদ্ধান্ত নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। তবে আলোচনা-সমালোচনার মুখে বিশ্বকাপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, যে কোনও ধর্ম, যে কোনও যৌন চাহিদা কিংবা যে কোনও লিঙ্গের মানুষ বিশ্বকাপ দেখতে কাতারে আসতে পারবেন। বিশ্বকাপে সকলেই স্বাগত।
পশ্চিম এশিয়ার ছোট্ট দেশ কাতার। রাজতান্ত্রিক এই দেশের জনসংখ্যা ৩০ লক্ষের কিছু বেশি। দেশে যাঁরা থাকেন, তাঁদের বেশির ভাগই বিদেশি, কর্মসূত্রে এখানে থাকতে এসেছেন।
বিশ্বকাপ আয়োজনের মাঝে কাতার সরকার ঘোষণা করেছিল, তারা বিশেষ করে বিশ্বকাপের জন্য ৫০ হাজার কর্মীকে আলাদা করে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বিশ্বকাপ দেখতে আসা ভিন্দেশি অতিথিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবেন এই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা।
ফুটবল বিশ্বকাপের সুবাদে বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা ধরনের মানুষের সমাগম হয়েছে কাতারে। আর তাতেই আপত্তি আল কায়দার। তাদের দাবি, অশ্লীলতা এবং সমকামিতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে এই বিশ্বকাপে। মুসলিম দেশ হিসাবে কাতারের পক্ষে যা সমীচীন নয়।
কাতার বিশ্বকাপকে ‘উপদ্রব’ বলে সম্বোধন করেছে আল কায়দা। বলা হয়েছে, কাতারের এই ‘উপদ্রবের’ জন্য দায়ী পশ্চিম এশিয়ার বাকি দেশগুলিও। এখানে বিশ্বকাপ আয়োজনের অনুমতি দেওয়া উচিত হয়নি।
কাতার বিশ্বকাপে ইজ়রায়েলের নাগরিকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আল কায়দার ইয়েমেন শাখা। জঙ্গি সংগঠনটির অসন্তোষের অন্যতম কারণ এলজিবিটিকিউ (সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামী) কমিউনিটি বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সংগঠন।
আরবীয় মালভূমিতে মুসলমানদের যে সংস্কৃতি, ধর্মীয় বনিয়াদ গড়ে উঠেছে, তাতে আঘাত হানতেই এই বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়েছে বলে মনে করছে আল কায়দা।
এখানেই শেষ নয়। বিশ্বকাপ ফুটবলকে আল কায়দা ‘মহম্মদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতার প্রচার’ হিসাবে বর্ণনা করেছে। আল কায়দার এই মন্তব্যের পর বিশ্বকাপে হিংসার আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না কেউ কেউ। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, বিশ্বকাপে সব রকমের নিরপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
আল কায়দার এই বিবৃতির পর বিশ্বকাপ দেখতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেকে। অনেকে টিকিট কেটেও তা বাতিল করে দিয়েছেন বলে খবর। জঙ্গি সংগঠনের রোষের আশঙ্কা করেছেন তাঁরা।
ফিফার ওয়েবসাইটে কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়া ফুটবলপ্রেমীদের জন্য কিছু উপদেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশটির সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে সম্মান করার কথা সেখানে বলা হয়েছে। মহিলাদের পোশাকবিধি নিয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মহিলাদের কাঁধ বা শরীরের নানা অংশ উন্মুক্ত থাকে, এমন পোশাক না পরাই শ্রেয় বলে জানানো হয়েছে। কারণ তা সেই দেশের সংস্কৃতির পরিপন্থী। কাতারে প্রচলিত আইন বিদেশি সমর্থকদের মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে ফিফা।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে আচমকা কাতারের রাজপরিবার ঘোষণা করে, স্টেডিয়ামে মদ নিষিদ্ধ। মদ বা মদ জাতীয় পানীয় স্টেডিয়ামে বিক্রি করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কাতারের রাজ-সরকার। হঠাৎ এই ঘোষণার পর ফিফা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বস্তুত, বিয়ার প্রস্তুতকারক একটি সংস্থা এ বারের বিশ্বকাপে ফিফার সব থেকে বড় স্পনসর। তাই মদ বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিফার ক্ষতি অনিবার্য।