সুচিত্রা সেনের একনিষ্ঠ ভক্ত ঐন্দ্রিলা শর্মাকে কি রাজেশ খন্নার ‘আনন্দ’-ও অনুপ্রাণিত করেছিল? সেই ‘আনন্দ’ যিনি বলেছিলেন, ‘‘বাবুমশাই, জিন্দেগি বড়ি হোনি চাহিয়ে, লম্বি নেহি’’!
গত ৫ বছর টলিউডে তিনি যে ভাবে, আর যে হারে কাজ করেছেন তাতে বলা যেতেই পারে, বার বার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও ঐন্দ্রিলা জীবনের দৈর্ঘ্য মাপতে বসেননি কোনও দিন, বরং কাজ দিয়ে জীবনটাকে বড় করতে চেয়েছিলেন।
টলিউডে ঠিক ৫ বছরের কেরিয়ার ঐন্দ্রিলার। ফিল্ম জগতে কাজ করতে এসে ৫ বছর স্ট্রাগল করেই কেটে যায় বহু অভিনেতা। সেখানে ঐন্দ্রিলা তাঁর পাঁচ বছরে অভিনয় জীবনে কাজ করেছেন অন্তত চারটি ধারাবাহিক, একটি সিনেমা, এমনকি একটি ওয়েব সিরিজেও।
প্রথম ব্রেক পেয়েছিলেন ঝুমুর ধারাবাহিকে। ২০১৭ সালে। কালার্স বাংলার ঝুমুর ধারাবাহিক হঠাৎ বেশ কয়েক বছর এগিয়ে নিয়ে যায়। মূল চরিত্রে থাকা কিশোরী ঝুমুর বড় হয়ে যায়। ঐন্দ্রিলা সেই চরিত্রেই অভিনয়ের সুযোগ পান।
তখন ঐন্দ্রিলার বয়স ১৯। সবে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ইতিমধ্যে ক্যানসারকেও জয় করেছেন। অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার জন্য তত দিনে টলিউডে অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছেন ঐন্দ্রিলা। এক বছরের মধ্যে সুযোগও পেয়ে যান।
শোনা যায়, ঐন্দ্রিলার বায়োডাটাও ছিল সুযোগ পাওয়ার মতোই। নাচ, আবৃত্তিতে চৌখস, মডেলিং করার অভিজ্ঞতা ছিল, এমনকি, কয়েকটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাও তত দিনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকের জন্য তখন নতুন মুখ খোঁজা হচ্ছিল ঐন্দ্রিলা সুযোগ পেয়ে যান।
‘ঝুমুর’-এ ঐন্দ্রিলার চরিত্রটি ছিল এক অবস্থাপন্ন পরিবারের পরিচারিকার কন্যার। তিনিই নায়িকা। তাঁর বিপরীতে ওই ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন সব্যসাচী চৌধুরী।
ঝুমুর-এ চোখে পড়েন ঐন্দ্রিলা। আর ঝুমুর শেষ হতে না হতেই পরের ধারাবাহিকেও কাজ শুরু করে দেন তিনি। সেটা ২০১৮ সাল। স্টার জলসায় নতুন ধারাবাহিক ‘জীবন জ্যোতি’তে কাজ শুরু করেন বহরমপুর থেকে ঠিক দু’বছর আগে কলকাতায় আসা ঐন্দ্রিলা।
২০১৮ সালের ১৯ মার্চ থেকে শুরু হয় জীবন জ্যোতি ধারাবাহিক। ছবিতে মার্শাল আর্ট জানা এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। গ্রামের মেয়ে, লাঠি খেলায় পারদর্শী, এক অদম্য সাহসী মেয়ের চরিত্র। যে গ্রামেরই এক ধনী ব্যবসায়ীর ছেলের দেহরক্ষীর কাজ করে।
এই ধারাবাহিকেও নায়িকা ঐন্দ্রিলাই। তাঁর বিপরীতে ছিলেন অভিনেতা রবি শ, জয় মুখোপাধ্যায়, সুভদ্রা, মিশমি দাশ, রিজু বিশ্বাসের মতো অভিনেতা অভিনেত্রী।
