বক্স অফিসে ইদানিং মুম্বইকে প্রায়শই টেক্কা দিচ্ছে দক্ষিণের ছবি। ‘বাহুবলী’, ‘কেজিএফ’, ‘পুষ্পা’, ‘আরআরআর’— নাগারে লক্ষ্মীলাভের রেকর্ড গড়ে চলেছে তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। যার ধারেকাছেও বহু দিন পৌঁছতে পারেনি বলিউড। কিন্তু জানেন কি দক্ষিণের এই সাফল্য বলিউড ছাড়া সম্ভব হত না!
দক্ষিণের এই ছবিগুলি সাধারণত তামিল, তেলুগু এবং মালায়লম ভাষায় মুক্তি পায়। কিন্তু শুধু ওই ভাষাতেই মুক্তি পেলে বৃহত্তর দর্শকের কাছে পৌঁছনো অসম্ভব। গোটা ভারত তো দূর অস্ত্।
সে ক্ষেত্রে ব্যবসা আসবে কী করে! সাবটাইটেল দেখে ছবি বোঝার ক্ষমতা ভারতের গ্রামীণ দর্শকদের মধ্যে প্রায় নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়েই সর্বজনগ্রাহী হিন্দি ভাষায় ডাবিং করতে হয় দক্ষিণী ছবিগুলিকে। আর ঠিক এইখানেই এন্ট্রি নেয় বলিউড।
কোটি কোটি অর্থ ব্যয় করে তৈরি ছবির যেমন তেমন ডাবিং করতে নারাজ দক্ষিণী পরিচালক প্রযোজকরা প্রায়শই তাঁদের নায়কের নেপথ্য কণ্ঠ হিসেবে বলিউড তারকাদের পেতে চান। এ ভাবেই দক্ষিণের বহু বিগ বাজেট, বক্স অফিসে ঝড় তোলা সিনেমার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গিয়েছেন বলিউডের খ্যতনামী বা তারকারা।
‘আরআরআর’-এর কথা অবশ্য আলাদা। এসএস রাজমৌলীর এই ছবি ভারতীয় সিনেমার বক্স অফিসের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ছবিটির হিন্দি সংস্করণে নায়ক রাম চরণ নিজেই নিজের কণ্ঠ দিয়েছেন। ছবির আরেক নায়ক জুনিয়র এনটিআরও নিজে ছবিটির হিন্দি সংস্করণের ডাবিং করেছেন।
কিন্তু এই রামচরণেরই একটি বিখ্যাত ছবি ‘ধ্রুব’-র হিন্দি সংস্করণে রামচরণকে কণ্ঠ দিয়েছিলেন বলিউডের এক অভিনেতা। যাঁর গলায় সিংহ গর্জন শুনতে অভ্যস্ত বলিউড।
‘সিংহম’ খ্যাত অজয় দেবগণ রামচরণের ডবিং করেছিলেন ওই ছবিতে। ঘটনাচক্রে সেই অজয়ই ‘আরআরআর’ ছবিতে রামচরণের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
তবে ‘বাহুবলী’র ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন ছিল না।
‘বাহুবলী’ সিরিজের দু’টি ছবিতেই মূল চরিত্রাভিনেতা এবং নায়ক প্রভাসের কণ্ঠ দিয়েছিলেন বলিউডের শরদ কেলকার।
শরদের কণ্ঠ প্রভাসকে এতটাই মানিয়েছিল যে, সেটি দক্ষিণী তারকার নিজস্ব কণ্ঠস্বর নয়, তা বিশ্বাসই করতে চাননি অনেকে।
২০১৬ সালে দক্ষিণী ছবি ‘ধ্রুব’তে আরও একজন বলিউড অভিনেতা কণ্ঠ দিয়েছিলেন।
ওই বলিউড অভিনেতার নাম আরবাজ খান।
ছবির নায়ক রামচরণের ভূমিকায় যেখানে অজয়ের কণ্ঠ শোনা গিয়েছিল, সেখানে আরবাজ কণ্ঠ দিয়েছিলেন ছবির খলনায়ক অরবিন্দ স্বামীকে।
বলিউডে তথাকথিত নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন না এমন অভিনেতারাও দক্ষিণী ছবির মূলচরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন।
২০০৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল রজনীকান্ত অভিনীত ‘শিবাজি দ্য বস’। ৬০ কোটি টাকার বাজেটে তৈরি ছবিটি আজ থেকে ১৫ বছর আগে ১৪৮ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল।
ছবিতে রজনীর কণ্ঠস্বর দিয়েছিলেন বলিউডের এক নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ময়ূর ব্যাস। ছবির আর এক চরিত্রাভিনেতা বিবেককে কণ্ঠ দিয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা রাজপাল যাদব।
‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ ছবিটি ৩৬৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। ছবির মূল চরিত্রাভিনেতা অল্লু অর্জুনের অভিনয় দেখেছে গোটা দেশ।
হিন্দি সংস্করণের দৌলতে আসমুদ্র হিমাচলের ছবিটি বুঝতে অসুবিধা হয়নি এতটুকু। ‘পুষ্পা’র হিন্দি সংলাপও গোটা দেশে ঝড় তুলেছিল।
তবে এই ছবিতেও অল্লুর হিন্দি কণ্ঠ একজন বলিউডের অভিনেতাই। ‘পুষ্পা’ ওরফে অল্লুকে কণ্ঠ দিয়েছেন শ্রেয়স তলপড়ে। যে ভঙ্গিতে শ্রেয়স অল্লুর অভিনয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের কণ্ঠস্বর ফুটিয়ে তুলেছেন, তার প্রশংসা হয়েছে বিভিন্ন মহলে।