বিমানবন্দরে কবরস্থান! কবরের উপরে রানওয়ে। কবর রয়েছে রানওয়ের পাশেও। প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে বিমান নামছে এই বিমানবন্দরে। কিন্তু কবরগুলি আগের মতোই অক্ষত রয়েছে। মৃতের পরিবারের সদস্যরাও মাঝেমাঝে আসেন। বিমানবন্দরের কর্মীরাই তাঁদের সেই জায়গায় নিয়ে যান। গল্পের মতো মনে হলেও পৃথিবীর বুকে এই বিমানবন্দরের অস্তিত্ব রয়েছে।
সাভান্না মিউনিসিপ্যাল এয়ারপোর্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জর্জিয়ার কাছে অবস্থিত এই বিমানবন্দরটির এলাকা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে আশপাশের জমি কেনা শুরু হয়। তখনই সমস্যার সম্মুখীন হন বিমানবন্দরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা।
জমি আওতাভুক্ত করার সময় দেখা যায়, ওই এলাকায় ১০০টি মৃতদেহ কবর দেওয়া রয়েছে। আবার বিমানবন্দরের জন্য এই জমিরও প্রয়োজন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এই ১০০টি কবরের মধ্যে ৯৬টি কবর অন্য একটি কবরখানায় স্থানান্তরিত করা হয়। জানা যায়, যুদ্ধ চলাকালীন এখানে দাসেদের মৃতদেহ পুঁতে রাখা হত।
কিন্তু বাকি কবরগুলি ওই জমিতেই থাকবে বলে জানান মৃতের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা জানান, এই জমিতে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা চাষবাস করেছেন। নিজের হাতে দেখাশোনা করেছেন এই জমির। এর সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি জড়িয়ে। তাই মৃত্যুর পরেও তাঁদের এখান থেকে আলাদা করা ঠিক হবে না।
এই সিদ্ধান্তে রাজিও হয়ে যান আধিকারিকেরা। জমির উপর বানানো হয় বিমানবন্দরের বাড়তি অংশ। জমির প্রাক্তন মালিক রিচার্ড ও ক্যাথরিন ডটসনের কবরের উপর ১০ নম্বর রানওয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু কবর দু’টির কোনও ক্ষতি করা হয়নি।
প্রথমে যে বিমানবন্দরটি সেনাবাহিনীর জন্য ব্যবহার করা হত, তা পরবর্তীতে সাধারণ জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এমনকি, বিমানবন্দরটির নাম বদলে হয় সাভান্না হিলটন হেড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
তবে, রিচার্ড ও ক্যাথরিনের কবরের কাছে গেলে এখনও কবরের উপর খোদাই করা লেখা স্পষ্ট পড়া যায়। সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, রিচার্ডের কবরের উপর লেখা ‘অ্যাট রেস্ট’ এবং ক্যাথরিনের কবরের উপরে ‘গন হোম টু রেস্ট’ লেখা রয়েছে।
এমনকি, ডটসন পরিবারের দুই নিকট আত্মীয় ড্যানিয়েল হিউস্টন ও জন ডটসনের কবরও রয়েছে ওই বিমানবন্দরে। তবে, কোনও রানওয়ের উপর নয়, কবর দু’টি রয়েছে রানওয়ের পাশে ঘাস-ভর্তি মাঠে।
তবে, বিশ্বের ‘ভুতুড়ে বিমানবন্দরগুলির’ তালিকায় হিলটন হেড বিমানবন্দরের নাম উল্লেখযোগ্য।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে লিজা রুডি বলে এক বিমানসেবিকা জানান, সূর্যাস্ত হওয়ার পর তিনি যখন রানওয়েতে বিমান অবতরণ করেন, তখন রানওয়ের উত্তর দিকে দু’টি অবয়বকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তিনি।
এমনকি, বিমানবন্দরের কর্মীদের অনেকাংশের দাবি, এই অবয়ব দু’টি ডটসন দম্পতি রিচার্ড ও ক্যাথরিনের।