দেশের প্রথম সারির মডেল থেকে আইআইএম আমদাবাদের মতো নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিএ ডিগ্রিলাভ। সেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় পেয়েছিলেন ৯৮.১২ পার্সেন্টাইল। মডেলিং নয়, এর পর বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি শুরু করেন এককালের নামী ফ্যাশন মডেল আকাঙ্ক্ষা চৌধরি।
ছোটবেলা থেকেই কি মডেলিং করার স্বপ্ন পুষে রেখেছিলেন? সংবাদমাধ্যমের কাছে আকাঙ্ক্ষা জানিয়েছেন, তাঁর মডেল হওয়াটা ছিল একেবারেই আচমকা। কপালজোরে হয়ে গিয়েছে। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফ্লুক’। কেমন ছিল সেই সফর?
গুজরাতের আমদাবাদের বাসিন্দা আকাঙ্ক্ষা পড়াশোনা করেছেন দিল্লিতে। স্নাতক স্তরে অর্থনীতি নিয়ে প়ড়াশোনার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন লেডি শ্রীরাম কলেজ অফ কমার্স (এসআরসিসি)-এ।
পড়াশোনার বাইরে অন্য অনেক কিছুতেই উৎসাহ ছিল মেধাবী ছাত্রীর। আগ্রহ ছিল মডেলিংয়েও। তবে মডেল হওয়ার কোনও স্বপ্ন লালন করেননি তিনি।
এ হেন মানসিকতা নিয়ে কেবলমাত্র ঝোঁকের বশেই যোগ দিয়েছিলেন দেশের প্রথম সারির একটি মডেলিং প্রতিযোগিতায়। সেটা ছিল ২০১৬ সাল। আকাঙ্ক্ষা তখন মোটে ১৯।
সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর কাছে আকাঙ্ক্ষা বলেন, ‘‘শুধুমাত্র আগ্রহ ছিল বলেই মডেলিং প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিলাম। মডেল হওয়ার কথা ছেড়ে দিন... প্রতিযোগিতায় যে জিতব, তা-ই কখনও ভাবিনি!’’
এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মডেলিং প্রতিযোগিতায় অডিশন দিতে গিয়েছিলেন আকাঙ্ক্ষা। সেখান থেকে সোজা ফাইনালে পৌঁছে যান। এর পর কী কাণ্ড! পেয়ে যান জয়ের স্বাদ।
কলেজে পড়ার সময় নামী মডেলিং প্রতিযোগিতা জেতার পর আকাঙ্ক্ষার সামনে এক অন্য দরজা খুলে গিয়েছিল। রিনা ঢাকা, লিজ় পল, রকি স্টারের মতো দেশের প্রথম সারির ফ্যাশন ডিজ়াইনারের হয়ে র্যাম্পে হেঁটেছেন তিনি।
অথচ ওই মডেলিং প্রতিযোগিতায় যোগদানের আগে পর্যন্ত র্যাম্পে হাঁটাও জানতেন না আকাঙ্ক্ষা। তবে জয়ের পর নামজাদা ফ্যাশন ডিজ়াইনারদের হয়ে মডেলিং করতে গিয়ে গওহর খান, কণিকা কপূর, রণদীপ হুডা বা বিদ্যুৎ জামওয়ালের মতো তারকাদের সঙ্গে একমঞ্চে উঠেছেন তিনি।
উচ্চশিক্ষায় ঝুঁকলেও মডেলিংয়ের জগৎ থেকে যে অনেক কিছুই শিক্ষণীয়, তা মনে করেন আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেন, ‘‘মডেল হওয়ায় নিজেকে ফিট রাখা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। ওই জগৎ থেকে এটাও শিখেছি যে আমাদের মূল্যবোধেই লুকিয়ে রয়েছে প্রকৃত সৌন্দর্য।’’
মডেল হিসাবে কড়া অনুশীলনের জেরে সময়ের সদ্ব্যবহার করতেও শিখেছেন বলে জানিয়েছেন আকাঙ্ক্ষা। তবে মডেলিংয়ের জগতে থিতু হননি তিনি।
মডেলিংয়ের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় মন দিয়েছিলেন। স্নাতকের ডিগ্রিলাভের আগে থেকেই বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়াশোনার প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন।
লেডি শ্রীরাম কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় কমন অ্যাডমিশন টেস্ট (ক্যাট)-এর জন্য অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন। কলেজের বার্ষিক পরীক্ষায় পঞ্চম স্থানে ছিলেন আকাঙ্ক্ষা।
কলেজে পড়ার পাশাপাশি এমবিএ-র প্রবেশিকা নিয়ে তাঁর অধ্যবসায়ের ফল পেয়েছেন। ক্যাটের ফলাফল বেরোনোর পর সুযোগ পান আইআইএম আমদাবাদের মতো প্রতিষ্ঠানে। ২০১৭ সালে সেখানে ভর্তি হন তিনি।
আইআইএম আমদাবাদের স্নাতকোত্তর স্তরে তাঁর ব্যাচের রেজাল্টে দেখা যায়, ৩৯৩ জন পড়ুয়াদের মধ্যে ৩০ নম্বরে রয়েছেন আকাঙ্ক্ষা। গোড়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি মডেলিং কেরিয়ারও সামলেছেন।
মডেলিং ইভেন্টের জন্য নানা শহরে যেতে হত আকাঙ্ক্ষাকে। সেই পেশা সামলে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার মূল মন্ত্র কী? আকাঙ্ক্ষা বলেন, ‘‘গোটা মাস জুড়ে কী কী কাজকর্ম সারতে হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখার অভ্যাস রয়েছে। মডেলিংয়ের কাজে কোথায় কোথায় যেতে হবে আর কোন দিনগুলোতে পড়াশোনা চালানো জরুরি, সে সবই আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখতাম।’’
সময়ের সদ্ব্যবহার করার ফলেই যে দু’দিক সামলে উঠতে পেরেছেন, তা মনে করেন আকাঙ্ক্ষা। এ ক্ষেত্রে দু’জগতের লোকজনই যে তাঁকে সাহায্য করেছেন, তা-ও জানিয়েছেন তিনি।
আইআইএম আমদাবাদ থেকে এমবিএ ডিগ্রিলাভের পর আমেরিকার বহুজাতিক সংস্থা ম্যাকিনসে অ্যান্ড কোম্পানিতে যোগ দিয়েছেন আকাঙ্ক্ষা। সেখানে পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করছেন তিনি। আকাঙ্ক্ষা বলেন, ‘‘সুযোগের সদ্ব্যবহার করলে কখন যে জীবন আমূল বদলে যাবে... ফলে সব সময় নতুন কিছু করে দেখা উচিত। নিজের শখের কাজকর্মকে অবহেলা করবেন না। আত্মবিশ্বাস রাখাটাও জরুরি।’’