২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। মেক্সিকোয় ভাড়া নেওয়া একটি ফ্ল্যাট। ভোরবেলা বাথরুম থেকে উদ্ধার হয় আগোস্তিনা জালাবার্টের দেহ। আর্জেন্টিনার মডেল তিনি। বয়স ৩১ বছর। বাথরুমের ‘টাওয়েল র্যাক’ থেকে আগোস্তিনার দেহ ঝুলছিল। সারা দেহে কাটা দাগ। হাত দুটো বাঁধা।
মডেলিং নিয়ে কেরিয়ার করবেন বলে মেক্সিকোয় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতে শুরু করেন আগোস্তিনা। মাঝেমধ্যেই তাঁর বোন ক্যান্ডেলা সেখানে দেখা করতে যেতেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলাতেও বোনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি।
ফ্ল্যাটে ঢোকার মুখে নিরাপত্তারক্ষী ক্যান্ডেলাকে জানান যে, আগের দিন রাতে আগোস্তিনার ঘর থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পান তাঁর প্রতিবেশীরা। নিরাপত্তারক্ষীর মুখে এমন কথা শোনায় ছুটে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে পৌঁছন ক্যান্ডেলা।
আগোস্তিনার ফ্ল্যাটের দরজা খোলার জন্য যে কোডের প্রয়োজন হয়, তা বার বার দিয়ে যাচ্ছিলেন ক্যান্ডেলা। কিন্তু দরজা খুলছিল না কোনও ভাবেই। ভয় পেয়ে বোনের নাম ধরে দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিতে শুরু করেন ক্যান্ডেলা।
হঠাৎ আগোস্তিনার ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে ভেসে আসে একটি পুরুষকণ্ঠ। আগোস্তিনার সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকতেন তাঁর প্রেমিক জুয়ান রিভার্টার। ক্যান্ডেলা তাঁকে সেই সূত্রেই চিনতেন।।
আগোস্তিনা ঘুমোচ্ছেন, এখন দেখা করতে পারবেন না তা সরাসরি ক্যান্ডেলাকে জানিয়ে দেন জুয়ান। ক্যান্ডেলা ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁর নজর পড়ে আগোস্তিনার পোষা কুকুরের উপর।
ক্যান্ডেলাকে দেখে কুকুরটি সোজা বাথরুমের ভিতর পৌঁছে যায়। ক্যান্ডেলাও তাকে অনুসরণ করতে থাকে। বাথরুমের ভিতর গিয়ে বোনের মৃতদেহ দেখতে পান তিনি। ঘরের ভিতর এসে দেখেন, জুয়ান উধাও।
আগোস্তিনার পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাঁদের কন্যা আত্মহত্যা করতে পারে না। জুয়ান খুন করেছে আগোস্তিনাকে। ক্যান্ডেলা জানান, জুয়ানের মুখেও কাটা দাগ লক্ষ করেছিলেন তিনি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরে আগোস্তিনা এবং জুয়ান সম্পর্কে ছিলেন। তাঁরা একত্রবাসও করতেন। কিন্তু ২০২১ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
আগোস্তিনার বাবা এডগার্ডোর দাবি, আগোস্তিনার সঙ্গে জুয়ানের বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি আগোস্তিনাকে নতুন ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। কিন্তু ২০২১ সালের শেষে বড়দিন উপলক্ষে জুয়ান দেখা করেন আগোস্তিনার সঙ্গে।
পুরনো ঝামেলা মিটিয়ে আবার নতুন করে সম্পর্ক শুরু করেন আগোস্তিনা এবং জুয়ান। আবার একত্রবাস করতে শুরু করেছিলেন দু’জনে।
আগোস্তিনার পরিবারের দাবি, জুয়ান কখনওই নিজের সম্পর্কে কিছু বলেননি। জুয়ানের বাবা মেক্সিকোয় থাকতেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মেক্সিকো থেকে আবার নাকি নেদারল্যান্ডসে চলে গিয়েছেন জুয়ানের বাবা, এমনটাই আগোস্তিনার মারফত জেনেছিলেন তাঁর পরিবার।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, আগোস্তিনা আত্মহত্যা করেননি। তাঁকে খুন করা হয়েছে জানান আগোস্তিনার পরিবারের আইনজীবী।
জুয়ানকে যেন তাড়াতাড়ি খুঁজে বার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়, সেই দাবি জানিয়েছে আগোস্তিনার পরিবার। জুয়ানকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি, কেন তাঁর ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছে আগোস্তিনার পরিবার। কিন্তু মডেলের রহস্যমৃত্যুর জট এখনও পর্যন্ত খোলেনি।