তিনি আইনত মা, তবে স্নেহে, কর্তব্য, দায়িত্বপালনে গর্ভধারিনী মাকেও টেক্কা দিতে পারেন।
তাঁর সন্তানের মৃত্যু হয়েছিল বিয়ে হওয়ার ছ’মাসের মাথায়। পুত্রশোকাতুর মা এই পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়তে পারতেন। দুঃখের প্রকাশ করতে পারতেন সদয বিধবা পুত্রবধূর উপর রাগ দেখিয়ে। যেমন অনেকেই করে থাকেন কিন্তু তা করেননি।
বিয়ের ছ’মাসের মাথায় স্বামী মারা গেলে ভারতীয় সমাজে সদ্য বিধবার কপালে নানা ‘দুঃখ’ লেখা থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি।
২০১৬ সালের মে মাসে রাজস্থানের শিকরের কমলাদেবীর কনিষ্ঠ পুত্র শুভমের সঙ্গে বিয়ে হয় সুনীতার। বিয়ের পরই স্বামী এমবিবিএস পড়তে চলে যান কিরঘিজস্তানে। ওই বছরই নভেম্বর মাসে ব্রেনস্ট্রোকে হয়ে মৃত্যু হয় শুভমের।
সুনীতা তখন রাজস্থানে, শ্বশুরবাড়িতে। তাঁর সঙ্গী এবং অভিভাবক বলতে শাশুড়ি কমলা দেবীই। সদ্য বিধবা তরুণীকে ভাল রাখার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন কমলা।
সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা কমলা। পুত্রশোক সামলে পুত্রবধূর ভাল মন্দে মন দেন। সুনীতাকে তাঁর পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে বলেন।
শাশুড়ির উৎসাহেই সুনীতা তাঁর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন। পরে পুত্রবধূকে বিএড পড়ার জন্যও উৎসাহিত করেন কমলা। স্বামীকে হারানোর চার বছরের মধ্যে শিক্ষিকার চাকরিও পেয়ে যান সুনীতা। রাজস্থানেরই একটি স্কুলে তিনি ইতিহাসের শিক্ষিকা।
পড়শিরা বলেন, সুনীতাকে প্রথম দিন থেকেই ঘরের লক্ষ্মী বলে ডাকতেন তাঁর শাশুড়ি। ছেলের থেকেও বেশি ভালবাসতেন বউমাকে। তবে মুখে বলা এবং কাজে করে দেখানোর মধ্যে এক কথা নয়। সহজও নয়। কমলা সেই কঠিন কাজ করে দেখিয়েছেন।
কমলা পাঁচ বছর তাঁর ‘গৃহলক্ষ্মী’র খেয়াল রেখেছেন। আত্মজার মতো তাঁর যত্ন আত্তি করেছেন। তার পর তাঁকে বাড়ি থেকে ‘বিদাই’ ও করেছেন রীতি মেনে। মেয়েকে লালন-পালন করার পর বাবা-মা যেমন করে থাকেন।
কমলা সম্প্রতিই পুত্রবধূর বিয়ে দিয়েছেন। ভোপালের পাত্র। পেশায় কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের হিসাবরক্ষক। নাম মুকেশ।
স্বাবলম্বী সুনীতার জন্য পাত্র চয়ন করেছেন কমলা নিজেই। সাজিয়ে গুছিয়ে আত্মীয়-স্বজনকে ডেকে বিয়েও দিয়েছেন। শ্বশুরবাড়িতেই বসেছে সুনীতার বিয়ের আসর। কন্যাদান করেছেন শাশুড়ি কমলা।
কাণ্ড দেখে অবাক কমলার পরিচিতরা। শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়েছে অনেকেরই। তাঁদের বক্তব্য বউমাকে লক্ষ্মী বলে ঘরে সব শাশুড়িই আনেন। কিন্তু সেই বলার দায় নেন ক’জন! কমলা তাঁর লক্ষ্মীকে শুধু ঘরে বসাননি, তাঁকে স্বাবলম্বী করে প্রাণে ধরে বিদায়ও জানিয়েছেন।
ভারতীয় সিনেমা, মেগা ধারাবাহিকে পারিবারিক নাটকে খলনায়িকা হয়ে ওঠেন শাশুড়িরাই। সেই ধারার উল্টোপথে হেঁটে কমলা-সুনীতার কাহিনি হয়তো পর্দায় ঠাঁই পাবে না।
তবে এই অন্যরকম মা-মেয়ের গল্প যাঁরা চোখের সামনে দেখলেন বা জানলেন, তাঁরা ভুলবেনও না।