২০১৯ সালে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ‘জীবন জ্যোতি’ ধারাবাহিকটি। তবে ঐন্দ্রিলা থেমে থাকেননি। এ বার তাঁকে ডাকা হয় সাধক বামাক্ষ্যাপার জীবন নিয়ে তৈরি জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এ। ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে ঐ ধারাবাহিকে দেবীর চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন ঐন্দ্রিলা। উল্লেখ্য, ওই ধারাবাহিক বামাক্ষ্যাপার চরিত্রাভিনেতা ছিলেন সব্যসাচীই।
ঐন্দ্রিলার বন্ধুরা জানিয়েছিলেন, ওই ধারাবাহিকে অভিনয় করা নিয়ে উৎসাহিত ছিলেন ঐন্দ্রিলা। ঘনিষ্ঠদের বলেছিলেন, ‘‘এই প্রথম দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করব, দারুণ লাগছে।’’
২০১৯-এই আরও একটি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান ঐন্দ্রিলা। এ বারও মূল চরিত্র। ‘সান বাংলা’য় সম্প্রচারিত ‘জিয়নকাঠি’ ধারাবাহিকে এক আইএএস অফিসারের চরিত্রে দেখা যায় ঐন্দ্রিলাকে।
এই ছবিতে ঐন্দ্রিলার বিপরীতে ছিলেন জয় মুখোপাধ্যায়। ছিলেন সোমরাজ মাইতিও। এ ছাড়াও ভরত কল, জয়শ্রী মুখোপাধ্যায়, মিশমি দাস, দেবোত্তম মজুমদার, রাজশ্রী ভৌমিক, ত্রমিলা ভট্টাচার্যের মতো অভিনেতারাও ছিলেন ওই ধারাবাহিকে।
‘জিয়নকাঠি’ চলেছিল ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত। তার ঠিক দু’মাস আগেই ঐন্দ্রিলা ক্যান্সার আক্রান্ত হন। কিন্তু সেরে উঠে আবার অভিনয় শুরু করেন।
২০২২ সালের জুলাই মাসে মুক্তি পায় জি বাংলা অরিজিনালসে ঐন্দ্রিলা এবং অনির্বাণ চক্রবর্তী অভিনীত ছবি ‘ভোলে বাবা পার করেগা’। ছবিতে অনির্বাণের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল ঐন্দ্রিলাকে।
ঠিক এক মাসের মধ্যে মুক্তি পায় ঐন্দ্রিলার ওয়েব সিরিজর। ক্লিক টিভিতে ‘ভাগাড়’ নামে একটি ওয়েব সিরিজে কাজ করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। ২০১৮ সালের রাজ্যে আচমকাই ‘ভাগাড়ের মাংস’ নিয়ে আতঙ্কের উপর আধারিত এই সিরিজ। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সব্যসাচী। ছিলেন রজতাভ দত্ত, পূজা সরকার, অম্লান মজুমদার এবং গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্ব চরিত্রে ঐন্দ্রিলাও।
অক্টোবরে অসুস্থ না হলে আরও একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের জন্য গোয়াতে শুটিং করতে যাওয়ার কথা ছিল অভিনেত্রীর। অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেই কাজ আর শুরু করতে পারেননি ঐন্দ্রিলা।
এক সাক্ষাৎকারে ঐন্দ্রিলা বলেছিলেন, তাঁর প্রিয় ছবি ‘সপ্তপদী’ আর ‘থ্রি ইডিয়টস’। আমির খান অভিনীত ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ একটি সংলাপ ছিল। যেখানে আমিরের চরিত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কাবিল বনো, কামইয়াবি ঝক মারকে পিছে আয়েগি।’’ বড় অভিনেত্রীর স্বপ্ন দেখা অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলাও সম্ভবত তাঁর সমস্ত প্রতিকূলতা পেরিয়ে ‘কাবিল’ অর্থাৎ যোগ্য হতে চেয়েছিলেন। যাতে তাঁর অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন ‘কামিয়াব’ অর্থাৎ সফল হয়।